পর্ব ১০

Màu nền
Font chữ
Font size
Chiều cao dòng

#অপরিণত_নিকাহনামা
লেখনীতে, #AbiarMaria

#১০

আসিফকে ক্লাসে প্রবেশ করতে দেখে ওর বন্ধু মহলের ছেলেরা হৈহৈ করে ওঠে।আসিফ এসে সবার সাথে হাত মিলিয়ে নিজস্ব স্টাইলে কাঁধ মেলায়।এসময় মুন্না ওর হাতের আংটি দেখে বলে,
"ঐ তোর হাতে কি রে?"
আসিফ ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে চোখ ঘুরিয়ে বলে,
"মাম্মা!বাপে তো এনগেজমেন্ট করায় দিসে!"
সবাই একসাথে "ও ও ও ও ও" করে চিৎকার করে ওঠে।আশেপাশের অন্যান্য ছেলে মেয়েরা ওদের দিকে ঘুরে ঘুরে তাকায়।কয়েকজন,বিশেষ করে মেয়েরা আগ্রহ নিয়ে আসিফের কাছে আসে।কয়েকজন আংটির দিকে এমনভাবে তাকায় যেনো জীবনে কোনো ছেলেকে স্বর্ণের আংটি পরিহিত অবস্থায় দেখেনি।অবশ্য এরকম আচরণের কারণটা স্বর্ণের আংটি নয়,বরং কোনো কলেজ পড়ুয়া ছেলেকে তারা কখনো আংটি পরে এনগেজমেন্ট এর ঘোষণা দিতে দেখেনি।মেয়েরা আংটি আর প্রিয়ন্তির ছবি নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও ছেলেরা সবাই হৈহৈ করতে শুরু করে ওর গল্প শোনার জন্য। সবাইকে যখন আসিফ সবেমাত্র বলতে শুরু করেছে,তখন দেখতে পায় ধ্রুবকে।

আসিফের মতো ধ্রুবও ফর্সা তবে ওর থেকে দুই ইঞ্চি ছোট।সামনের চুলে একমাস আগে রঙ দিয়েছিল।ওদের ক্যামেস্ট্রি স্যার ধরে সবার সামনে চুল কেটে দিয়েছিল।খুব ঝামেলার পর ধ্রুব কলেজে চুল ট্রিম করে বাস্কেটবল ক্যাপ পরে আসত।এখন আবার চুল গুলো সামনে থেকে বেশ বেড়ে উঠেছে,আর সেটা দেখানোর জন্য সে প্রতিদিন জেল মেখে চুল গুলোকে দাঁড় করিয়ে রাখে।আজও এর ব্যতিক্রম হয়নি।কাঁধের একপাশে ব্যাগ ঝুলিয়ে ধ্রুব দুই পাশের দুই বন্ধুর সাথে আসিফ মুচকি হাসে।ধ্রুবকে এই আংটি না দেখালে দিনটাই বৃথা হয়ে যাবে।সে সুন্দর করে ধ্রুবর দিকে এগিয়ে যায়।ধ্রুব মাত্র তার নির্দিষ্ট করে রাখা বেঞ্চের টেবিলে ব্যাগ রেখে এক পা মাটিতে রেখে টেবিলে বসেছে।ধ্রুবর কাছে আসিফ গিয়ে বলে,
"দোস্ত,দেখ!"
ধ্রুব বিরক্ত হয়ে বলে,
"কি দেখব?"
"এই যে দেখ দেখ,আমার হাতে আংটি।গতকাল প্রিয়ন্তির সাথে এনগেজমেন্ট হয়ে গেল!সুন্দর না আংটিটা?"

ধ্রুব চোয়াল শক্ত করে রেখেছে।এর মাঝে যে ওর রাগ মাথায় চড়ে বসেছে সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।আসিফ আগুনে আরেকটু ঘি ঢাললো,
"বুঝলি,প্রিয়ন্তির বাবা আমাকে দেখেই পছন্দ করে ফেলেছে।উনাদের সবার মতে,প্রিয়ন্তির সাথে আমার চাইতে বেস্ট ম্যাচ আর হতেই পারে না! শেষ পর্যন্ত আমিই ওকে পেলাম।কেন জানিস? Cause I'm a winner,not loser!"

আসিফ নিজের বেঞ্চে চলে আসে।ওর বন্ধুরা ওকে সবাই খুব প্যাম্পার করছে।আসিফ হেসে হেসে সবাইকে ঘটনা বলছে।পেছনে বসে ধ্রুব চিবিয়ে চিবিয়ে নিচু কন্ঠে বলে,
"আংটি পরিয়ে এত তেজ ভাই?তোর তেজ কতো আমিও দেখব!"

কলেজের ক্লাস শেষ হয়েছে কি না ভেবে প্রিয়ন্তি বারবার নিজের ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে।নিজের কাছে ফোন থাকলেও আসিফের কাছে ফোন আছে কিনা সে নিয়ে ও সন্দিহান।কল দিলে যদি ক্লাসের মাঝে বেজে ওঠে?যদিও আসিফের ফোন বেশিরভাগ সময় ভাইব্রেশন মুডে থাকে।প্রিয়ন্তি কলেজের উল্টো দিকের রাস্তার পাশের গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়। হাতে কতগুলো গোলাপের ছোট্ট একটা বুকে।অপেক্ষা করতে আজ খারাপ লাগছে না।এই প্রথম বোধহয় প্রিয়ন্তি অপেক্ষা করে আনন্দ পাচ্ছে।

পেছন থেকে কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে প্রিয়ন্তি ঘুরে তাকায়।একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে আসিফদের কলেজের ইউনিফর্ম পরা।প্রিয়ন্তি হাসিমুখে বলে,
"জ্বী আপু?"
"তুমিই কি প্রিয়ন্তি?"
"জ্বী"
"আসিফের বাগদত্তা?"
প্রিয়ন্তি লাজুক মুখে চোখ নিচু করে হাসে।এই পরিচয়ে নিজেকে পরিচিত করতে অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছে।তবে সামনের মেয়েটার মনে হয় না কোনো আসে যাচ্ছে এতে।ওর সাথে আরো একটা মেয়ে এসে দাঁড়িয়েছে।এরা এমনভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছে কেন?প্রিয়ন্তির এখন আর আগের মতো খুশি খুশি লাগছে,বরং এদের মুখের ভাব দেখে ওর ভয় লাগেছে।

আসিফ যখন কলেজ থেকে বের হলো,তখন দরজার ডান দিকে প্রিয়ন্তিকে দেখে।এ সময় প্রিয়ন্তি এখানে?আসিফ খুশি হয়ে ওর দিকে এগিয়ে আসে।
"তুমি স্কুলে যাওনি আজ?"
প্রিয়ন্তি চোখ লাল করে ওর দিকে তাকায়।
"কুত্তা,তুই আমার আগে কয়টা প্রেম করছিস?"
আসিফ থমকে পেছন দিকে তাকায়।ওখানে কয়েকজনের জটলা দেখা যাচ্ছে।তার মাঝে ওর পুরাতন সম্পর্কগুলো আছে।আসিফ কঠিন কন্ঠে বলে,
"তোমাকে কে কি বলেছে বলো!"
"তোকে আমি কি বলব? তুই আমাকে বলিস নাই জীবনেও যে তুই প্রেম করছিস!আমার সামনে সাধু সাজছিস সবসময়! তুই একটা কুত্তা!তুই একটা..."
আসিফ ওর হাত ধরে বলে,
"প্রিয়ন্তি,এখানে সবাই আছে।তাছাড়া তুমি আমার ফিয়ন্সি!এরকম তুইতুকারি করবা না!"
"করব একশবার!তুই আমার হাত ধরবি না বলে দিলাম!এই যে,তোর জন্য ফুল এনেছিলাম।তোর ফুল তুই খা!"
আসিফের মুখে ফুল গুলো ছিঁড়ে ছুঁড়ে ফেলে প্রিয়ন্তি এক দৌড়ে কাছেই থাকা রিকশাতে উঠে যায়।আসিফ ওকে থামানোর সাহস করে না কারণ এখন থামাতে গেলে প্রিয়ন্তি আরও তামাশা করবে।আসিফের শার্টের এখানে ওখানে গোলাপের পাঁপড়ি লেগে আছে,আর পায়ের কাছে গোলাপগুলো।আসিফ নিচু হয়ে সেগুলো তুলে নেয়।তারপর রাস্তার ওপাশে দাঁড়ানো ধ্রুবকে দেখে। এই কাজটা নিশ্চিত ধ্রুবর!আসিফ সাত পাঁচ না ভেবেই এক দৌড়ে ধ্রুবর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ওর নাকে ঘুশি মারে।এরপর এলোপাতাড়ি মারতে শুরু করে। ধ্রুবও সাথে সাথে নিজেকে ডিফেন্ড করার সাথে সাথে আসিফকে মারতে শুরু করে।ধ্রুবর বন্ধুরা আসিফকে আটকে ফেলার চেষ্টা করে আর আসিফও এতে বিশেষ সুবিধা করতে পারে না। মোবারক সহ আসিফের বন্ধুরা দৌড়ে আসে।দুপক্ষ অনেক কষ্টে মারামারি থেকে ওদের দুজনকে আলাদা করে।আসিফ হাত পা ছুঁড়তে ছুঁড়তে চিৎকার করে,
"তুই আমার বউয়ের দিকে হাত দিছিস!আরেকবার তুই এমন কিছু করে দেখ,স্রেফ মেরে ফেলব আমি তোকে!"

আসিফের মুখ খানা রক্তবর্ণ ধারণ করেছে।আর ধ্রুব কাপড় ঝাড়তে ঝাড়তে বলে,
"আমার পছন্দের মেয়েকে তুই বিয়ে করবি,আর আমি দেখব?আমি জীবনেও তোদেরকে সুখী হতে দিব না দেখিস!"

আসিফকে ওর বন্ধুরা নিয়ে আসে বেশ দূরে।সব শোনার পর ওদেরও মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।ধ্রুবকে মারার জন্য ওদের সবার হাত নিশপিশ করছে।কিন্তু তার চেয়েও জরুরী বিষয় প্রিয়ন্তিকে সামলানো।এই মেয়ে এখন কি করছে ভেবেই আসিফের মাথা উল্টো পাল্টা হয়ে যাচ্ছে।এখন তো ওদের পরিবারও এর মাঝে আছে। যদি ওদের বাবা মায়ের কাছে এইসব খবর চলে যায়?আসিফ নিজের চুল টেনে ধরে।ইশ,সব শেষ!

এদিকে প্রিয়ন্তি নাক মুছতে মুছতে বাসায় ঢুকেই নিজের ঘরের দিকে দৌড় দেয়।বিছানায় শুয়ে বাংলা সিনেমার নায়িকাদের মতো হু হু করে কেঁদে ওঠে।এই বিরহ ও সহ্য করতে পারছে না।আসিফ এত বড় চিট!ও বুঝতেও পারে নি?!বালিশ মুখে চেপে মেয়েটা উ উ উ করে কাঁদছে।ওপাশে ওর মা এসে শঙ্কিত হয়ে কান্নার কারণ জানতেই বলে প্রিয়ন্তি,
"আম্মু!আসিফ আমার আগেও আরও মেয়ের সাথে প্রেম করত!আম্মু,আমার সাথে এটা কি হলো আম্মু????!!!!!"

চলবে...

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen2U.Pro