পর্ব ১৩

Màu nền
Font chữ
Font size
Chiều cao dòng

#অপরিণত_নিকাহনামা
লেখনীতে, #AbiarMaria

#১৩

আসিফ সন্ধ্যার নাস্তা সামনে নিয়ে বসে আছে।একটু আগে ওর মা এসে ওকে পাউরুটি ভেজে দিয়ে গেছে।টেবিলে রাখা পাউরুটি থেকে ধোঁয়া উঠছে।আসিফ এক টুকরো ধরে মুখে নেয়ার প্রায় সাথে সাথে ফোন বেজে উঠল।দ্রুত ফোনটা নিয়ে ও বারান্দায় চলে যায়।নিচু গলায় মুখের উপর হাত দিয়ে আস্তে আস্তে বলে,
"হ্যাঁ, বলো।কি খবর?!"
"আপনার তো ভাইয়া খুশিতে ডিগবাজি দেয়া দরকার!"
"তা নাহয় দিলাম।কিন্তু খবরটা জানাবে তো?"
"ভাইয়া,আজকে তো ধ্রুবকে একেবারে ডিম গোসল দিয়েছি আমরা সবাই মিলে!"
"এ্যাঁ!বলছ কি?!"
"সত্যি ভাইয়া।প্রিয়ন্তিকে আপনার নামে আজেবাজে বলছিল।প্রিয়ন্তি সহ্য করতে না পেরে ইচ্ছেমতো ধোলাই দেয়ালো!হি হি হি!"
আসিফ বেশ রুষ্ট কন্ঠে বলল,
"শায়লা,কাজটা তোমরা ঠিক করোনি।তোমরা কি জানো ধ্রুবর হাত কত লম্বা?ও এখন তোমাদের কি করতে পারে,কোনো ধারণা আছে?"
"কি বলেন ভাইয়া?"
"ধ্রুবর দুই ভাইয়ের অনেক পাওয়ার।এই এলাকার সব মাস্তানদের কিনে নেয়ার ক্ষমতা আছে ওদের।সেখানে তোমাদের চারজনের কি করতে পারে ও বুঝতে পারছ?ওর দৌড় কদ্দুর?ও যদি তোমাদের পিছে লাগে,তাহলে তোমাদের কি হবে ভাবতেও পারবে না! প্রিয়ন্তির দেখা করতে রাজী হওয়াটা শুনেই আমার বোঝা উচিত ছিল।শিট!"

আসিফ ভুলেই যাচ্ছে ওর বারান্দার পাশেই ওর বাবার ঘরের জানালা,আর তাই কন্ঠও উঁচু হয়ে গেছে। পায়চারি করছে আর চুল টানছে।
"আচ্ছা শায়লা,তোমাদের এই ডিমের প্ল্যানিং কখন হলো?"
"দুপুরে স্কুলে থাকতেই"
"তাহলে আমাকে আগে বলো নি কেন?"
ওপাশে শায়লা চুপ।
"এরকম চুপ করে থেকেই সর্বনাশটা করেছ সবাই মিলে।তোমাদের জন্য তো আমার এখন মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে,বিশেষ করে প্রিয়ন্তির জন্য। আল্লাহ জানে ধ্রুব এখন মাথায় কি প্ল্যান সেট করছে!"
শায়লা কিছুটা চুপ থেকে বলে,
"তবে গুড নিউজ আছে আরেকটা ভাইয়া"
"কি?"
"প্রিয়ন্তি শেষে ধ্রুবকে শাসাচ্ছিল,ওর সংসারে যেন সে কখনোই আর নজর না দেয়।প্রিয়ন্তি আসলে আপনার ব্যাপারে অনেক সিরিয়াস। যতই ঝগড়া হোক,ও আপনাকে হয়ত ছাড়বে না।খুব ভালোবাসে ও আপনাকে"

আসিফের মনে হলো, দখিনা বাতাস ওর সমস্ত শরীর ঠান্ডা করে দিয়েছে।একটু আগের টেনশনে কিছুটা ভাটা পড়েছে।নিঃশব্দে তাই সে চুপ করে হাসছে।গত দুদিন ধরে যেই ভয়ে ছিল,সেটা কেটে গেছে।মেয়েটা ওকে ভালোবাসে,আর তাই তার অভিমান রাগের পাল্লাটাও ভারী।আসিফ শায়লাকে নিজের খুশির ব্যাপারটা বলে না।হাজার হোক,মেয়ে মানুষ একজন আরেকজনকে সব বলে দিতে সময় নিবে না।তাই আবার কন্ঠে গাম্ভীর্যতা এনে বলে,
"বুঝলাম।তবে তোমরা সাবধানে থাকবা।কাল স্কুলে আসা যাওয়ার সময় পরিচিত কাউকে নিয়ে যাবা।ধ্রুবকে নিয়ে কোনো বিশ্বাস নেই।আর প্রিয়ন্তিকে কিছু বলার দরকার নেই।ওকে আমিই নিয়ে আসব,নিয়ে যাব"

সকালে আগে আগে উঠে আসিফ রান্নাঘরে চলে আসে।ওর মায়ের রান্না এখনো কিছু বাকি।ছেলেকে এত।দ্রুত উঠতে দেখে বলে,
"এত সকালে?!তোর ক্লাস এত সকালে আজকে?"
"না আম্মু,প্রিয়ন্তিকে স্কুলে দিয়ে আসব"
"কেন?"
"ওকে কয়েকটা ছেলে ডিস্টার্ব করে"
"কি বলিস!ওর আব্বু আম্মু জানে?তোর আব্বুকে বলছিস?"
"তোমরা জেনে কি করবা?টেনশন ছাড়া আর কিছু পারবা?যা করার আমিই করতেছি।তোমরা খবরদার এগুলো কাউকে বলবা না।এখন আমি আছি এইসব দেখার জন্য"
আসিফ ঘুরে বাইরে যাওয়ার জন্য রওনা দিতেই ওর মা বলে,
"নাস্তা করে যা!একটু পর বের হ,পাঁচ মিনিট!"
"আমার দেরী হয়ে যাবে।আমি হোটেলে খেয়ে নিব!"
ছেলের চলে যাওয়া দেখে রাফিদা গজগজ করতে থাকেন।মেয়েকে বলেন,
"ছেলেটা খেয়ে বের হতে পারত না?আজকে আগে আগে যাবে এটা আমাকে রাতে বললেই তো হইত!আমি আরেকটু আগে ভাজি বসাইতাম।এই ছেলে এখন বাইরে যাইয়া কি কি খাবে আল্লাহ জানে! হোটেলের খাবার দাবার খেয়ে খেয়ে স্বাস্থ্যের ১২টা বাজাইতেছে।এই বাসায় কি রান্না হয় না?না! ঘরের খাবার তো ভাল্লাগে না।পোলাপান কথা বললে কথা শুনে না।এখন বাইরে গিয়ে কি খাবে শুনি?!হোটেলের খাবার কি ভালো??"

আসিফ তাড়াহুড়ো করে অটো থেকে প্রিয়ন্তিদের বাসার সামনে নামে।প্রিয়ন্তি কখন বের হবে জানে না,তবে সেটা কিছুক্ষণের মাঝেই হওয়ার কথা।আসিফ রাত থেকে চেষ্টা করেছে,এখনো প্রিয়ন্তির নাম্বার বন্ধ।যদি ওর সাথে যেতে না চায়?যদি ঝগড়া শুরু করে সকাল সকাল?আসিফ একটা রিক্সা ঠিক করে অপেক্ষা করতে থাকে।ওদিকে পেটে ক্ষুধা লেগে গেছে।বাসা থেকে অন্তত একটা কলা খেয়ে আসা উচিত ছিল।এখন আর এসব ভেবে কি হবে? উল্টো দিকের দোকান থেকে একটা পাউরুটি কিনে খেতে শুরু করে। কিছুক্ষণের মাঝে দেখে প্রিয়ন্তি হেলতে দুলতে বাসার গেট থেকে বের হচ্ছে।আসিফ দ্রুত পাউরুটির শেষ টুকরো মুখে পুরো প্রিয়ন্তির দিকে দৌড় দেয়।

প্রিয়ন্তি আসিফকে দেখেনি।হুট করে ভূতের মতো সামনে দেখে বেশ চমকে যায়।যদিও ভেবেছিল আসিফ সামনে আসলেও কথা বলবে না,তবুও মুখ থেকে বের হয়ে যায়,
"তুমি এখানে কি করছ?!"
"তোমাকে স্কুলে দিয়ে আসব"
"দরকার নেই।আমি একাই যেতে পারব," প্রিয়ন্তি মুখ ঘুরিয়ে উত্তর দেয়।আসিফ কাঠ কাঠ গলায় বলে,
"তোমার দুটো লম্বা লম্বা ঠ্যাঙ আছে।সেগুলোর ব্যবহার করে তুমি যে স্কুলে যেতে পারবা,সেটা আমি জানি।কিন্তু আমি তোমাকে একা যেতে দিব না।এখন থেকে তুমি আমার সাথে স্কুলে আসা যাওয়া করবা"
"না,করব না"
"দেখ প্রিয়ন্তি,রাস্তাঘাটে সিনক্রিয়েট করবা না।সবাই জানে তুমি আমার হবু বউ।আর এখন আমি তোমার হবু স্বামী,নট বয়ফ্রেন্ড। তোমাকে আমি অর্ডার দিচ্ছি,আমার সাথে রিকশায় ওঠো।কোনো কাহিনী চলবে না।ওঠো!"

প্রিয়ন্তি রাগ দেখিয়ে রিকশায় উঠে বসে।আসিফ প্রিয়ন্তির পাশে বসে রিকশা ওয়ালাকে ইশারা করে চালু করার জন্য। প্রিয়ন্তি অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে যেন আসিফ ওর চেহারা ন দেখতে পায়।আসিফ অবশ্য আড়চোখে প্রিয়ন্তির হাবভাব খেয়াল করছে,মুখে কিছু বলছে। ভেতরে ভেতরে ও উশখুশ করছে।প্রিয়ন্তিকে কিছু কথা না বললে হবে না।তানাহলে পরবর্তীতে ভেজাল করে বসে থাকবে। দশ মিনিটের মতো অপেক্ষা করে আসিফ বলল,

"কাল যে ঘটনা ঘটালে,এর কনসিকোয়েন্স কি হতে পারে কোনো আইডিয়া আছে?"
প্রিয়ন্তি নিশ্চুপ।
"তুমি একটা বাচ্চা মেয়ে হয়ে এত দুঃসাহস কিভাবে পাও? ধ্রুব এখন কি করতে চাচ্ছে জানো কিছু?"
"এসব জেনে আমার কাজ নেই!"
"তা থাকবে কেন?খালি তো জানো পাকনামী করতে!পই পই করে বলেছি ধ্রুবর ধারেকাছেও না যেতে।ছেলেটা একেবারে সুবিধার না,ব্যাকগ্রাউন্ড ভালো না।আমরা ছেলেরা পর্যন্ত এদের এড়িয়ে চলি।আর তুমি মেয়ে হয়ে কিনা ওকে এটাক করে বসছ?!"
প্রিয়ন্তি রেগে মেগে বলে,
"তোমার স্বভাব তো মেয়েদের মতো!এজন্য এসবে যাও না,এদের মুখোমুখি হও না।আজকে চুড়ি কিনে দিব,সেগুলো পরে বসে থাকবা এখন থেকে!"
"একটা থাপ্পড় দিব প্রিয়ন্তি!"
"দাও দাও!থাপ্পড় দাও! মেয়েদের গায়েই তো হাত তুলতে পারবা,ছেলেদের কিছু করতে পারবা না! আরেকটা কাজ খুব ভালো পারবা,অন্য মেয়েদের সাথে প্রেম!"
পাশে বসা আসিফ অনেক কষ্টে নিজেকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়।
"দেখো প্রিয়ন্তি,ওগুলো তোমার সাথে পরিচয়ের আগের কথা ছিল।আমি ডাবল স্ট্যান্ডার্ড ম্যান্টেইন করি না।প্রথম মেয়েটা ভালো হলে দ্বিতীয় জন আসত না,দ্বিতীয় জন ভালো হলে তুমিও আসতা না। ওদের সমস্যা ছিল,আমি ওদের কাছ থেকে সরে এসছি।কেউ এখন পর্যন্ত বলেছে যে আমি ওদের সাথে আজেবাজে কিছু করেছি?বলতে পারবে না! এগুলো সব ধ্রুবর চাল।যেই শুনেছে আমরা এনগেজড, সাথে সাথে ওদের পাঠিয়েছে তোমার কাছে... "
"জানি জানি। আর বলতে হবে না,"
প্রিয়ন্তি আসিফকে থামিয়ে দেয়।আসিফ মুখ শক্ত করে বলে,
"এত যখন জানো সব,তাহলে তিন দিন ধরে আমাকে কষ্ট দিচ্ছিলে কেন?নাটক সব,না?নাটক?!"

প্রিয়ন্তি ওপাশে মুখ ঘুরিয়ে মুখ টিপে হাসছে।আসিফকে কোনোভাবেই এই হাসি দেখানো যাবে না। আসিফ আবার বলতে শুরু করে,
"ধ্রুবকে এখন সামলাতে হবে। তা নাহলে কি করবে আল্লাহ জানে।তুমি এখন থেকে একা একা স্কুলে আসা যাওয়া করবা না,আমি এসে নিয়ে যাব,নিয়ে আসব।আমার নিয়মের ব্যাঘাত যেন ঘটে। আজকাল এসব ছেলেদের নিয়ে কোনো বিশ্বাস নেই।তুমি ডিম মেরেছ,তোমাকে যে আজ এসিড মারবে না,তার কোনো গ্যারান্টি আছে? আজকাল পত্রিকা খুললেই এসিডের সংবাদ! আমার ঘুমই হারাম করে দিয়েছ!
স্পষ্ট করে বলে রাখলাম প্রিয়ন্তি,আর কখনো কোনো ফালতু ছেলের উত্তর দিবে না,কথা বাড়াবে না।আমাকে বলবে, আমি ব্যবস্থা নিব।আর কখনো যেন এরকম পাকনামি করতে না দেখি!"

প্রিয়ন্তি আসিফের অলক্ষ্যে ওকে ভেংচি কাটে।ইশ,একেবারে এই কয়দিনেই জামাই জামাই ভাব নেয়া শুরু করেছে! ও বললেই সব আমি ওকে বলব নাকি?নিজেই তো নাটের গুরু,আবার আমার ঘাড়ে সব দোষ চাপাচ্ছে,হুহ!

আসিফ চুপচাপ বসে থাকে।কিছুক্ষণ পর প্রিয়ন্তি বলে,
"তোমার আমাকে নিয়ে এত চিন্তা করা লাগবে না বুঝলে।আমি নিজেই নিজের খেয়াল রাখতে পারি। আমার বুকের পাটা এত ছোট ভাবার দরকার নেই!"
"বেশি কথা বলবা না প্রিয়ন্তি।যদি আমার কথা না শুনো, তাহলে কিন্তু আমি আংকেল আন্টিকে বলে দিব যে উনাদের মেয়ে রাস্তাঘাটের উগ্র ছেলেদের সাথে শুধু শুধু ঝামেলা করে বেড়াচ্ছে!তারপর আমার কথাও শুনছে না! তখন তুমি বুঝবে কত ধানে কত চাল"
"কচু বুঝব আমি!আসছে আমার কাছে জামাইগিরি দেখাতে!"

কথাটা বলেই প্রিয়ন্তি লাফিয়ে রিকশা থেকে নেমে যায়।আসিফ কিছু বলতে গিয়েও বলে না কারণ হুট করে খেয়াল হয় ওরা প্রিয়ন্তির স্কুলের সামনে চলে এসেছে।আসিফ হাতের ঘড়ির দিকে তাকায়।এখন রিকশা নিয়ে কলেজে গেলে দেরী হয়ে যাবে।বাসে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই যদিও এখন বাসে বেশ ভীড় হবে।কি একটা ভেবে ও রিকশার টাকা দিয়ে টেম্পুর দিকে রওনা দেয়।এগুলো দিয়ে দ্রুত কলেজে যাওয়া যাবে।যেতে যেতে ভাবে, ভাগ্যিস প্রিয়ন্তিদের ক্লাস তুলনা মূলক বেশি হওয়ার ওর আগে শুরু হবে পরে শেষ হয়।তানাহলে প্রিয়ন্তিকে আনা নেওয়া করতে পারত না। মনে মনে আরো একটা প্ল্যান করে, ধ্রুবর সাথে কি করে ঝামেলা মিটমাট করা যায়।

আসিফ কি আর জানে যে ধ্রুব ও প্ল্যান করে বসে আছে?

চলবে...

**আগে লিখা ছিল কিছুটা তাই এই পর্ব দিলাম।এর পরের পর্ব কবে দিব জানি না।আপাতত লেখালেখি থেকে দূরে থাকব।দুয়া করবেন যেন দ্রুত ফিরতে পারি**

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen2U.Pro