পর্ব ২৭

Màu nền
Font chữ
Font size
Chiều cao dòng

#অপরিণত_নিকাহনামা
লেখা #AbiarMaria

#২৭

আসিফের ভেতরকার ভয়ের প্রভাব ও নিজের চেহারায় পড়তে দিল না। ও জানেনা ওর বাবা মা ভবিষ্যতে সত্যিই কি বাগদান ভেঙে দেবে কিনা, কিন্তু এটুকু বুঝতে পারছে, ওদের ভালোবাসার পথটা এখনও বন্ধুরই রয়ে গেছে। যতই আংটি পড়িয়ে বিয়ের ব্যাপার পাকা করা হোক, আসলে আগের মতোই ভঙ্গুর রয়ে গেছে। আসিফ ঠান্ডা মাথা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। মাথা নাড়িয়ে বলে,
"দেখো, এত চিন্তা করতে হবে না তোমার। আমাদের মাঝে যত তুলনাই হোক না কেন, আমি জানি তোমার কোনো রিপ্লেসমেন্ট নেই। তোমার বদলে আর কারও সাথে আমার বিয়ে শাদী সম্ভব না। তাছাড়া তুমি আর আমি কি কোনো পণ্য নাকি যে আমাদের কেনা বেচার সময় মাপামাপি করবে? কার কোয়ালিটি কম, কার বেশি, এসব তো এরেঞ্জ ম্যারেজে করে! আমাদের ক্ষেত্রে বললেই হবে নাকি এসব? আর আমি অফিসার হচ্ছি কি এসব ফালতু কথা সহ্য করার জন্য?  আমাকে তোমার ব্যাপারে এসব কেউ বললেই আমি পিছাবো কেন?"

প্রিয়ন্তি চুপ করে আছে।আসি আবারও বলতে শুরু করে,
"আর কে বলল তুমি আমার বউ না? আমি তো তোমাকে কবেই মনে মনে বিয়ে করে ফেলেছি!"
প্রিয়ন্তি আসিফের মুখের দিকে তাকিয়ে কেঁদে ফেলল। আসিফ ওর হাত ধরে বিছানায় গাল ঠেকিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলো। ইচ্ছে করছে প্রিয়ন্তিকে সব ভালোবাসা উজাড় করে দিয়ে বলে, কেঁদো না,আমি আছি, আমি থাকব!

আসিফ ওর দুহাত নিজের দুহাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,
"শোনো, তোমাকে অনেক শক্ত হতে হবে। একজন আর্মির স্ত্রীও একজন আর্মি। একজন ফাইটারের ওয়াইফও একজন ফাইটার। তোমার আমার প্রেম ভালোবাসা আর ব্যক্তিগত জীবনের আগে আসবে আমাদের দেশের স্বার্থ। অনেক সেক্রিফাইসই করতে হবে। তবে এসবের আগে তোমাকে নিজেকে নিয়ে ভাবতে হবে। তোমার ফোকাস নিজের দিক থেকে সরে যাচ্ছে!"
"মানে?!"
"মানে হচ্ছে গত বছর আমাদের বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকে তোমার সব চিন্তা আমাকে নিয়ে। আমার কি হলো, আমি কি খাচ্ছি, আমি করছি, আমার পরীক্ষা কেমন হচ্ছে, আমার চাকরি হলো কিনা, এস্ন নিয়ে শুধু ভাবো। অথচ এদিকে তুমি যে মেরিট পজিশন থেকে সরে গেছ, সেখবর যেন তোমার নেইই! সারাক্ষণ আমাদের বিয়ে হলো না কেন, পেছালো কেন, কবে হবে, এসব নিয়ে ভাবছ। আয়নাতে নিজেকে দেখ! তোমার কি এখন এসব ভাবার বয়স? তোমার বয়সী মেয়েরা ডিবেট ক্লাবে দৌড়ুচ্ছে, পরীক্ষাতে টপ করছে, মেট্রিকের আগেই ঢাকা ইউনিভার্সিটিকে টার্গেট করছে! আর তুমি? কেন তোমার পড়ালেখার মান কমেছে? কারণ তুমি নিজেকে নিয়েই ভাবো না! প্রিয়ু, বিশ্বাস করো, তোমার নিজের জীবনটা শুধুই তোমার। তোমাকে তোমার একটা পরিচয় দাঁড় করাতে হবে। পড়ালেখা করবে, নিজের জীবন নিয়ে ভাববে। আমি থাকব দেশ নিয়ে, আর তুমি কি নিয়ে থাকবে? নিজের দিকে ফোকাস আনো। সব রেজাল্ট ভালো হবে। বরং তখন তোমার আমার চেয়ে অবস্থান এত উঁচুতে উঠবে যে তুমি টেনশনে পড়ে যাবা এই ভেবে, আমি আসিফ তোমার যোগ্য কিনা!"

প্রিয়ন্তি কেঁদে ফেলেছে। আসিফের দিকে ফিরে বলল,
"আমি কি পারব এসব?!"
"পারবে! অবশ্যই পারবে! বাঙালী মেয়েরা ভাবে বিয়ে মানেই সব শেষ! বিয়ে হলো, তো এখন পড়াশোনা, ক্যারিয়ার, সব বাতিল। আসলে কি তাই? কক্ষনো না। তুমিও যদি এমন করে নিজেকে ডুবিয়ে দাও, তাহলে আজীবন আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভুগবে। কারণ আমার সমান অফিসারের স্ত্রীরা দেখবে অনেক অনেক কোয়ালিফাইড। তারা শুধু তাদের স্বামীর পরিচয়ের হাম্বড়া ভাব দেখায় না। তখন তোমার নিজেকে খারাপ লাগবে। তাই নিজের পড়ালেখার দিকে মনোযোগ দাও। এখনো সময় আছে। সামনে অনেক সময় পড়ে আছে। এসএসসির জন্য প্রস্তুতি নাও, সব ঠিক হয়ে যাবে!"

আসিফ জানে না প্রিয়ন্তি কতটুকু বুঝেছে, কিন্তু ও প্রিয়ন্তিকে সর্বাবস্থায় বোঝাতে চেষ্টা করবে। তানাহলে প্রিয়ন্তি নিজের সাথে সাথে আসিফেরও চাকরিতে বিঘ্ন ঘটাবে।

সময় আর স্রোত কোনো কিছুই অপেক্ষা করে না। আসিফ আর প্রিয়ন্তির সময়ও অপেক্ষা করেনি। তাই তো দেখতে দেখতে আসিফের বিএমআই ট্রেনিং এ যাওয়ার দিন চলে আসলো। আসিফ প্রিয়ন্তিদের বসার ঘরে অপেক্ষা করছে। ওর বাবা মা কথা বলে গেছে, আর প্রিয়ন্তি আসবে আসবে করছে। অবন্তি আর শ্রাবন্তি পর্দার ফাঁক দিয়ে একটু পর পর উঁকি দিচ্ছে।আসিফ অস্থির হয়ে বসে বসে পা ঝাঁকাচ্ছে। পিচ্চি দুটোকে দেখে ডাক দিতেই ওর কাঠবিড়ালির মত কোথায় যেন পালিয়ে গেল! আসিফ তা দেখে হেসে ফেলতেই পর্দা ঠেলে প্রিয়ন্তির আগমন। প্রিয়ন্তিকে দেখে আসিফ উঠে দাঁড়াল।  আসিফকে প্যান্ট শার্ট ইন করে টাই পরে আর্মি কাটিং চুলে নিঃসন্দেহে হ্যান্ডসামই লাগছে। কিন্তু এত কিছু প্রিয়ন্তির সহ্য হচ্ছে না। ওর লাল চোখই বলছে মেয়েটা কত কষ্ট করে কান্না মুছে এখানে এসেছে। আসিফ প্রিয়ন্তিকে দেখে ঠোঁটের কোণে অনেক কষ্টে এক ফালি হাসি টেনে এনেছে, কিন্তু বুকের ভেতর কষ্টগুলো একেবারে দম আটকে দিচ্ছে যেন। প্রিয়ন্তির কি যে হলো, আর পারলো না, একেবারে আসিফকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করল। শুরুতে কিছু না বললেও আসিফে দ্রুত ওকে সরিয়ে দিল।
"এভাবে কেঁদো না, কেউ কি ভাববে এভাবে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে দেখলে?"
"তুমিই তো কিছু মনে না করার যায়গাটা রাখলে না!"
"আবারও একই কথা? আমার জন্য অপেক্ষা করো। আমি তো আসবই কিছু দিন পর পর"
প্রিয়ন্তি আসহায়ের মত বলল, "কতদিন পর পর?"
"এইতো, কয়েক মাস। তুমি ততদিন নিজের পরীক্ষা, পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকবে"
"আর রাতভর কার সাথে কথা বলব?"
আসিফ ব্যাগ থেকে একটা ডায়রি বের করে ওর হাতে দিল, "এখানে সব লিখে রাখবে। আমার সাথে যত কথা, সব লিখবে। আমি প্রতিবার এসে নিয়ে যাবো"

প্রিয়ন্তি সজল নয়নে আসিফের যাওয়ার পথে চেয়ে রইল। আসিফ ধীরে প্রিয়ন্তির বাসা থেকে বেরিয়ে আসলো। সবার সাথে ওর বিদায় নেয়া শেষ। এখন শুধু বাসায় গিয়ে ওর ব্যাগপত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়বে।

আসিফ বেরিয়ে যেতেই অবন্তি এসে প্রিয়ন্তির কাছে ওর ফোন দিয়ে যায়। ফোনের নাম দেখে প্রিয়ন্তি থমকে তাকিয়ে আছে। ফোনে আর কেউ না, বিশালের নাম উঠে আছে!

প্রিয়ন্তি সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না কল রিসিভ করবে কিনা। ওদিকে এই নিয়ে তৃতীয় বারের মত বিশাল কল দিচ্ছে। ছেলেটা খারাপ কথা বলে না। কিন্তু তার চাহনীটা যেন কেমন কেমন। প্রিয়ন্তির অস্বস্তি লাগে। তবে তার কাজে কখনো এসব প্রকাশ পায় না। ওদিকে ফোন রিসিভ না করলে বিশাল বাসায় এসে হাজির হবে। প্রিয়ন্তির মাও বিশালকে ভালো ছেলে বলেই জানে। প্রিয়ন্তি কি করে বুঝাবে যে, এই ছেলেকে দেখলে আসিফ রেগে যায়?অপছন্দ করে? আচ্ছা, ও যে এনগেইজড, সেটা কি বিশাল জানে না? আজ দুপুরেই ওর ফোনে মেসেজ এসেছে বিকালে ছাদে যেতে। প্রিয়ন্তি সিদ্ধান্ত নেয় ছাদে যাবে। তবে ছাদে গিয়ে অবশ্যই বিশালকে জানাবে যে, সে এখন একজনের বাগদত্তা।

চলবে...

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen2U.Pro