Magical Moments

Màu nền
Font chữ
Font size
Chiều cao dòng

"তোমার জন্য আমার ভালোবাসাটা কেমন জানো? বিন্দু বিন্দু শিশিরের ফোঁটা জমিয়ে এক সমুদ্র জলের মতো, যে সমুদ্র তৈরি হয়েছে আমার মনের মাঝে আমার অগোচরেই"

এইটুকু পড়ে মানতাসা থামলো। ডায়রিটা কি পড়বে? নাকি পড়বে না? দোটানায় ভুগতে ভুগতে আবার পড়তে শুরু করলো।

"প্রথম তোমায় যেদিন হিজল গাছের নিচে দেখেছিলাম, সেদিন অদ্ভুত এক পাতার মরমর ধ্বনি কানে এসেছিল, বুকের ভেতর এমন কিছুর অস্তিত্ব পেয়েছিলাম, যার অস্তিত্ব আগে ছিল না। তোমার বিনুনির ভাঁজে ভাঁজে আমার মনটাও আটকে গেল। আমি সেসব কিছুই কানে তুলি নি, চলে এসেছি।

দ্বিতীয় বার তোমাকে দেখেছিলাম ব্যস্ত সড়কে ঘামে ভেজা কপাল কুঁচকে রাখতে। নেকাব, হিজাবের ফাঁকে তোমার ছোট্ট কপাল আর চোখ জোড়ায় তপ্ত রোদের মাঝেও আষাঢ়ের ঘন ঘোর বর্ষনের মতো আমায় মোহগ্রস্ত করে দিল। কয়েক মুহূর্ত, এরপর তুমি হারিয়ে গেলে ভীড় আর শব্দের কোলাহলে। সেদিনও নিজের অনুভূতি নিয়ে ভেবে দেখেনি। দিনের পর দিন এমনি করে তুমি নিয়ে এসেছ ষড়ঋতুর সব রঙ। বড্ড ভালোবাসি তোমায়, জানো?"

মানতাসা ঠিক বুঝতে পারছে না আসলে এই মেয়েটা কে? রূপমের জীবনে কে এসেছিল? লেখায় কোনো তারিখ দেয়া নেই। ডায়রিটা পুরাতন, এতেও সন্দেহ নেই। মানতাসার মন খারাপ হয়ে গেল। বিয়ে করে এই বাসায় এসেছে মোটে দুই সপ্তাহ হতে চলেছে। রূপমকে খুব ভালো করে চেনাও হয়নি। কি করে চিনবে? মানুষ বছরের পর বছর এক বিছানায় থেকেও তো একে অপরকে চিনতে পারে না। ডায়রিটা সে তুলে রেখে দিল আলমারির উপরের তাকে। আজ অবসরে কি করবে ভাবতে ভাবতে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আলমারি গোছাবে। গোছাতে গিয়েই তার কাল হলো। সদ্য বিবাহিত জীবনে সন্দেহের বীজ যেন বপন হলো।

সারাদিন এ ঘর থেকে ও ঘরে শুয়ে থেকে থেকে সময় কেটেছে। তিন রুমের বিশাল বাসায় থাকার মতো ওরা কেবল দুটি প্রাণী। একলা ঘরে ওর দম আটকে আটকে আসছে, মাঝে মাঝে চোখ থেকে অঝোরে অশ্রুও ঝরছে। লোকটা কাকে এতো ভালোবাসলো? তাকে বিয়ে কেন করলো না? বিকেলের দিকে হুট করে মনে হলো, মন খারাপের তোড়ে ডায়রির বাকিটুকু তো দেখা হলো না। ওতে কি কিছু লিখা আছে?

রাতে রূপম এসে দেখলো, ডাইনিং এ সকালের এঁটো বাসন কোসন পড়ে আছে৷ ডাইনিং বাদে বাকি সব ঘরের আলো নেভানো। রূপম সাবধানে নিজের ঘরের দরজা খুললো। মানতাসা বিছানায় এলোমেলোভাবে শুয়ে আছে। সকালে সে দেখে গিয়েছিল, মেয়েটার পরনে থ্রিপিস। এখন সে একটা হালকা গোলাপি রঙের শাড়ি জড়িয়ে আছে। এক পাশে কাত হয়ে থাকায় ওর আঁচল কিছুটা সরে গিয়ে কোমরের ভাঁজ উন্মুক্ত করে দিয়েছে। ভাঁজ করা পায়ের গোড়ালির কিছু উপরে শাড়ি উঠে আছে। লম্বা দীঘল চুলের গোছা পুরো বিছানায় খোলাভাবে ছড়িয়ে আছে।

সামনের ঘর থেকে ছিটকে আসা আলোয় মানতাসাকে দেখে রূপমের নিঃশ্বাস বন্ধ হতে চায়। সে বুঝতে পারছে, ধীরে ধীরে তার নিঃশ্বাস ভারী আর তপ্ত হয়ে উঠছে। ক্লান্ত দেহেও এড্রেনালের ছোটাছুটি ভীষণ ভাবে অনুভব করতে পারছে। নিঃশব্দে কাঁধের ব্যাগটা রেখে বিছানার দিকে এগিয়ে এলো। মানতাসার মুখের উপর দুই হাতে ভর করে কিছুটা ঝুকলো। উজ্জ্বল শ্যামলা সদা চঞ্চল মেয়েটিকে আবছা আলোয় রূপকথার রূপালী কাঠির ছোঁয়ায় ঘুমিয়ে থাকা রাজকন্যা মনে হচ্ছে।

মানতাসার মুখের উপর পড়ে থাকা এক গাছি চুল সরালো রূপম। এরপর ধীরে ধীরে মুখ খানা নামিয়ে আনলো ওর গ্রীবায়।

এমন অন্তরঙ্গ স্পর্শে মানতাসার ঘুম ভেঙে গেল। অবাকের অতিসহ্যে বুঝতে না পেরে স্বামীকে দেখে চিৎকার দিয়ে উঠলো। তবে তার আগেই রূপম ওর ঠোঁট জোড়া এক হাতে চেপে ধরেছে।

আধো আলো, আধো আঁধারে চার চোখের দৃষ্টি আটকে আছে, যারা একে অপরকে নিজে নিজে সম্মোহিত করে ফেলেছে।

রূপমের মনে হলো, অনন্তকাল পরে মানতাসা নড়ে উঠে হাতখানা মুখের উপর থেকে সরিয়ে দিল। আলতোভাবে রূপমকে সরিয়ে প্রশ্ন করলো,
"কখন এলে?"

রূপম পাশে বসে বললো, "মনে নেই। মনে হচ্ছে, অনন্তকাল ধরে এখানেই আটকে ছিলাম"
"তুমি খুব কাব্যিক কথা বলো"
"ভালো লাগে না?"

মানতাসা জবাব দিল না। উঠে গিয়ে ঘরের আলো জ্বালিয়ে দিল। কিয়ৎ ক্ষণ আগে জমে থাকা রূপকথার আবেশ মুহূর্তে মুছে গেল। মানতাসা হাত খোপা করতে করতে বলল,
"ফ্রেশ হয়ে আসো, টেবিলে খাবার দিচ্ছি"

রূপম পেছন থেকে স্ত্রীকে চেয়ে চেয়ে দেখছে। ছিমছাম গড়নের দেহের ভাঁজে ভাঁজে নেশা লুকিয়ে আছে। শাড়ির কারণে মেয়েটা ভীষণ আবেদময়ী লাগছে। কি অদ্ভুত সৌন্দর্য ফুটিয়ে সে কিছু সময় আগেও বিছানায় পড়ে ছিল। কি দরকার ছিল কাছে এসে রাজকন্যাকে জাগিয়ে দেয়ার? মেয়েটা শাড়িই বা পরলো কার জন্য? ওর জন্যই কি? একটা শিহরণ খেলে গেল রূপমের সমস্ত শরীর জুড়ে।

রাতের খাবার টেবিল কিছুক্ষণের মাঝেই গরম ভাত, ইলিশ ভাজা, মুরগীর ঝাল রোস্ট আর এক বাটি ডালে সেজে উঠলো। রূপম অফিসের কাপড় ছেড়ে ঘরের কাপড় পরে টেবিলে এসে বসলো। নতুন বউয়ের হাতের রান্না তার প্রতিদিনই ভালো লাগে। সামান্য কিছু খাবারে যেন সে অমৃত মিশিয়ে দেয়। এটা কি প্রেম? নাকি নতুন বিয়ের আবেগ?

মানতাসা অন্যান্য দিনের মত আজ কথা বলছে না। চুপ করে আছে। রূপম কয়েকবার বোঝার চেষ্টা করেছে মেয়েটার ভাবভঙ্গি। মন খারাপ নাকি? কোনো কিছু হয়েছে? অন্যান্য দিন তো কথায় কথায় অস্থির করে ফেলে। কয়েক দিন হলো ঘরের মানুষ গুলো নিজেদের কাজে একেকজন একেক দিকে চলে গেছে। কিছু দিন পর আবার কেউ না কেউ চলে আসবে। তবে আপাতত কিছুদিনের জন্য নবদম্পতি পুরো বাসাটা নিজেদের মত করে পেয়েছে।

মানতাসার মুখে কথা না থাকলেও কথা বলার জন্য ওর অস্থির লাগছে। অপেক্ষা করতে করতে নিজেই মুখ খোলার সিদ্ধান্ত নিল। যা বুঝতে পারছে, এখনই কথাগুলো না বললে ভাত গুলো চাল হয়ে খাদ্যনালীতে আটকে থাকবে। রূপমের মুখের দিকে সরাসরি চেয়ে বলল,
"তুমি বিয়ের আগে থেকে আমার প্রেমে পড়েছ, এ কথা বলো নি কেন?"

রূপমের ভাত চিবানো বন্ধ হয়ে গেছে। স্ত্রীর দিকে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রইলো সে। এতে মানতাসা আরও বিরক্ত হয়ে বলল,
"এত্ত অভিনয় জানো তুমি জানতাম না! তুমি প্ল্যান করে আমাকে এভাবে বিয়ে করেছ। আবার বিয়ের পর এমন ভাব ধরে আছো, যেন আমাকে নতুন চিনছো। কেন? আগের কথা স্বীকার করলে কি আমি রাগ করতাম? এটা তো খুশির খবর! কেউ আমাকে পছন্দ করে বিয়ের জন্য পাগল পাগল হয়ে ঘুরেছে। আমি হয়ত আরো আগে সহজ হতে পারতাম। শুধু শুধু নাটক করার দরকার ছিল?"

"আমি কিন্তু কখনও বলিনি যে তোমাকে বিয়ের আগে চিনতাম না"
"চিনতে, সে কথাও তো বলোনি! মুখে কিছু কিছু বলতে পারো না, শুধু ডায়রিতে লিখে রাখো। কষ্ট লাগে বলতে?"

রূপম হেসে ফেলল। আসলে সে মানতাসাকে বলতে চেয়েছিল বিয়ের কয়েক বছর আগে থেকে ওর প্রেমে পড়ার ব্যাপারটা। ওর বেশ ক'টা বিয়েও সে ভেঙে দিয়েছে। মেয়েটা যদি রেগে যায়? এই ভয়ে বলেনি। তারপর ভাবলো, ডায়রিতে লিখে আলমারিতে রেখে দিবে। মানতাসা কখনো যদি ডায়রি পায়, তখন চমকে যাবে। ওর প্ল্যান সফল হয়েছে।

রাতে রূপম বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। বিশাল এল সাইজের বারান্দার এক পাশ থেকে স্বচ্ছ আকাশ চোখে পড়ে দিনের সবটা সময়। এখানে দাঁড়িয়ে সময় কাটাতে ওর ভীষণ ভালো লাগে। সে ভালো লাগাকে আরো বাড়াতে আকাশে থালার মতো বিশাল এক চাঁদ।

মানতাসা রূপমের পাশে এসে দাঁড়ালো। স্ত্রীকে ধীর তালে নিজের কাছে টেনে নিয়ে কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। উলটো করে দাঁড় করিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে চুলের ঘ্রাণ নিল। 

মানতাসা বেশ মন খারাপ করে বলল,
"একা বাসায় ভালো লাগে না। বাড়ির জন্য খুব মন কাঁদে। আজ দুপুরে কিচ্ছু খাইনি। ভালো লাগে না। বিয়ের আগের সময়টাই ভালো ছিল। ইশ, কি নিশ্চিন্ত ছিলাম! আমার ভালো সময় শেষ হয়ে গেল। কি দরকার ছিল এমন তাড়াহুড়ো করে বিয়ে করার? বিয়ের পর মেয়েদের জীবন নাকি শেষ হয়ে যায়। আমারও এখন তাই মনে হচ্ছে"

রূপম মাথা নেড়ে বলল,
"কথাটা ভুল। বিয়ের আগের সময় অবশ্যই বিয়ের পরের সময় এর চেয়ে নিশ্চন্ত। তবে এই সময়টাও খারাপ না। এই সময়টা ভীষণ ম্যাজিকাল। এই যে তোমার আমার একটু একটু করে কাছে আসা, একটু একটু করে নিজেদের আবিষ্কার করা, একটু একটু ভালোবাসা, এই স্মৃতি গুলোই আজীবন থাকবে। সারাজীবন বসে বসে স্মৃতিচারণ করবে, এই সময় কি সুন্দর, কি ম্যাজিক্যাল ছিল! এজন্য বিয়ের কথা ভেবে আফসোস না করে এখনকার সময়টাকে বেশি বেশি স্মৃতিময় করা উচিত"

মানতাসা রহস্য নিয়ে হাসলো। ঘাড় ঘুরিয়ে বরের গলা জড়িয়ে ধরে বলল
"আচ্ছা? তা এজন্য কি করতে হবে?"

রূপম হেসে উঠলো।
"যে কারণে শাড়ি পরেছো, সেই কাজ করতে হবে"
"ইশ, আমি তো এমনিই শাড়ি পরলাম!"
"আচ্ছা? আমি ভাবলাম ম্যাজিকাল মোমেন্ট গুলোকে আরও ম্যাজিক্যাল করতে শাড়ি পরা হলো"

মানতাসা দুহাতে মুখ আড়াল করলো। আর রূপম দুষ্টু চাঁদের থেকে মিষ্টি বউটাকে আড়াল করতে তাকে নিয়ে অন্ধকার ঘরে চলে এলো।

দুষ্টু চাঁদ আকাশ থেকে মিটিমিটি হাসছে। সে তো এমন কতো হাজার কোটি ছলনামাখা দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার সাক্ষী!

লেখা #AbiarMaria

*dedicated to all married couples in this month of love ❤️

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen2U.Pro