Màu nền
Font chữ
Font size
Chiều cao dòng

#দ্যা_রঙ_নাম্বার_কেবিন
লেখা #AbiarMaria

#৩

রাইমা ভয়ার্ত দৃষ্টি দেখে আরহাম দাঁত বের করে হাসছে। রাইমার এই দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে, আরহামের উপরের দুই দিকের চার নাম্বার দাঁতটা অস্বাভাবিক রকম চোখা, ঠিক যেন ভ্যাম্পায়ার। এখনই কি এই লোক ওর গলায় দাঁত ফুটিয়ে রক্ত খাবে?! ভয়ে রাইমার মাথায় আরও যত উল্টোপাল্টা জিনিস ঘুরছে।

ওদিকে আরহামের পেট ফেটে হাসি আসছে। সে হাসতে হাসতে ভাবছে, এই মেয়ের কত রকম চেহারা দেখা হলো আজকে এক রাতে! সলজ্জিত, দুষ্টু, হাসতে হাসতে লুটুপুটি খাওয়া, ভীত চেহারা! নাহ, সব চেহারাই সমানভাবে আকর্ষণীয়। ও ভাবছে, মেয়েটাকে সত্যি সত্যি নিজের বউ করে পাওয়া গেলে দিন রাত জ্বালিয়ে মারা যেত। ওর মুখশ্রী দেখে মনে হচ্ছে, এই রূপ আজীবন দেখে যেতে পারবে, কখনো পুরোনো হবে না। তবে রাইমা সত্যিই ভয় পেয়ে গেছে। আচ্ছা, যদি আবার ও আরহামকে সামির অন্যান্য ব্যাপারে প্রশ্ন করতে শুরু করে? ও যদি ধরা পড়ে? তখন তো একটা কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। আজ রাতের স্মৃতিটাও মাটি হয়ে যাবে। নাহ, সব পন্ড হতে দেয়া যাবে না। আরহাম উঠে রাইমার দিকে এগিয়ে আসতেই রাইমা চিৎকার করে ওঠে। তোতলাতে তোতলাতে বলে,
"খ খ খ খবরদার, এক পাও আসবেন না! আপনি কে বলেন? মা মা মানুষ? নাকি ভূ ভূ ভূত?!"

আরহাম এবার আর হাসি চাপাতে পারলো না। হো হো করে ট্রেনের ঝকঝক শব্দ ছাপিয়ে হেসে উঠল। রাইমা নিজের ব্যাগ বুকে চেপে ধরে বসে আছে। পাংশু মুখে আরহামের দিকে চেয়ে আছে। মনে ওর মানুষ আর ভূত, দুইয়ের ভয় ঢুকে এক হয়ে গেছে। আরহাম একটু সামনের দিকে নিজের হাত এগিয়ে দিল।
"হাত ছুঁয়ে দেখো, আমি সত্যি, অলীক নই যে ছুঁয়ে দিলেই উবে যাবো!"
রাইমা আতঙ্ক নিয়ে এখনো চেয়ে আছে। আরহাম হাত আরেকটু এগিয়ে দিতে সে সিটের সাথে আরও সেঁটে বসলো।
"শুনেন, আমি জানি জ্বীনরা মানুষের রূপ ধরলে তখন তাদেরকে ছোঁয়া যায়!"
"তাই? তো জ্বীনরা বুঝি মানুষের সাথে কফি শেয়ার করে? ঝাল মটর ব্যাগে করে ঘোরে?"
রাইমা কিছুটা দমে গেল। আরহাম হাসতে হাসতে বলল,
"তোমাকে বোকা বানানো সহজ কেন মেয়ে? যে কেউ তো তোমায় এক হাটে কিনে আরেক হাটে বেচে দেবে!"
"আপনি কি আমাকে অপমান করছেন? দেখেন, আমি জানি আমি বোকা। কিন্তু অন্তত পক্ষে কাউকে বোকা তো বানাই না!"
"কিন্তু বোকা তো হচ্ছো! আজকালকার যুগে বোকা হওয়াটাও কিন্তু একটা অপরাধ!"

রাইমা মুখ গোমড়া করে বসে আছে। জানালার ওপাশের অন্ধকার জানালা দিয়ে চেয়ে চেয়ে ভাবছে, এই লোকটা সামি হলেও সে তো অপরিচিতই। এই প্রথম সে তাকে দেখেছে, না সে পূর্ব পরিচিত, না তার সাথে কোনো সম্পর্ক এখনো হয়েছে। এই লোকের কাছ থেকে ওকে দূরে থাকতে হবে। লোকটা শুধু মজা করছে ওকে নিয়ে!

আরহামের রাইমাকে গোমড়া মুখে দেখতে ভালো লাগছে না। রাতের এই জার্নিটা হেলায় হারানোর কোনো মানে নেই। রাইমার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সে কয়েকবার কাশি দিল, রাইমা তাকালো না।
"আমি সরি দুষ্টুমি করায়। প্লিজ, লেটস নট রুইস দিস নাইট?"
"ইউ অলরেডি রুইনড ইট!"
বলে রাইমা আবার জানালা দিয়ে চেয়ে রইল। আরহাম মৃদু হাসলো।
"জানালার বাইরে কে? কোনো জ্বীন আশিক ভেসে আছে নাকি?"
"শাট আপ!"
"ছিঃ! তুমি রাত বিরাতে এসব করতেছ? তোমার বাসায় বলে দিব আমি!"

দুষ্টুমি করতে করতে কিছুক্ষণের মাঝে ওরা আবার আগের মত হয়ে গেল। আরহাম বালিশে হেলান দিয়ে আধাশোয়া হলো। রাইমার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে প্রশ্ন করল,
"বই পড়া হয়?"
"নাহ, বইয়ে আগ্রহ কম। ভালো লাগে না"
"ছোটবেলা পড়তে না গল্পের বই?"
"খুব কম। এখন তো আরও না!"
"আমি কিন্তু প্রচুর বই পড়ি, বলতে পারো নেশার মত"
"আপনি কি রাগ করলেন আমি বই পড়ি না বলে?"
"না, না, রাগ কেন করব? প্রতিটা মানুষের নিজস্ব পছন্দ থাকতে পারে না? আমি সেটা সম্মান করি। প্রতিটা মানুষ একেকটা আলাদা সত্ত্বা। তাদের চাহিদা আলাদা হবে, পছন্দ আলাদা, জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা হবে। এটাই তো পৃথিবীর সৌন্দর্য!"

রাইমা মুগ্ধ হয়ে আরহামের কথা শুনছে। এই লোকটা এত সুন্দর করে ভাবে কেন? ওর মাথাভর্তি চুল, উজ্জ্বল শ্যামলা মুখ, মোটা ভ্রু, চাপা দাড়ি, সব কিছুতে এত আকর্ষণ লুকিয়ে আছে কেন? রাইমা মনে মনে শিউরে ওঠে। বাসর রাত কিংবা তার পরের সময়গুলো যে কত মধুর হতে যাচ্ছে, তা আজকের জার্নি না হলে সে টের পেত না। আরহামের কন্ঠস্বরও ওর কাছে বড্ড নেশাতুর লাগছে।

রাইমাকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরহাম কথা বলা বন্ধ করে দেয়। কন্ঠ নিচু করে প্রশ্ন করল,
"কি দেখছ?"
রাইমা লজ্জায় অন্যদিকে ফিরে বলল,
"কিছু না!"
"কিছু একটা তো দেখছিলে, আর ভাবছিলে। কি সেটা? আমাকে বলা যায়?"
"আসলে ভাবছিলাম, আল্লাহ তো পৃথিবীতে প্রত্যেককে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছে। হয়ত আপনার জোড়ায় আমাকে সৃষ্টি করেছে বলে..."

রাইমা থেমে গেল। আরহামের তীব্র দৃষ্টি উপেক্ষা করে তার কন্ঠ দিয়ে শব্দ বেরুচ্ছে না।
"কি হলো? কথা শেষ করো?"
"না, কিছু না। আমি একটু ওয়াশরুমে যাবো!"

রাইমা আরহামকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। আরহামের মন খারাপ হচ্ছে এই ভেবে, মেয়েটা এখনো জানে না যে আরহাম ওর জোড়া নয়। ওর জোড়া সামি, যার সাথে গত দুদিন ধরে কথা বলছে। আর আরহাম? জাস্ট আ স্ট্রেঞ্জার যার সাথে হয়ত আর কখনো দেখা হবে না। যদি কখনো দেখা হয়ও, মেয়েটা ওকে সহ্য করতে পারবে না কারণ সে একজন মিথ্যাবাদী। আরহামের কষ্ট হচ্ছে। মেয়েটাকে ওর নিজের জন্য পার্ফেক্ট মনে হচ্ছে। অথচ ও কারো স্ত্রী হতে যাচ্ছে অল্প কিছুদিনের মাঝে। কি এক নিয়তি! সত্যিই কি খুব দরকার ছিল এমন একটা রাতের?

কখন আরহামের চোখ লেগে এসেছে টের পায়নি। দরজার শব্দে ওর ঘুম ভেঙে গেল। অল্প করে চোখ খুলে দেখল, রাইমা সন্তর্পনে দরজা দিয়ে ঢুকছে। যখন সে উলটো করে দরজা লাগিয়ে দিচ্ছিল, তখন  আরহাম গমগম স্বরে বলল,
"হারিয়ে গিয়েছিলে?"

রাইমা ভয়ে রীতিমতো কেঁপে উঠল। বুকে থুতু দিয়ে পেছনে ফিরে পালটা প্রশ্ন ছুড়লো,
"আপনি ঘুমাননি?"
"ঘুমিয়েছিলাম। শব্দ পেয়ে ভেঙে গেল"
রাইমা সিটে বসতে বসতে আরহাম উঠে বসলো। রাইমা স্কার্ফ ঠিক করতে করতে বলল,
"আপনি না কেমন যেন!"
"কেমন আমি? খুব খারাপ?"
"সেটা না। শুধু আমাকে চমকে দেন! আর আমিও ভয় পেয়ে যাই! এমন কেন আপনি? মনে হয় যেন এক্ষুনি কলিজাটা লাফিয়ে হাত থেকে পরে গেল এভাবে!"
রাইমা হাত দিয়ে কলিজা পড়ে যাচ্ছে, এমন একটা অভিনয় করল। আরহাম ওপাশ থেকে খপ করে কলিজা ধরে ফেলার অভিনয় করে বলল,
"এই যে,ধরে ফেলেছি! এবার এটা আমার কাছে থাকবে!"
আরহাম সেটা নিজের বুক পকেটে ঢুকিয়ে নিল। রাইমা চোখ বড় বড় করে চেয়ে থেকে সেই গভীর টোল পড়া সলজ্জ হাসি হাসলো। মুখ নিচু করে বলল,
"আমারটা যে নিয়ে নিলেন, এখন আমার কি হবে?"
"আমারটা তোমাকে দিতে পারি, যদি কাজে লাগে আর কি... নেবে?"
রাইমা কিছু বলার আগে বুকের বাঁ পাশে হাত চেপে হার্ট ছিড়ে ছুড়ে দেয়ার ভঙ্গি করল।
"তোমাকে কলিজা না, আমার হার্ট দিয়ে দিলাম। যত্ন করো কিন্তু!"

রাইমা মুখে হাত চেপে হাসছে। আরহাম এবার চোখ সরিয়ে নিল। এই মেয়ের হাসি দেখেই ওর সর্বনাশ হয়েছে। আর হাসি দেখা যাবে না, তাহলে চিরজীবনের জন্য ঐ হাসিতে ফাঁসির দড়ির মত ঝুলে মরতে হবে!

গল্প করতে করতে ওরা কখন ঘুমিয়ে পড়ল, খেয়াল নেই। দুজনেই আধশোয়া হয়ে যার যার সিটে গল্প।করতে করতে স্বপ্নরাজ্যে হারিয়ে গেছে।

আরহামের ঘুম ভাঙলো যখন, তখন সে খেয়াল করলো, বাইরে আলো ফুটতে শুরু করেছে। উঠে বসতেই খেয়াল হলো, একটু একটু করে ফর্সা হতে থাকা আকাশের বর্ণচোরা রূপ। জানালা দিয়ে বাইরে চেয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ মনে পড়ল, একজন অপরিচিতা তার কেবিনে শেয়ার নিয়েছে। কেবিনের আলো থাকায় স্নিগ্ধ আলোয় রাইমাকে দেখতে পেলো না, তবে ওর ঘুমন্ত মুখশ্রীতে এলোমেলো কিছু চুল সুন্দর নকশা করছে, তা মন দিয়ে দেখলো। আ স্লিপিং বিউটি! আরহাম এবার শব্দ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আর মাত্র আধাঘন্টা, আর তারপর এত মধুর যাত্রার এখানেই সমাপ্তি হবে। রাইমাকে আর ঘুম থেকে ওর তুলতে ইচ্ছা করলো না।

বেশ কিছুপর যখন ট্রেন এসে এয়ারপোর্ট রেলওয়ে স্টেশনে থেমেছে, তখন রাইমা উঠে বসল। আরহাম ওর সবকিছু গুছিয়ে নিয়েছে। রাইমা চোখ খুলে ওকে বের হয়ে যাবার জন্য প্রস্তুতি নিতে দেখে প্রশ্ন করল,
"আমাকে ডাক দিলেন না যে? আমরা কি কমলাপুরে চলে এসেছি?"
"না, এয়ারপোর্টে"
"তাহলে আপনি কি নেমে যাচ্ছেন?"
"হ্যাঁ"
"কিন্তু আমাদের যে এক সাথে কমলাপুরে নামার কথা ছিল!"

আরহাম বেশ বিপদে পড়ল। এমনিতে সে মিথ্যা বলায় বেশ পটু, তাই এবারও মিথ্যা বলল,
"আমার আসলে একটা জরুরী কাজ পড়ে গেছে, তাই নামতে হবে। খুবই দুঃখিত তোমাকে কমলাপুর পর্যন্ত সঙ্গ দিতে পারলাম না বলে"
"নাহ, ঠিক আছে",
রাইমা নিভু নিভু কন্ঠে বলল। ওর বিশ্বাস হচ্ছে না, এত সুন্দর সময় চোখের পলকে কেটে গেল। কি হতো আজ তার জরুরী কাজ না থাকলে?

ওদিকে আরহামের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে গেছে। রাইমাকে সে শেষ বারের মত দেখে নিচ্ছে। এই মেয়েটা যখন সত্যটা জানবে, তখন নিঃসন্দেহে ওকে ঘৃণা করবে পুরো রাতভর মিথ্যে বলার অপরাধে। রাইমা কাপড় টেনে ঠিক করে গায়ের উপর থেকে কম্বল সরিয়ে উঠে দাঁড়ালো। হাসিমুখে বলল,
"তাহলে আমাদের তিন দিন পর হলুদের অনুষ্ঠানে দেখা হচ্ছে?"
আরহাম মৃদু হাসলো, যদিও সেটাকে হাসি না বলে অসহায়ত্বের বহিঃপ্রকাশ বলা যায়। রাইমা কথা খুঁজে না পেয়ে বলল,
"আপনি কি এর মাঝে আর দেখা করবেন?"
"সেই সুযোগ বোধহয় আর হবে না"
"হুম"

দুজনে কি বলবে বুঝতে পারছে না। আরহাম শেষ পর্যন্ত বলল,
"ভালো থেকো। নিজের খেয়াল রেখো। আর সবসময় হাসবে। তোমার হাসিটা অনেক বেশি সুন্দর"
রাইমা লজ্জা পেয়ে মুখ নিচু করে বলল,
"এরপরের বার হেসেই দেখা করব আমরা"
"হয়ত!"
"হয়ত কেন?"
আরহাম হেসে কথার মোড়া ঘুরালো,
"বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই দেখা হবে, এজন্যই বলা! একদম মন খারাপ করো না! আই ওয়ান্ট টু সি ইউ স্মাইলিং!"

রাইমা মিষ্টি করে হাসলো। আরহামের বুকের বাঁ পাশে ব্যথা করছে। সে দ্রুত দরজা খুলে বেরিয়ে গেল। রাইমা দৌড়ে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। ওকে দেখার তৃষ্ণা যে মেটেনি একটুও! স্বপ্নপুরুষ, তুমি কোথায় যাচ্ছো? রাইমার দুচোখ আতিপাতি করে খুঁজে বেড়াচ্ছে। ও তখনও জানে না, আরহামকে সারাজীবনের জন্য বর হিসেবে ওর পরিবার ঠিক করেনি!

দুজন তখনও জানে না, সত্য সামনে আসার পর রাইমা আদৌ কি করবে!

চলবে...

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen2U.Pro