সালিহ আঃ, সামূদ জাতি ও একটি উটনী

Màu nền
Font chữ
Font size
Chiều cao dòng

আগের পর্বে বলেছিলাম, এই পর্বে আমরা সালিহ আঃ কে নিয়ে কথা বলব যাকে পাঠানো হয়েছিল সামূদ জাতির কাছে। কুরআনের বেশির ভাগ সূরায় 'আদ এবং সামূদ জাতির কথা একত্রে উল্লেখ হয়েছে, কিংবা পরপরই। নূহ আঃ ৯৬০ বছর বেঁচে ছিলেন। ৯৫০ বছর ধরে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে তিনি ইসলামের পথে ডাকেন, মূর্তিপূজা করতে নিষেধ করেন। তখনকার ইসলাম অনেক সহজ ছিল, জাস্ট আল্লাহকে মানতে হবে! মূলত যেটাকে তাওহীদ বলা হয়। নামায রোযা ফরজ ছিল না, যাকাত, বিয়ে শাদী, সব কিছুতে এত নিয়ম ছিল না, মদ বা সুরাও হারাম ছিল না। এরপরও ঐ সময়ের মানুষের এক আল্লাহকে মানতে ভীষণ এলার্জি ছিল। তারা নবীদের পাগলের মত ট্রিট করত। বলত, এইসব বলা বন্ধ করো, না হলে মাথা ফাটিয়ে ফেলব! আমাদের বাপ দাদার ধর্ম কি ছেড়ে দিব নাকি? বাপ দাদা তো ঐ মূর্তিপূজক ছিল, তারাও থাকবে।

সূরা তাওবা, সূরা হূদ, সূরা ইবরাহিম, সূরা হাজ্জ্ব, সূরা ফুরক্বান, সূরা শু-আরা, সূরা আন-নামল, সূরা আনকাবূত, সূরা সা'দ, সূরা গাফির, সূরা ফুসসিলাত, সূরা আয যারিয়াত, সূরা আন নাজম, সূরা আল ক্বামার, সূরা আল হাক্বাহ, সূরা আল বুরুজ, সূরা আল ফজর, সূরা আশ শামস- এই সূরাগুলোয় আল্লাহ এই অভিশপ্ত সামূদ জাতির কথা উল্লেখ করেছেন। কোথাও বেশ বর্ণনা করেছেন, কোথাও আবার কেবল নাম উল্লেখ করে আমাদের স্মরণ করিয়েছেন তাদের উপর নেমে আসা গজবের কথা যেন আমরা সতর্ক থাকি।

'আদ জাতির মত এই জাতিও ছিল আরবের প্রাচীন বাসিন্দা। মদীনা ও তাবুকের মাঝখানে হিজায রেলওয়ের একটি ষ্টেশন রয়েছে, তার নাম মাদায়েনে সালেহ। এটিই ছিল সামুদ জাতির কেন্দ্রীয় স্থান। প্রাচীনকালে এর নাম ছিল হিজর।সামুদ জাতির লোকেরা পাহাড় কেটে যেসব বিপুলায়তন ইমারত নির্মাণ করেছিল এখনো হাজার হাজার একর এলাকা জুড়ে সেগুলো অবস্থান করছে। এ নিঝুম পুরীটি দেখে আন্দাজ করা যায় যে এক সময়ে এ নগরীর জনসংখ্যা চার পাঁচ লাখের কম ছিল না।

কুরআন অনুযায়ী, 'আদ জাতির বৈশিষ্ট্য ছিল সুউচ্চ ভবন নির্মাণ যার কারণে ধারণা করা হয় পিরামিড 'আদ জাতির তৈরি। আর সামূদ জাতির বৈশিষ্ট্য ছিল পাহাড় কেটে বড় বড় অট্টালিকা বানানো। নিচে কিছু ছবি দিব বোঝার জন্য। সাধারণত সৌদি, মিশরের ছবি দেখলে এসব বাড়ির ছবি আসে সামনে। নাও ইউ নো এগুলা কারা বানিয়েছিল। এই সভ্যতার শহরটি বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। যারা মোটামুটি ইসলামী ইতিহাস নিয়ে পড়ে, তারা জানে, আল্লাহর নবী রাসুলুল্লাহ সাঃ এসব গজব প্রাপ্ত এলাকা যত দ্রুত সম্ভব ত্যাগ করতে বলেছেন এবং আমরা যেন এখানে ঘোরাঘুরি না করি। কারণ এগুলো বেড়াতে আসার স্থান না, বরং এগুলো আল্লাহর গজবে, আল্লাহর ক্রোধে ধ্বংসপ্রাপ্ত অভিশপ্ত স্থান! সুবহানআল্লাহ!

'আদ জাতির মত সামূদ জাতি মূর্তিপূজাতে লিপ্ত ছিল। পাশাপাশি তারা দুর্বলদের উপর অত্যাচার করত, গরীবরা খেতে পারত না, অত্যাচারীরা ক্ষমতায় বসেছিল আমাদের বর্তমান সময়ের মত। একদিকে গরীবদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, অন্যদিকে অত্যাচারী শাসকরা পাহাড় কেটে কেটে বিশালাকার অট্টালিকা বানাচ্ছিল শুধু লোক দেখানোর জন্য। এগুলোর শো অফ, নিজেদের জাহির করা ছাড়া আর কোনো উদ্দেশ্যই ছিল না।

আমি যে সময়ের কথা বলছি, এটা কিন্তু খ্রিস্টপূর্ব! তখনও আমাদের বর্তমান পুঁজিবাদী সমাজের মতই অত্যাচারী সমাজ ছিল! বলে না "ইতিহাস বার বার ফিরে ফিরে আসে"? ঠিক তাই। তখনও মানুষ শো অফ করার জন্য এসব করছিল আর অন্যান্য সব ধরনের অত্যাচার তো আছেই। 'আদ জাতির পরে তারাই ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী, শিল্পে সম্পদে সমৃদ্ধ জাতি। যত উন্নত ছিল তাদের অবস্থা, তার চেয়ে খারাপ ছিল তাদের কাজকর্ম ও চরিত্র। সব মিলিয়ে আল্লাহ সালিহ আঃ কে তাদের কাছে পাঠান।

সালিহ আঃ কেও অন্যান্য নবীদের মত যা তা বলা হয়, হুমকি দেয়া হয়, মিথ্যাবাদী বলে। সালিহ আঃ এর দাওয়াতে গরীব দুর্বল যারা ছিল, তারা ঈমান আনে, আল্লাহকে মানে। কিন্তু নেতা গুলো অহংকার আর সম্পদে অন্ধ হয়ে ঈমান আনে না। তাদের দুইটা যুক্তি ছিল-
এক, আমরা বাপ দাদার ধর্ম ছাড়ব না
দুই, আমরা তোমাদের (গরীব ফকিন্নি বলে যাদের অত্যাচার ও তাচ্ছিল্য করছে)গ্রহণ করব না।

এরপর তারা শর্ত দেয়, যদি 'কাতেবা' নামক পাহাড় থেকে ১০ মাসের গর্ভবতী, স্বাস্থ্যবান একটা উটনী বের করে আনতে পারো, তাহলে আমরা ঈমান আনবো। যথারীতি একটা বিস্ময়কর উটনী সেখান থেকে বের হয়ে আসে। সালিহ আঃ নিষেধ করে দেন যেন ভুলেও তারা উটনীকে খারাপভাবে স্পর্শ না করে অর্থাৎ ক্ষতির চিন্তা না করে। এই উটনী এক সময় পানি খাবে, অন্য সময় মানুষ কুয়া থেকে পানি খাবে। অর্থাৎ উটনীর সাথে পালাবদল করে মানুষ পানি খাবে আর তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না- মোটামুটি এই ছিল উটনীকে নিয়ে শর্ত। আর উটনী চলে এসেছে, এখন তো নেতাদেরও আল্লাহর প্রতি ঈমান আনতে হবে, মূর্তিপূজাও বন্ধ করতে হবে!

আনফরচুনেটলি, অসভ্য মানুষেরা ঈমান তো আনলোই না, বরং সেই বিস্ময়কর উটনীর পায়ের রগ কেটে দিল। আল্লাহর পক্ষ থেকে পাঠানো একটা বিস্ময়কর প্রানীকেও তারা ছাড় দিল না! ফলে নেমে আসলো গজব। একটা বিকট শব্দ যা এমনভাবে তাদের ধ্বংস করে দিল যে ঐ শহর দেখে কেউ বলবে না সেখানে কেউ ছিল! অনেকে বলে সেটা ছিল ভূমিকম্প!

ইবনে বতুতা এ সম্পর্কে বলেন, এখনো সেখানে মাটি চাপা পড়া কংকাল পাওয়া যাবে।

১৯৫৯ সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী ঐ শহরে গিয়েছিলেন, তিনি বর্ণনা দিয়েছেন এ নিয়ে। নিচে লিংক দিচ্ছি।

একটা জিনিস খেয়াল করে দেখেন, এইসব অভিশপ্ত জাতির সাথে আমাদের বর্তমান অবস্থা অনেকটাই মিলে যাচ্ছে। আমরাও আল্লাহর বিভিন্ন মোজেজা অস্বীকার করছি, অত্যাচার করছি, বড়লোকরা প্রচন্ড বড়লোক হচ্ছে, গরীবরা আরও গরীব হচ্ছে, মানুষ টাকা খরচ করে শো অফ করছে! আমাদের ভূমিকম্প গুলো যে হয়, সেগুলো জাস্ট আমাদের সতর্ক করার জন্য। যদি আমরা এই পৃথিবীতে এসব অত্যাচার চালু রাখি, তাহলে ভবিষ্যতে সামূদ জাতির মত আমরাও ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যেতে পারি এমন ভাবে, যেভাবে ধ্বংস হলে আমাদের সভ্যতায় মানুষ আসবেও না! দূরে থাক দুয়া করা।

আল্লাহ সবাইকে বুঝ দিক। আজ এটুকুই।

https://m.priyo.com/articles/%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%A6-%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%87%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B8/

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen2U.Pro