#1

Màu nền
Font chữ
Font size
Chiều cao dòng


#প্রতীক্ষার_প্রহর

#

কাল রাত ৯টায় লন্ডনের উদ্দেশ্যে আমার ফ্লাইট,তাই সবকিছু গোছগাছ চলছে। ৪ বছরের জন্যে আমি লন্ডনে যাচ্ছি।একটা স্কলারশিপ পেয়েছি University of Greenwich এ food and nutrition এর উপর।এই  scholarship টা পাওয়ার জন্যে আমি বিগত ৬ মাস ধরে খেটে যাচ্ছি আর অবশেষে এই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে। স্বপ্নের পেছনে দুটি মানুষের হাত ছিল,এক,আমার বাবার স্বপ্ন, আবার আমার জিদ ছিল।বাবা অবশ্য চেয়েছিল আমি গ্রেজুয়েশানটা বাংলাদেশ থেকেই করি,তারপর পোস্টগ্রেজুয়েশান দেশের বাহির থেকে করব।তবে এখন সিদ্ধান্ত বদলেছে,গ্রেজুয়েশনও বাইরে থেকেই করা হবে।

বাবার একটা স্বপ্ন অবশ্য আমি এক বছর আগেই ভেংগেছি,সেটা ছিল রংপুর মেডিকেলে চান্স পাওয়ার পরও সেখানে না পড়া।সমস্যা কিছু ছিল,কিন্তু সেটা বাবাকে বোঝানোর মত অবস্থা ছিল না,যার কারণে বাবা অনেক কষ্ট পেয়েছিল।যাক গে সেসব পুরানো কথা।

বাসায় এসে আলমারি খুললাম। আলমারির ড্রয়ারগুলো ভরা আমার সব চাইতে প্রিয় বস্তুগুলো।সেই ছোটবেলা থেকে যা কিছু ওর প্রিয় ছিল সব কিছুই এখানে রাখা আছে।আলমারির প্রথম  ড্রয়ার ভরা ১৮ বছরের সব স্মৃতি,চকলেটের প্যাকেট থেকে শুরু করে যত কিছু রাখা যায়,সব সযত্নে রেখেছি। ড্রয়ার ধরে টান দিলাম,কিন্তু খুলছে না,বোধহয় ভেতরের বেরিয়ে থাকা তার কাটার সাথে আবার আটকে গেছে।হাতল ধরে জোরে টান দিতেই ড্রায়ারটা লাফিয়ে ভেতরের সব জিনিস উগলে বের করে দিল!ইশ,সব ছিটিয়ে পড়েছে মাটিতে,এখন আবার সব তুলতে হবে।এক কাজ করা যায়,সবকিছু দেখেশুনে নেয়া যাবে,অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো ফেলে দিব।ড্রায়ার উলটে গিয়ে ভালোই হলো!

মাটিতে দু পা বিছিয়ে বসে পড়লাম পুরোনো স্মৃতির বইয়ে ছুটোছুটি করার উদ্দেশ্যে।এই যে,হাল্কা বেগুনী রঙের একটা ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ড। এটা আমাকে সাবিহা নিজের হাতে বানিয়ে দিয়েছে।সুতোর ভাঁজে ভাঁজে আমার নামটাও খুব সুন্দর করে লিখেছে, মাহা!

সাবিহা হচ্ছে আমার স্কুল জীবনের বেস্ট ফ্রেন্ড, আজকাল অনেকে ঢং করে বলে, 'বেস্টি', আগের মানুষ বলত 'সই'।তবে আমার বেস্টি বা সই,যাই বলি না কেন,কলেজে উঠে ও ঢাকা থেকে চলে যায়।এরপর আর যোগাযোগ হয়নি ওর সাথে।Facebook এ অনেক খুজেছি, কিন্তু ওকে পাইনি,যেন মেয়েটা ঠিক হাওয়াই মিঠাই এর মত বাতাসের সাথে মিশে গেছে। অনেক ভালো মেয়ে ছিল সাবিহা।মাঝে মাঝে ভাবি, সাবিহা থাকলে ভালই হত,অনেক অনেক কথা শেয়ার করার ছিল,অনেক অনেক মুহূর্তের গল্প করার জন্য প্রায়ই বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যায়,কিন্তু সাবিহা নেই!নেই মানে একেবারেই নেই।আজ যদি ও পাশে থাকত,ঠিক যেমন এই ফ্রেন্ডশীপ ব্যান্ডটা আজও রয়ে গেছে বন্ধুত্বের স্মৃতি হয়ে,তবে হয়ত সময়গুলো এতটা কঠিন হত না।

সাবিহাকে অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে করছে আমার,যেমন, কেমন ছিল আমার এই তিনটা বছর।সাবিহার একটা অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল, আমার সব কিছু শুধু চোখ মুখ দেখেই বুঝতে পারা।অনেক বেশিই ভাব অনুভব করি ওর।এস এস সি এর ফলাফল ঘোষণার পর সাবিহা বাসা বদলে সেই যে ঢাকার বাহিরে চলে গেছে,তার দিশা কিন্তু আজও জানতে পারি নি।

সাবিহারা যেই বাসায় থাকত ওই বাসায় সাবিহাদের প্রতিবেশীদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম ওদের চলে যাওয়ার কিছুদিন পর।কিন্তু সাবিহারা কোথায় গিয়েছে তারা কেউই আমাকে বলে নি,হয়ত বা তারা সত্যিই জানে না ওর খোঁজ। তবে একজন জানে সাবিহা কোথায় আছে যার কাছে এই ৩ বছরে অনেকবার জিজ্ঞেসা করেও আমি জবাব পাইনি।তিনি বলেছেন, সময় হলেই সাবিহার খোঁজ দিবেন,অথচ সময় হবে হবে করেও তিনি ৩ বছর পার করে দিয়েছেন,এখনও মুখ খুলেননি!

লোকটার কথা মনে পরতেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায় আমার,বিরক্তিকর এক চরিত্র।অবশ্য চরিত্রটা লন্ডনেরই অধিবাসী।এইবার সেখানে গিয়ে তাকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করব,সে কি সত্যি সত্যি আমাকে সাবিহার খোঁজ দিবে কিনা???না দিলে তখন একটা দফা রফা করতেই হবে! একটা মানুষ যে এত হৃদয়হীন হতে পারে,তা এই লোককে না দেখলে বোঝা মুশকিল!

উফ,বাজে মানুষের কথা ভেবে সময় নষ্ট করছি।প্রায়ই আল্লাহর কাছে দোয়া করি আমার হারানো বান্ধুবীকে ফিরে পাবার জন্যে। এই ৩টা বছর অনেক কষ্টে কেটেছে সাবিহাকে ছাড়া।আল্লাহ এমন মানুষ খুব কম সৃষ্টি করেন যে আপনার চোখ দেখেই বলতে পারে আপনার মনে কি চলছে। সাবিহা হল আমার জীবনের এমনই এক চরিত্র,যার সাথে আমার ছোটবেলা মিলেমিশে একাকার।একটা কথা আজও  মনে আছে।

সেটা ছিল স্কুলের প্রথম দিন।আমি মায়ের সাথে স্কুলে গিয়েছিলাম,সারা রাস্তা ঠোঁট ফুলিয়ে শব্দ করে কেঁদেছি আর মায়ের কেনে আঙুল মুচড়িয়েছি, সে কি কান্না আমার!মা আমাকে একা ফেলে চলে যাবে,সেই ভয়ে আমি কিছুতেই স্কুলে যাব না,ক্লাসেও বসব না,আর গেলেও মাকে ক্লাসে আমার সাথে বসতে হবে!কিন্তু মা সেইদিন কোথা থেকে এক উটকো মেয়েকে ধরে এনে বলে,

-মাহা!এ হল সাবিহা, আজ থেকে ও তোমার বান্ধবী।সাবিহা,এ হল মাহা, তোমার বান্ধবী!দুজনে হাত মেলাও?

সাবিহাকে একটুও পছন্দ হয়নি সেদিন আমার।কিন্তু আমার দিকে ভেবলার মত তাকিয়ে তাকিয়ে সাবিহা হাসছিল।তারপর সেই ভেবলা চেহারা নিয়ে সাবিহা জিজ্ঞেস  করল

-Hi Maha!!how are you?
আমি অনেকটা অবহেলার সাথেই জবাব দিয়েছিলাম,
-I am fine

মা ক্লাসে আমাদের দুজনকে একসাথে বসিয়ে দিয়ে চলে গেল।আমার তখন আবার খারাপ লাগছিল মায়ের জন্যে, মাকে ছাড়া ২ ঘন্টা থাকতে হবে ভেবে ঠোঁট উলটে কান্না আসছিল,ইচ্ছে হচ্ছিল সামনে যা আছে সব ফেলে দেই।কিন্তু পাশে বসে থাকা এই সাবিহা একটা যন্ত্রণা!এতক্ষণ ভেবলার মত ভাব নিলেও আসলে মেয়েটা সাক্ষাত পাজী! কারণ আমার পেন্সিল নিয়ে যায়,আবার আমার প্রিয় গাজরের রাবার টা দিয়ে মোছামুছি শুরু করে!আমার খুবই বিরক্ত লাগছে এই মেয়ের কাজকর্মে।সহ্য করতে না পেরে সাবিহা কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম,

-এই মেয়ে! তোমার মায়ের জন্যে খারাপ লাগে না?

সাবিহা মাথা নাড়িয়ে জবাব দেয়,
-না। খারাপ কেন লাগবে? মা বলেছে স্কুলে আমার অনেক বান্ধুবী হবে যাদের সাথে আমি খেলব,পড়ব,মজা করব।তাহলে কেন আমার খারাপ লাগবে বল?

-তোমাকে আমার লাগবে না,তুমি তোমার ফ্রেন্ড অন্য কোথাও থেকে খুজে নাও!

কিন্তু সাবিহা আমার কাছ থেকে যায় না। সে আমার পাশেই বসে থাকে।টিফিন টাইমে সে আমার অনুমতি ছাড়াই প্রিয় chicken fry খেয়ে ফেলে!আমার মেজাজ খুব ভালই গরম হয়ে যায়।আমার কিছু থাকুক আর না থাকুক,জন্মের পর থেকে শরীর ভরা রাগ আর জেদ! তার উপর ছোচা সাবিহা পুরাটা শেষ করে না!সে অর্ধেক খেয়ে বাকিটা রেখে দেয়।

-সাবিহা, আমি তোমার friend হব না তুমি প্লিজ অন্য কাউকে ফ্রেন্ড বানাও।

-কিন্তু কেন তুমি আমার ফ্রেন্ড হবা না?

-তুমি একটা পচা মেয়ে,তুমি আমার সব প্রিয় জিনিস নিয়ে যাচ্ছ!তোমাকে আমার ভালো লাগে না।

-ok,আমিও তাহলে তোমাকে আর পছন্দ করি না,এই নাও,আড়ি!

কি অদ্ভুত শৈশব!অথচ আজ ১৫ বছর পর সাবিহাকে একটু দেখার জন্যে আমার মন আঁকুপাঁকু করছে,ইচ্ছে হচ্ছে পুরো পৃথিবী তন্নতন্ন করে ওকে বের করি।যে মেয়েকে আমি পছন্দ করি নি প্রথম দিন,তিন বছর যাবত তাকে একবারের মত দেখার জন্যে আমি ছটফট করছি।আজ গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে,"কই তুই সাবু!!!"

শৈশবের সেই দিনে সাবিহা মাহার কাছ থেকে উঠে চলে গিয়েছিল,তবে কয়দিনের মাঝে আবার ওর কাছে ফিরে এসেছিল।  কিন্তু এইবার সাবিহা কবে ফিরবে আমার জীবনে?কবে ওর সাথে মন উজার করে কিছু শব্দ বিনিময় করতে পারব?কবে ওর কাঁধে মাথা রেখে একটু কাঁদব?

আমি মানা করার পর সাবিহা কিছুদিন প্রত্যেকদিন একজন একজন করে সবার কাছে বসেছে কিন্তু কাউকেই ভালো লাগে না তার। তাই সাবিহা আবার শেষমেশ আমার কাছেই এসে বসে আর আমাকে দেখে দাঁত কেলিয়ে হাসে।ওকে এত মানা করতাম,এত অপছন্দ করতাম,তবুও সে আমার পাশেই বসত! আর সেই কাজগুলোই বেশি করে করত যেটা আমার একদম অপছন্দ,কিছুতেই পিছু ছাড়ে নি।তাহলে এই সাবিহা কিভাবে মাহার বেস্টি হল?? বলছি!

একদিন ক্লাসের এক মেয়ের সাথে আমার প্রচন্ডরকম ঝগড়া বাঁধে।খেলতে গিয়ে মেয়েটা আমাকে মাঠে ইচ্ছে করে ফেলে দেয়। ব্যথা দিয়ে সে উল্টো আমার সাথে আরো ঝগড়া বাঁধিয়ে দেয়।বেচারি ছোট্ট বোকা আমি!ঝগড়া করতে পারছিলাম না ঠিকমতো।তখন সাবিহা এসে আমার হয়ে মেয়েটার সাথে ঝগড়া করতে যায়।

-এই মেয়ে,তুমি আমার বান্ধবীকে ধাক্কা দিয়ে ফেললা কেন?

-আমি ফেলেছি?নাকি ও নিজে আমাকে ধাক্কা দিয়েছে?

-তুমি মিথ্যা বলো কেন! একে তো আমার ফ্রেন্ডকে ফেলে দিছ,আবার ওর সাথে ঝগড়া কর!সরি বলো ওকে!

-আমি কিছু করিনি!তোমার বান্ধবীই ধাক্কা দিয়েছে!

-আবার মিথ্যা?!সরি বলো??

-সরি

সাবিহা বীরের মতো ঝগড়া করে আমাকে সেদিন বাঁচিয়ে নিয়ে আসে।এরপর থেকে স্কুলে কেউ মাহাকে কিছু  বললে সে তার ১২ টা বাজিয়ে দিয়ে আসে। যদিও সাবিহা আমাকে সারাদিন প্রচন্ডরকম যন্ত্রণার মাঝে রাখত,তবুও আমার সাথে শুধু সাবিহার জন্য কেউ কখনো পেরে ওঠেনি। আর এভাবেই দুজন আস্তে আস্তে দুজন বিপরীত চরিত্রের মানুষ একে অপরের আত্মার বান্ধবী হয়ে যাই।সাবিহার কত H.W যে আমি করে দিয়েছি তার ইয়ত্তা নেই। সাবিহাও আমারজন্যে কম যায় না,অনেক বেশি ভালবাসত ও আমাকে।আমাদের ক্যামেস্ট্রি এত ভাল ছিল যে,মনের খবর জানতে হলে একে অপরের মুখ দর্শনই যথেষ্ট ছিল।এইভাবেই কেটে যায় গেছে ১২ বছর!আর তার স্মৃতি, এই ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ড!

এটা পাশে রাখার পরে পেলাম একটা পকিমনের রাবার।এটা দেখা মাত্রই আমার বুকটা ধক করে উঠল। এটা প্রান্তের ইরেজার না?ইরেজারটা হতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছি,ঠিক আগের মতই আছে এটা।আর প্রান্ত?!কেমন আছে ও?এই ইরেজারটার মতই অপরিবর্তনীয় রয়ে গেছে কি?

ভাবছেন প্রান্ত কে?প্রান্ত হলো...

চলবে...

লেখনীতে #Abiar_Maria

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen2U.Pro