ডাকাতি ০১

Màu nền
Font chữ
Font size
Chiều cao dòng

বাবলু প্রস্তাব দিল রন্টুদের বাসায় ডাকাতি করলে কেমন হয় । রন্টুদের বাড়ি শুনে সবাই খুব উৎসাহের সাথে সম্মতি দিল।

রন্টুর উপর  শুধু যে  বাবলুর রাগ আছে তা না। আনুদের সবাই রন্টুর   করম কান্ডে কম বেশি অতিষ্ঠ।  বাবলু দুষ্টামি করে এটা ঠিক কিন্তু সে পাজি না। রন্টু হচ্ছে বদমাইশ দি গ্রেট। পাড়ার বাচ্চাকাচ্চারা থেকে শুরু করে বড়রাও রন্টুকে খুব একটা পছন্দ করে না। এইতো সেদিনই রন্টু ইচ্ছে করে আরিশার পা ভেঙ্গে দিয়েছে। আরিশা বন্ধুদের সাথে কানামাছি খেলছিলো। হঠাৎই গাছের গুড়িতে পা বেধে পড়ে গেল। আর ঠিক সেই সময়ই রন্টু তার সাইকেলটা স স করে আরিশার পায়ের উপর দিয়ে চালিয়ে দিল। এটা যখন আক্কাস চাচা রন্টুর মাকে বলতে গেল তখন রন্টুর মা তাকে কিছু বলার সুযোগ তো দিলই না উল্টো অনেকগুলো কথা শুনিয়ে দিল। আর বলে দিল আরিশার যে পা ভেঙ্গেছে এতে রন্টুর কোন দোষ  নেই সব দোষ নাকি আরিশার। এরপর আর আক্কাস চাচা কি বলবে! আর রন্টুর মায়ের মুখ হচ্ছে পাড়াবিখ্যাত। পাড়ার সবাই রন্টুর মাকে একটু ভয়ই পায়। রন্টুর মায়ের মতে রন্টু বাদে পাড়ার সব বাচ্চাকাচ্চারা হচ্ছে বিচ্ছু আর বদের হাড্ডি। তার রন্টু এত শান্ত শিষ্ট আর ব্রিলিয়ান্ট যে পাড়ার মানুষের তা সহ্য হয়না। রন্টুর স্কুলের শিক্ষকরাও নাকি ইচ্ছে করে রন্টুকে কম নম্বর দেয়। সেবার রন্টু অঙ্কে তেরো পেয়েছে তাইতে রন্টুর মা পাড়ার অন্যদের কাছে বলে বেড়িয়েছে রন্টুর স্কুলের শিক্ষকরা নাকি ইচ্ছে করে রন্টুকে কম নম্বর দিয়েছে  অন্য ছাত্রদের প্রতি স্বজন প্রীতি দেখিয়ে।
এসব কারণে রন্টুর মাকে পাড়ার কেউই ঘাটাতে যায় না।

রন্টুদের বাসায় ডাকাতি করার মত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ আর একটিও নেই । এখানে কয়েকটা ঝামেলাও আছে । প্রথমত তাদের দেখে রন্টুরা ঠিকই চিনে ফেলবে । ছদ্মবেশ নিলেও । তাহলে উপায় ?
আমরা যদি ভুতের সাজ সেজে যাই তাহলেই তো আমাদের আর চিনতে পারবে না।
এই প্রস্তাবটা সবার মনে ধরল । এতে কেউ চিনতেও পারবেনা আবার তাদের অভিযানও হবে।ভুতের কথা শুনে বাবলুর একটু মন খারাপ হল ।এতো কষ্ট করে রাইফেলটা বানানো হল আর এখন এটা দিয়ে একটু ভয়ও দেখানো যাবে না  !

রন্টুর মা ভুতে খুব ভয় পায় ।সেদিন মাকে বলছিল তার নাকি প্রায়ই মনে হয় তাদের বাসার ছাদে কে যেন হাটাহাটি করে।তো এটাই সবচেয়ে ভালো উপায় ।

তৃণা বলল এখনও কিন্তু কয়েকটা ঝামেলা রয়েই গেছে। ডাকাতি তো করতে হয় রাতে । আর আমরা যদি বাসায় বলি যে মা আজ রাতে রন্টুদের বাসায় ডাকাতি করতে যাব তাহলে তখনই ঠ্যাং ভেঙ্গে আমাদের অভিযানের পরিপূর্ণতা দান করবে ।

অনু এর সমাধান দিল । আমি বলব আজ আমি তৃণাদের বাসায় থাকব, কয়েকটা প্রশ্ন সলভ করতে হবে আর তৃণা বলবে যে আজ আমাদের বাসায় থাকবে । অন্যরাও এভাবে একজন আরেকজনের বাসায় থাকার কথা বলে সবাই আমাদের হেডকোয়ার্টার৷ অরথাৎ কিনা রহমত চাচার গাছ বাড়িতে জড়ো  হব তারপর সেখান থেকে আমাদের মিশনে।

রাত ১১ টা। সবাই জড় হয়েছে রহমত চাচার গাছ বাড়িতে। অনু তার সাথে নিয়েছে বিশাল একটা ব্যাকপ্যাক। ব্যাকপ্যাকে কি আছে তা অবশ্য কেউ জানে না। সে কাওকে বলেও নি।এখন তাদের জন্য একটা বড় ঝামেলা হয়ে দাড়িয়েছে  তারা কি ডাকাতি করবে। অনেক জল্পনা কল্পনা করেও কেউ ঠিক করতে পারল না। সমাধান করতে না পেরে ঠিক করল যেয়েই ঠিক করবে তারা কি ডাকাতি  করবে। কিন্তু তার আগে কয়েকটা বিষয়ে পরিকল্পনা করে নিতে হবে।
প্রথমেই কার দায়িত্ব কি তা আরেক বার ঝালাই করে নিই। শাফি রন্টুদের বাড়ির পশ্চিমের আমগাছ বেয়ে তাদের ছাদে উঠবে। তারপর সেখানে ইচ্ছে মতো দাপাদাপি করবে। আর সুজন থাকবে রন্টুদের বাড়ির  পেছনের পাচিলটার ঐ পাশে আর কোন ধরনের উল্টা পাল্টা কিছু দেখলেই আমাদেরকে সংকেত দেবে।

রাত ১২:০০ টা

রন্টুদের বাড়ির দরজার সামনে অনু  ,বাবলু আর তৃণা । সুজন রন্টুদের বাড়ির পাচিলের ঐ পাশে এবং শাফি গাছ বেয়ে রন্টুদের বাড়ির ছাদে প্রায় উঠে পরেছে কিন্তু তার আগে সে একটা টেপরেকর্ডার চালু করে রেখে এসেছে ঠিক রন্টুর ঘরের জানালার পেছনে । এটা ঠিক পাঁচ মিনিট পর বাজতে শুরু করবে ।অনু ইন্টারনেট থেকে বহু ঘাটাঘাটি করে ভয়ঙ্কর দেখে কয়েকটা ভূতুরে সাউন্ড ডাউনলোড করেছে । প্রথমবার শোনার সময় অনুর নিজেরই গা কাটা দিয়ে উঠছিল । অনুরা রন্টুদের ঘরে ঢুকবে রান্নাঘরের পেছনের একটা ভাঙ্গা দরজা দিয়ে । এটা বাবলু আবিষ্কার করেছে । দরজার নিচ দিয়ে প্রায় অর্ধেকটা ঘুনে খেয়ে ফেলেছে । দরজারনিচ গলে ভেতরে ঢুকে যেতে অনুদের কোন সমস্যাই হল না ।রান্নাঘরে ঢোকার পর বাবলু ঠিক করল সে প্রথমে রন্টুর ঘরে যাবে । তৃণা দাঁড়াবে সুইচ বোর্ডের কাছে যাতে কোন ঝামেলা হলেই লাইট অফ করে দিতে পারে আর অনু রান্নাঘরেই রইলো । তার নাকি এখানে কিছু কাজ আছে । অনুরা আলখেল্লার মত করে সাদা চাদর আর মুখোশ পরে এসেছে । অনুর বাসায় দুইটা মুখোস ছিল আর বাবলুদের বাসায় একটা । অনু তার কাজ শেষ করে রন্টুর ঘরে এসে দেখে বাবলু দাড়িয়ে আছে । কাছে আসার পর বুঝতে পারল কারণটা । বাবলুর খুব প্রিয় একটা বক্স ছিল । খুব ছোটবেলায় বাবলুকে বাবলুর দাদাভাই কিনে দিয়েছিল । কিছুদিন আগে হঠাটি বক্সটা বাবলুর ব্যাগ থেকে গায়েব হয়ে যায় । এটা নিয়ে বাবলুর পাক্কা সাত দিন মনখারাপ ছিল । এখন এটা শোভা পাচ্ছে রন্টুর টেবিলে । অনু একটু ভালো করে লক্ষ্য করতেই দেখল যে এখানে তারও কিছু জিনিস আছে । অনু তার টিফিনের টাকা জমিয়ে একটা ম্যাগ্নিফাইং গ্লাস কিনেছিল সেটাও এখানে রয়েছে । অনুর ইচ্ছে করছিল এখনই ঘুসি দিয়ে রন্টুর নাকটা ফাটিয়ে দিতে কিন্তু ইচ্ছে হলেই তো আর সব করা যায় না । পুরো টেবিলের দিকে তাকিয়ে অনু বুঝতে পারল তাদের ক্লাসে আর পাড়ার বাচ্চাদের বিভিন্ন সময় যেসব জিনিস হারিয়ে গেছে রন্টু তা নিজের দ্রব্য বিবেচনা করে এখানে এনে রেখেছে । বাবলু রন্টুর টেবিল থেকে সব জিনিস একটা ব্যাগে ভরল । এই সময়ে অনু কিছুক্ষন রন্টুর ব্যাগ ঘাটাঘাটি করল । বাবলু জিজ্ঞেস করাতে বলল সময় হলেই দেখতে পাবি । এমন সময় অনুর ডাউনলোড করা ভুতুরে সাউন্ড বেজে উঠল । তারমানে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে । ঘরের ভেতর খুটখাট শব্দ শুনে বুঝতে পারল রন্টুরা জেগে উঠেছে । রন্টুর মায়ের জন্য অনুদের না না শুধু অনুদের না পাড়ার বেশিরভাগ বাচ্চাকেই বিনা দোষে মায়ের কাছে পিটুনি খেতে হয়েছে । অনু ঠিক করল কিছু না কিছু শাস্তি দিতেই হবে । সে তার ব্যাকপ্যাক থেকে সাথে করে নিয়ে আসা মার্বেলগুলো সারা ঘর জুরে ছরিয়ে দিল ।এরপর রান্নাঘর থেকে তেলের টিন এনে পুরোটা ঘরে ঢেলে দিল । তৃণাকে আগে থেকেই বলা ছিল সে মেইন সুইচ অফ করে বের হয়ে এল । রন্টুদের ঘর থেকে বের হয়েই দেখতে পেল শাফি গাছ থেকে নামছে । এদিকে তাদের টেপরেকর্ডারের শব্দ ছাড়িয়ে রন্টুএ মায়ের চিৎকারের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে । এটাই কেটে পরার ঠিক সময় । ভেতর থেকে চিৎকার চ্যাঁচামেচির শব্দ আসছে , মনে হচ্ছে ডাকাত পড়েছে । তারা তো ডাকাতিই করতে গিয়েছিলো । হোক না মিথ্যামিথ্যি । শাফি এক দৌড়ে টেপরেকর্ডারটা নিয়ে আসার পর তারা এক দৌড়ে তাদের গোপন হেডকোয়ার্টারে গিয়ে সেখান থেকে কস্টিউম চেঞ্জ আবার রন্টুদের বাড়ি আসল তামাশা দেখতে ।

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen2U.Pro