ডাকাতি ০২

Màu nền
Font chữ
Font size
Chiều cao dòng

এদিকে রন্টুর মার চিল্লাচিল্লিতে পাড়ার সবাই জড় হয়েছে রন্টুদের বাসার সামনে । কিন্তু বাড়ির ভেতর যে ঘুটঘুটে অন্ধকার তাতে ভেতরের পরিস্থিতি কিছুই বোঝা যাচ্ছে না । ভেতরে বিকট চিল্লাচিল্লির আওয়াজ পাওয়ে যাচ্ছে । এমন সময় হঠাটি কারো ধপাস করে পড়ার আওয়াজ পাওয়া গেল এবং তারপরই বিলাপ পেরে কান্না । একেএকে তিনবার এই শব্দ পাওয়া গেল । ভেতরে নিশ্চয়ই গুরুতর কিছু হয়েছে । সবাই মিলে ঠিক করল দরজা ভাঙতে হবে এছাড়া উপায় নাই । দরজা ভাঙাও শেষ অনুরাও ঘটনাস্থলে উপস্থিত তবে তাদের কেউ লক্ষ্য করল না । সবাই উদগ্রীব হয়ে আছে ভেতরের অবস্থা জানার জন্য । বাসার চাচা খুব সাবধানে টর্চ জালিয়ে ভেতরে ঢুকলেন । সামনে টর্চ ধরতেই দেখলেন রন্টুরা তিনজনই মেঝেতে চিতপটাং হয়ে শুয়ে আছে । একটু ভালো করে লক্ষ্য করতেই বুঝলেন পুরো ঘর জুরে তেল । ভেতরে যাওয়ার উপায় নেই । তাই তিনি দরজায়ই দাড়ালেন , কারন ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করলে তার ঐ একই অবস্থা হবে । তিনি দরজায় দাড়িয়েই বললেন রন্টুরা যেন হাচর পাচর করে বাইরে বেরিয়ে আসে তাহলে তাদের হাসপাতালে নেওয়ার ব্যাবস্থা করা হবে । এই কথা শুনে রন্টুর মা মনে হয় তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন এবং কোন বিচিত্র কারনে বাসার চাচাকে দোষী সাব্যস্ত করে মনের মাধুরি মিশিয়ে গালিগালাজ শুরু করলের । সবাই ভাবল নিশ্চয়ই রন্টুর মায়ের নার্ভাস ব্রেক ডাউন হয়েছে । এদিকে পাড়াবিখ্যাত সাংবাদিক সিরাজ চাচা এসেছেন খাতা কলম সাথে নিয়ে যাতে কালকের পত্রিকায় এই বিষয় নিয়ে একটা রগরগে নিউজ ছাপাতে পারেন । তিনিও দরজার সামনে দাড়িয়ে এই তথ্য উদ্ঘাটন করার চেষ্টা করলেন কখন-কিভাবে আর কেন তাদের এই শান্তশিষ্ট পাড়ায় মারাত্মক-ভয়াভহ-দুর্ধর্ষ এবং নৃশংস ঘটনা ঘটেছে । এতে ক্ষেপে গিয়ে রন্টুর মা আরেকদফা গালি শুরু করলেন এমন সময় আমাদের পাড়াবিখ্যাত আর্টিস্ট জাহিদ চাচা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলেন এবং তার পরের এক্সজিবিশনের জন্য একটা ধারণা নিতে টর্চ জালিয়ে বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে রন্টুদের ঘরের ভেতরের অবস্থাটা মনেমনে ঝালিয়ে নিচ্ছিলেন । এদিকে রন্তুর মা গালিগালাজ করে করে ক্লান্ত হয়ে কিছুক্ষনের জন্য খান্তি দিল । আর অনুরা ফ্রিতে একটা শো দেখে হেসে কুটিকুটি হল । পুরোপুরি ফ্রিতেও না । কিন্তু শোর এখনও অনেক বাকি আছে ! এদিকে কেউ একজন এ্যাম্বুলেন্স খবর দিয়েছিল তাই প প শব্দ করতে করতে এম্বুল্যান্স এল । এরপর হাচর পাচর করে খুব কষ্টে রন্টুদের বের করে এনে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল । আর অনুরা জারজার বাসায় গেল ।

পরদিন হসপিটাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফিরল রন্টুরা । তেমন কোন বড় ধরনের ব্যথা কেউই পায়নি । রন্টুদের জন্য চমক কিন্তু তখনও শেষ হয় নি । ঘরে ফিরে রন্টুর মা রান্নাঘরে গিয়েছে রান্না করতে । চালের ড্রাম থেকে পট দিয়ে চাল উঠিয়ে দেখেন পটের ভেতরে একটা গোবদা গাবদা ব্যাঙ বসে আছে । ভীষণ চমকে উঠে তিনি পট ফেলে দিলেন । এরপর তিনি আটার বয়াম খুলতেই দেখলেন সেখানেও তিন চারটা গোবদা গাবদা ব্যাঙ বসে আছে । এবার আর তিনি থাকতে পারলেন না বিকট জোরে এক চিৎকার দিলেন । আশেপাশের প্রতিবেশীরা ছুটে এল । অনুরাও এসেছে মজা দেখতে । এসে দেখে রান্নাঘরজুরে কয়েকটা ব্যাঙ লাফালাফি করছে । ব্যাঙ দেখে এভাবে চিল্লানোকে ন্যাকামি হিসেবে গণ্য করে যারা এসেছিল তারা জারজার বাসায় চলে গেলেন ।

স্কুলে রন্টু সাধারণত লাস্ট বেঞ্চে বসে আর সামনের জনকে জ্বালাতন করে তাই রন্টুর সামনে সাধারণত কেউ বসতে চায় না । কিন্তু আজকে অনু ইচ্ছে করেই এখানে বসেছে । যাতে শো মিস না হয় । অন্যদেরও কাছাকাছি বসতে বলেছে । এখন ম্যাথ ক্লাস তো স্যার জ্যামেতি করতে দিয়েছে । ম্যাথ স্যারকে আমরা সবাই বাঘের মত ভয় পাই যদিও কারণটা জানা নাই । একটা কারন হতে পারে আমরা সবাই এই সাবজেক্টটাকেই ভীষন ভয় পাই আরেকটা কারন হতে পারে স্যারের চেহারা । স্যার সবাইকে জ্যামিতি বক্স বের করতে বলেছে । এমন সময় হঠাত করেই রন্টু এক লাফে হাইবেঞ্চে উঠে লাফালাফি শুরু করে দিল । অনু ছাড়া ব্যাপারটা তখনও কেউ ধরতে পারেনি ।কিন্তু কিছুক্ষনের মধ্যেই যখন পনের বিশটা তেলাপোকা পুরো ক্লাস জুরে উরাউরি শুরু করে দিল তখন যা একটা দেখার মত অবস্থা হয়েছিল । কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেখার মত অবস্থায় তখন অনুরা ছাড়া আর কেউই ছিল না । তেলাপোকাগুলোও সবার মত ভয় পেয়ে দৌড়াদৌড়ী করছিল । কে কার আগে ক্লাস থেকে বের হবে তা নিয়ে যখন রীতিমত যুদ্ধ বেধে গিয়েছে তখন অনুরা বসে বসে পুরো দৃশ্যটা উপভোগ করছে । অনুর 'প্রকল্প তেলাপোকা' চাষ সফল হয়েছে যদিও প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ছিল তেলাপোকার সারভাইবাল ক্ষমতা পর্যবেক্ষণ করা । এখন ভোনাস হিসেবে নির্মল আনন্দও পাওয়া গেল । সবাই বের হওয়ার পর অনুরা বের হয়ে দেখল তখনও অনেকে লাফালাফি করছে এবং সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে তাদের সাথে ম্যাথ স্যারও আছেন । আর চারপাশে অন্য ক্লাসের দর্শকরা ফ্রিতে লাফালাফি/ ড্যান্সিং দেখছে । ক্লাসে তেলাপোকা নিয়ে এসে বিদ্যালয়ের শান্তশিষ্ট পরিবেশে বিশৃঙ্খলা ঘটানোর অপরাধে রন্টুকে পরের সবগুলো ক্লাস দরজার সামনে কান ধরে দাড়িয়ে করতে হয়েছে ।   

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen2U.Pro