পর্ব ২

Màu nền
Font chữ
Font size
Chiều cao dòng

#অপরিণত_নিকাহনামা
লেখনীতে, #AbiarMaria

#২

আসিফ ঘরের আলো নিভিয়ে মুখের উপর বাহু দিয়ে চোখ ঢেকে রেখেছে।ওর বাবাকে ভীষণ ভয় পায়।তানাহলে জীবনেও এমন ঘটনা ওর বাবা ঘটাতে পারতো না।ছেলে যখন বাবার মতোই সাহসী হয় বা বাবার কোন গুণ পায়,তখন সবাই বলে 'বাপ কা ব্যাটা'। আসিফ মোটেও বাপ কা ব্যাটা না,আসিফ হলো মা কা ব্যাটা।সে ওর বাবার আদেশের বাইরে যেতে পারে না।আর এখন সামনে ভবিষ্যৎ এ যে ওর বাবা ওকে খুব শীঘ্রই নিজের মতো বিবাহিত পুরুষে পরিণত করবেন,এব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।নিজের উপর প্রচন্ড রাগ উঠছে ওর।কেন যে প্রিয়ন্তির সাথে প্রেম প্রেম খেলতে গেল! এই মেয়ে ওর জীবনে কেন যে আসলো?! না,না,এই মেয়ে আসেনি,আসিফ টেনে হিঁচড়ে নিয়ে এসেছে।আর এখন এই বিবাহিত টাইটেলও নিজের ককর্মকাণ্ডের বদৌলতে পেতে যাচ্ছে।ভাবা যায় ১৮ বছর বয়সের একটা ছেলে বিবাহিত?!

আসিফ ভাবতেই পারছে না কলেজে পা রাখার সাথে সাথে ওর এতদিনের ইজ্জত কোথায় মিশে যাবে! কোনো মেয়ের সাথে ও আর লাইন মারতে পারবে না।সবাই জানবে,আসিফ বিবাহিত।কোনো মেয়ে ওর কাছে নোট নিতে আসবে না,কোনো মেয়ে ওর কাছে অংক বুঝতে আসবে না।যখন ও ডিবেট ক্লাবে বিতর্ক করবে,তখন মেয়েরা হাঁ করে চেয়ে থাকবে না।কারণ ও বিবাহিত! স্যার ম্যামরা নাক সিঁটিয়ে বলবেন, "ও হে অকালপক্ক বালক! এই বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছ?তোমাকে দিয়ে আর কোনো আশা-ভরসা নেই।কোনো ক্যারিয়ারই নেই তোমার।যাও,মুড়ি ভাজো!" পাড়ার দিদিরা ওর দিকে ফিরে বলবে, "দেখ দেখ,অকালে ঝরে পড়া ফুল!"

আর বন্ধুরা? জীবনের সবচেয়ে যন্ত্রণা তো এই মানুষ গুলো দিবে। "কিরে,ভাবীর সাথে কি কি করলি?কিভাবে করলি?কেন করলি?কোথায় করলি?" এ জাতীয় উটকো অযাচিত প্রশ্ন গুলো এরা করবে।যখন কোন বন্ধু এসে নতুন প্রেমিকার খবর দেয়,তখন সবাই মিলে মৌমাছির মতো জেঁকে ধরে এসব প্রশ্নই করে।আসিফকে আরো নোংরা নোংরা কত কথা যে তখন শুনতে হবে বন্ধু মহল থেকে!

আর সহ্য করতে না পেরে আসিফ উঠে বসে।শরীর ঘাম দিয়ে দিচ্ছে।একটা জিনিস ভেবে কুল পাচ্ছে না,ওর বাবা কি করে ওদের দুজনের ব্যাপারে জানলো?তাকে কি কেউ জানিয়েছে?নাকি এটাও আসিফের কোন বোকামির খেসারত?

ফোন হাতে নিয়ে দেখল সাড়ে দশটা বাজে।আরও দুবার প্রিয়ন্তির নাম্বারে ডায়াল করলো।নাম্বারে কল ঢুকছে না।আসিফ ওর ঘরের সাথে লাগোয়া বারান্দায় চলে গেল।এবার প্রিয়ন্তির নাম্বারে রিং হচ্ছে।আসিফ দুরু দুরু বুকে অপেক্ষা করছে প্রিয়ন্তির কন্ঠ শোনার।এ যেন জনম জনমের তৃষ্ণা ওর বুকে।ওপাশে রিং হওয়াও শেষ হচ্ছে না,প্রিয়ন্তির বহুল প্রতীক্ষিত কন্ঠও শুনতে পাচ্ছে না।

মনে হলো কয়েক যুগ পরে আসিফ প্রিয়ন্তির "হ্যালো" শব্দটা শুনতে পেলো।বুকের উপর থেকে পাহাড়সম বোঝা যেন মাত্র নামলো।ওপাশ থেকে প্রিয়ন্তি আরেকবার হ্যালো বলতেই আসিফ রেলগাড়ির মতো ঝমঝম করে বলতে শুরু করলো,
"তোমার ফোনের কি হয়েছিল?কল যায় না কেন?সন্ধ্যা থেকে এ পর্যন্ত কয়বার কল করলাম আমি তোমায়?কোথায় থাকে ফোন আর কোথায় থাকো তুমি?!"
অসিফের ঝাড়ি শুনে প্রিয়ন্তি পাল্টা ঝাড়ি দিল।
"আমাকে কল দিচ্ছিলে মানে?আজকে সূর্য কোন দিক থেকে উঠলো যে মশায় আমাকে এভাবে কল দিচ্ছিলেন? যাক,বোঝা গেল যে আমার অস্তিত্ব তুমি স্বীকার করো।যেহেতু তুমি আমায় কল করেছ,তার মানে জরুরী কিছুই হবে"
"জরুরী দেখেই তো কল দিলাম।কিন্তু তোমার হাবভাবে তো মনে হচ্ছে পৃথিবী খুব ভালোভাবে চলছে,কোনো সমস্যা নেই!"
"মমম?হুম,চলছে তো।কি সমস্যা আবার হলো পৃথিবীতে?"
"আমার বাসায় কি চলে সে নিয়ে কোনো ধারণা আছে তোমার?কি অবস্থায় আছি আমি জানো?"
"মমম?তোমার বাসার কথা আমি কি করে জানব?তুমি জানাও,তবেই না জানব!"
"আশ্চর্য! তুমি কি কিছু খাচ্ছো?!"

প্রিয়ন্তি ওপাশ থেকে জিভ দিয়ে মুখের ভেতর চকাস চকাস শব্দ করে বলল,
"আম্মু গরুর কালো ভূনা করেছে।বিশ্বাস করবে না,এত্ত ইয়াম্মি!একেবারে চেটেপুটে খাওয়ার মতো।আমি এজন্য খাওয়া শেষে আরো দুই টুকরো খাচ্ছিলাম।এ সময় তুমি কল দিলে"
আসিফের মাথার তালু ইতোমধ্যে গরম হয়ে গেছে।প্রিয়ন্তি কি কিছুই জানে না কি হচ্ছে?রেগেমেগে ও বলল,
"এই মেয়ে,এইসব খাবার ফেলো তো!সত্যি করে বলো,তুমি কিচ্ছু জানো না কি হচ্ছে আমার বাসায়?!"
"আশ্চর্য আসিফ!আমাকে না বললে কিভাবে জানব?!"
"আমার আব্বু নাকি তোমার আব্বুর সাথে কথা বলে আগামী শুক্রবার আমাদের বিয়ে পাকা করে এসেছে?"

ওপাশ থেকে প্রিয়ন্তি হাসি দিল।
"এই কথার জন্য তোমার এত পেরেশানি? নিজের বিয়ের কথা একটা মেয়ে জানবে না,তাই কি হয়?"
"তুমি জানো বিয়ের কথা?!আর জেনেও এরকম শান্ত হয়ে বসে আছো?!"
"কেন?!তুমি বিয়েতে রাজী না?!"

প্রিয়ন্তির এই স্বর শুনে আসিফ একেবারে চুপসে যায়।এই স্বরে যখন প্রিয়ন্তি কিছু বলে,তখন বোঝা যায় মেয়েটা সুপার সিরিয়াস এবং এখন কোনো আজেবাজে কথা বলা যাবে না।আসিফ ঢোক গিলল।
"প্রিয়ন্তি,আমরা এখনও অনেক ছোট।এটা কি বিয়ের বয়স নাকি যে বললেই বিয়ে করতে হবে?আমার সামনে এইচএসসি,তোমারও এক বছর পর এসএসসি।এখন আমাদের পড়ালেখা করার বয়স..."
"পড়া লেখার সাথে বিয়ের কি সম্পর্ক?"
"বিয়ে করলে পড়ালেখা হয় নাকি?বিয়ে করলে সংসার করতে করতে পড়ালেখা হবে না!"
"কে বললো তোমাকে এসব ভুয়া কথা? মেয়েরা যদি বিয়ে করে সংসার করে বাচ্চা নিয়ে পড়ালেখা করতে পারে,তাহলে তোমরা ছেলেরা পারবা না কেন?"
"কারণ...কারণ ছেলেরা মেয়ে না,তাই!"
"তার মানে মেয়েরা ভাত খায়,আর তোমরা ঘাস খাও?"
"আজব!এগুলা কি কথা!"
"মেয়েরা বিয়ে করে ক্যারিয়ার গঠন করতে পারে,পিএইচডি করতে পারে। কিন্তু তোমরা ছেলেরা পারো না।ঠিকই তো লুঙ্গি পরার বয়স থেকে প্রেম শুরু করতে পারো,গার্লফ্রেন্ড পালতে পারো।বিয়ের সময় এতো ডান হাত-বাঁ হাত-অজুহাত কোত্থেকে আসে?"

ওপাশে প্রিয়ন্তি রেগে যাচ্ছে।আর প্রিয়ন্তি রেগে যাচ্ছে মানেই আসিফের কোন যুক্তি ওর সামনে দাঁড়াতে পারবে না।আসিফ তাই দ্রুত বলল,
"আচ্ছা থামো।আমরা কাল দেখা করব"
"কাল তো আমাদের সপ্তাহিক মিটিং ডে না!"
"না হোক।তবুও দেখা করব।দুনিয়া জুড়ে এখন জরুরী অবস্থা জারি হয়ে গেছে,আর সে আছে সপ্তাহিক মিটিং ডে নিয়ে!কাল সকাল ১১টায় কলেজ রোডের পার্কে আসবা"

প্রিয়ন্তির কথা না শুনেই আসিফ ফোন কেটে দেয়।জোরে জোরে চুল টানছে আর ভাবছে,প্রিয়ন্তি বিয়ের জন্য ইচ্ছা করে ওর বাবার কাছে এসে সব বলে দেয়নি তো?মোবারকের ধারণা সত্যি নয় তো?ও কি প্রিয়ন্তিকে একটু বেশিই বিশ্বাস করে ফেলছে না?ছয় মাস কি কখনো একটা মানুষকে বোঝার জন্য যথেষ্ট? রাগে দেয়ালে একটা ঘুষি দিল।ভেবেছিলো প্রেম চলছে,চলুক।ভার্সিটিতে ওঠার পর যদি মেয়ে ঠিক থাকে তবে প্রেম চলবে।নাহলে সব বাতিল।আরো প্রেম করা যাবে।অথবা বাবা মায়ের পছন্দেও বিয়ে করা যেতে পারে।অথচ এ কোন চোরাবালিতে পা আটকে গেল?! জীবন তো তামা তামা হয়ে যাবে।

রাতের খাবার খেতে মা ডাকলেও আসিফ আসলো না।ওর বাবা গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
"তোমার ছেলের ক্ষুধা লাগলে নিজেই খেয়ে নিবে।আমার সামনে ছেলের পিছে পিছে খাবার নিয়ে একদম ঘুরবে না।তোমার ছেলে অনেক বড় হয়ে গেছে"
সামনে বসা তার দুই ছেলে মেয়ে- আমীর আর সুবাহ।আমীর তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে আর সুবাহ সপ্তম শ্রেণিতে।ছেলে মেয়েরা যে সব অকালপক্ক হয়ে যায় আজকাল,তার প্রমাণ দিতেই যেন আমীর বলে ওঠে,
"ভাইয়া বড় হয়ে গেছে তাই এখন আর আম্মু ওকে খাইয়ে দিবে না,নতুন ভাবী এসে খাইয়ে দিবে।তাই না আম্মু?"

রাফিদা খাতুন ছোট ছেলের দিকে তাকিয়ে ইশারা করেন কথা না বলতে।আর সুবাহ ভাইয়ের পায়ে একটা লাথি মারে।আমীর ভ্রু কুঁচকে বলে,
"আব্বু,আমাকে ও পায়ে লাথি দেয়!"
ইসমাইল হোসেন ছেলে মেয়ে দুজনের দিকে তাকায়। তারপর পাশে বসা স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলেন,
"ছোট গুলা যদি পেকে পেকে এই হাল হয়,তাহলে বড় গুলা কি হয়েছে বুঝছ?পেকে পচন ধরে গেছে!ফল বেশি পাকলে খেয়ে ফেলতে হয়।তোমার ছেলের ঐদিন চলে এসেছে!আমি যা সিদ্ধান্ত নিয়েছি,ঠিকই আছে!"
রাফিদা মাথা নাড়ান।
"আমিও একমত।ছেলে মেয়ে আজকাল একটু তাড়াতাড়িই বড় হয়ে যায়।কি আর করার?আমরা তো জন্ম দিয়ে ঠেকে গেছি এদের কাছে!"
সুবাহ মাথা নাড়তে থাকে।এই শুরু হলো ওর বাবা মায়ের আহাজারি। এখন এইসব বলতেই থাকবে উনারা যতক্ষণ না মনের সাধ মেটে।কোন দুঃখে যে ওর বড় ভাই এরকম একটা গাধামি করতে গেল।কে বলেছিল ওকে প্রেম করতে?তাও আবার করলি যখন, লুকিয়ে করবি না?ইজ্জত আর থাকবে না।স্কুলে গেলে সবাই ওকে পাক্নার বোন ডাকবে।ওর ভাই তো বেশিই পাকনা হয়ে গেছে!

খাওয়া শেষে ভাইয়ের ঘরে গিয়ে দেখে সে কানে হেডফোন লাগিয়ে এমপিথ্রি প্লেয়ারে গান শুনছে।চোখ বন্ধ করে মাটিতে বসে বিছানায় মাথা হেলিয়ে রেখেছে।সুবাহ আস্তে করে চেয়ার টেনে নিয়ে বসল।
"ভাইয়া,শুনতে পাচ্ছো?"
আসিফ চোখ খুলে ছোট বোনকে ইশারা করল চলে যেতে।সুবাহ উল্টো কান থেকে হেডফোন খুলে ফেলতে ইশারা করল।আসিফ হেডফোন কান থেকে সরাতেই সুবাহ বলল,
"ভাইয়া,তুমি আব্বুর কাছে যাও।আব্বুকে বলো আব্বু যাতে এমন না করে।আমাদের মুখ দেখাতে পারব না!স্কুলে আমি গেলেই আমাকে সবাই ভেঙ্গাবে।তোমাকেও কত কিছু বলবে।প্রিয়ন্তি আপু...ভালোই...সুন্দর  আছে,কিন্তু..."
"তুই কি করে জানলি?"
সুবাহ ওর কমপিউটারের দিকে ইশারা করল।আসিফ চোখ লাল করে বলল,
"তুই আমার কমপিইটারের ফাইল ঘাঁটছিস?!"

সুবাহর চেহারা ভয়ে নীল হয়ে গেছে।তোতলাতে তোতলাতে বলল,
"কা কা কাজ ছিল একটু।ই ই ইচ্ছা করে ধরিনি,ভু ভুল হয়ে গেছে"
"আব্বুকে তুই বলছিস?!"
আসিফের চাপা হুংকারে সুবাহ চেয়ার থেকে নেমে এসে ভাইয়ের হাঁটুতে হাত রেখে বলল,
"কসম ভাইয়া,আল্লাহর কসম,আমি কিচ্ছু বলি নাই!আমি আব্বু আম্মু কাউকে কিচ্ছু বলি নাই!"
"তাইলে আব্বু কিভাবে জানলো?"
"আমি জানি না ভাইয়া।কিন্তু আমি কিচ্ছু বলি নাই"

আসিফ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।ওর বাবা কিভাবে জানলো সেটা জানলে অন্তত ঘটনাটা ধামাচাপা দেয়া যেত।প্রেম করতে গিয়ে ওর যে ইজ্জতের বেইজ্জতি হবে,সেটা কে জানত?সুবাহ ওর হাঁটুতে হালকা নাড়া দিল।
"ভাইয়া,আব্বুকে বুঝিয়ে বলো যে তুমি আসলে তেমন কিছুই করো নি।এখানে বিয়ে দেয়ার মতো কিছু হয় নাই"
"আমার বলে লাভ কি?প্রিয়ন্তি তো বিয়ের জন্য তৈরি হয়ে বসে আছে।ওর কোনো আপত্তি নেই।কে জানে,ওই আব্বুকে ফুসলে দিল কিনা! আব্বুর কানে নিশ্চিত সিরিয়াস কিছু একটা গেছে।তানাহলে আমাকে বিয়ে দেয়ার মতো কাজ আব্বু কখনোই করবে না"

সুবাহ শুকনো মুখে বলে,
"আপুকে একবার কল দিবা?"
"কাকে?সারাহ আপু?আমাকে কুত্তা কামড়ালেও না! আব্বুর ঝাড়ির পর আমাকে কল দিয়ে বলেছে বিয়ের জন্য তৈরি হতে।ওর ছেলে নাকি আমার বিয়ে খাওয়ার জন্য পাগল হয়ে আছে।এইরকম বড় বোনের সাথে আবার কি কথা? সব দেখতেছি ঘরের শত্রু বিভীষণ!"
সুবাহ দাঁত দিয়ে নখ খুটতে খুটতে বলল,
"আপু তো হচ্ছে লেজকাটা শেয়াল।সে এখন তোমার লেজ তো কাটবেই।কিন্তু কলেজে থাকতে বিয়ে?আল্লাহ,সব তো শেষ!"

আসিফ উঠে দাঁড়ালো।
"আমি আব্বুর সাথে কথা বলে আসি।আব্বুকে বুঝাতে হবেই হবে।এইসব প্রহসন মেনে নেয়া যায় না"
সুবাহ পেছন থেকে বললো,
"বেস্ট অফ লাক ভাইয়া!"

আসিফ বাবা মায়ের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে মনে মনে নিজেকে প্রস্তুত করছে।বড় একটা নিঃশ্বাস নিয়ে ঘরে পা রাখলো।ওর বাবা বিছানায় শোয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন,আর মা রান্নাঘরে। আসিফকে দেখে ওর বাবা ভ্রু কুঁচকে তাকালেন।
"কি বলতে আসছিস?"
আসিফ এক পা এক পা করে এগিয়ে এসে বাবার সামনে দাঁড়ায়।
"আব্বু,বিশ্বাস করো,আমি ওরকম কিছু করি নি"
"কি রকম কিছু?"
"মানে আমি ওর সাথে এদিক ওদিক ঘুরেছি শুধু।সিরিয়াস কিছু না।আসলে সবাই-ই তো এভাবে ঘুরে,এজন্য...। আব্বু,ভুল হয়ে গেছে।আমি ওকে বিয়ে করব,সংসার করব,এরকম কিছু ভেবে প্রেম জাতীয় কিছু করিনি।এমন কি ওকে আমি পছন্দ করি,এই জাতীয় কিছুও এখনও বলি নি!আব্বু,আব্বু?প্লিজ?!আমি কান ধরতেছি।এই ভুল আর হবে না,জীবনেও না।আমি জীবনেও আর প্রেম করব না!প্রেম কেন,বিয়েও করব না!আব্বু,এরকম রাগ হয়ো না?"

ইসমাইল সাহেব বললেন,
"তুই আর কোনো প্রেম যেন না করিস,সেজন্যই বিয়ে দিচ্ছি।আর এই বিয়ের পর তোকে আর কোনো বিয়েও করতে হবে না।তাই তুই নিশ্চিন্ত থাক।যা এবার,পড়াশোনা কর।আর শুক্রবারে বিয়ে হবে,সেই মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখ।"
আসিফের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে।উদ্ধত কন্ঠে বলল,
"এইসব ফালতু কথা গুলো তোমাকে প্রিয়ন্তি বলছে,না?!"
"প্রিয়ন্তি?রাব্বানী সাহেবের মেয়ের নাম? সুন্দর নাম,মেয়েটার মতোই মিষ্টি"
"তুমি ওর নাম পর্যন্ত জানো না?!"
"বিয়ে করবি তুই,জানবি তুই,আমার কি?আমার জানা দিয়ে কি আসে যায়?!"
"দেখো আব্বু,প্রিয়ন্তি যা বলছে,সব মিথ্যা।এগুলার কোনো ভিত্তি নাই।একেবারেই নাই!আর ওর কথা শুনে তুমি আমাকে বিয়ে দিতে পারো না!"

ইসমাইল সাহেব আসিফকে থামিয়ে দেন।
"প্রিয়ন্তি আমাকে কিচ্ছু বলে নাই।ওরে ডেকে আমি শুধু জিজ্ঞেস করছি,ও তোকে পছন্দ করে কিনা,বিয়ে করবে কিনা।ও মাথা নেড়ে সম্মতি দিছে।আমাকে তো সব কথা প্রিয়ন্তি বলে নাই,বলছিস তুই!"
"আমি?!"
আসিফ হাঁ করে আছে।ইসমাইল সাহেব কড়া গলায় বলেন,
"মাথার মধ্যে তো গোবর নিয়ে ঘুরিস।এই গোবর নিয়ে কিভাবে এসএসসিতে জিপিএ ৫ পাইছিস?আমার তো সন্দেহ আছে তোর মাথায় ব্রেইন নাকি গোবর দিছে আল্লাহ! রাতের বেলা যে বারান্দায় দাঁড়ায় দাঁড়ায় প্রেম করিস,তোর বারান্দা যে আমার জানালার পাশে সেই খেয়াল আছে?আমি এক দিন না,দুই সপ্তাহ আগে থেকে সব শুনতেছি! অসভ্য পোলাপান! বিয়ের আগে প্রেমে মজতে পারো,আর বিয়ে করাইলেই পাপ,না?চোখের সামনে থেকে দূর হ অসভ্য!আকাম করছিস,বিয়ে এখন তোকে করাবই আমি!"

চলবে...

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen2U.Pro