১ম পর্ব

Màu nền
Font chữ
Font size
Chiều cao dòng

#অপরিণত_নিকাহনামা
লেখনীতে, #AbiarMaria

#১

"আমার বিয়ে?! আমি কক্ষনো বিয়ে করব না!"
ইসমাইল হোসেন দাঁড়িয়ে ছেলের গালে ঠাস করে এক চড় বসিয়ে দেন।
"বিয়ে না করলে প্রেম কেন করলি?রঙ ঢঙের জন্য?! আজকাল তোমাদের জেনারেশনের কাছে প্রেম করা একটা ফ্যাশন হয়ে গেছে, এজন্য? প্রেম যেহেতু করেছিস,বিয়েও করতে হবে তোকে!"

আসিফ গালে হাত দিয়ে চেপে ধরে তব্দা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ওর বাবা বিয়ের জন্য ওর গালে চড় দিল,এটা ওর কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না।ওর মা রাফিদা খাতুন উঠে ছেলের কাঁধে হাত রেখে বলেন,
"দেখ বাবা,আমিও তোর বাবার সাথে একমত।প্রেম যেহেতু করেছিস,বিয়েটাও করতে হবে।এসব আমরা আমাদের পরিবারে কখনোই মানবো না।এসব চরিত্রহীন ছেলেরা করে! তুই কি চরিত্রহীন বাবা? তাছাড়া মেয়েটার কি হবে ভেবেছিস? বিয়ে ছাড়া এখন তো আর কোনো উপায় নেই!"
আসিফ কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে উঠল,
"কিন্তু আম্মু,তোমরা আমাকে ভুল বুঝছ!তোমরা যেভাবে ভাবছ,বিষয়টা ততটা গুরুতর না!বিশ্বাস হয় না?তুমি প্রিয়ন্তির সাথে কথা বলে দেখো?!"
"প্রিয়ন্তির বাবার সাথে আমি কথা বলেই সব পাকা করে এসেছি।ওদেরও একই মত।এই বিয়ে সামনের শুক্রবার বাদ জুমআ হবে"
"কিন্তু আব্বু..."
"কোনো কিন্তু নাই এখানে।প্রেম করার সময়েই তোমার মাথায় রাখার দরকার ছিল যে তোমার বাবা মায়ের কানে গেলে কথা গুলো কেমন রূপ নিবে!তুমি তোমার কাজ দিয়ে আমাদের মাথা নিচু করেছ।আল্লাহর কাছে এখন কি জবাব দিব?! আল্লাহ বলবে না যে,ছেলে উপযুক্ত হয়ে গেছে,অথচ আমিই টের পাইনি?বিয়ে দেই নি?আর এইজন্যই বাবা মায়ের অগোচরে গিয়ে... ছিঃ ছিঃ ছিঃ। রাব্বানী সাহেব আর আমার দুইজনের মুখেই তোরা চুনকালী মাখছিস।এখন বিয়ে তোদেরকে করতেই হবে! আসিফের মা, একেবারে যাদের না বললেই না,তাদের জানাও।আমি মসজিদে নামায পড়তে গেলাম!"

আসিফ ড্রইংরুমে একা দাঁড়িয়ে আছে।আর ওর মা দ্রুত শোবার ঘরের দিকে পা চালালেন।সবাইকে বুঝিয়ে বলতে হবে তো ছেলের বিয়ে যে।তার উপর ওর বড় মেয়েকে জামাই সহ আসতে বলতে হবে তো।তানাহলে জামাই মানুষ ছুটি কি করে ম্যানেজ করবে?

আসিফ গালে হাত দিয়েই নিজের ঘরে গিয়ে ধুপ করে বিছানায় বসে পড়ে।ওর মুখখানা এখনো এক সেন্টিমিটারের মতো হাঁ হয়ে আছে।ঢাকা শহরের মশাগুলো সুযোগ পেলেই যেকোনো সময় ঢুকে যেতে পারে।সেসব নিয়ে আসিফের মাথাব্যথা নেই।ও দুশ্চিন্তায় আছে সামনের দিনগুলো নিয়ে।এসময় ওর ফোন বেজে উঠলো।পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে মোবারক,ওর জানের দোস্ত।মোবারককে কি সব খুলে বলা উচিত? হ্যাঁ, উচিত। তানাহলে সামনের সময়গুলোয় উচিত-অনুচিতের মাঝে ও কিছুতেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না।ফোনটা রিসিভ করতেই মোবারক বিরক্তি প্রকাশ করে বলল,
"এই শালা।তোর না আধাঘন্টার মধ্যে চায়ের দোকানে আসার কথা?তুই এক ঘন্টা লাগাইতেছিস কেন মাইয়া মাইনষের মতো,অ্যা? শোন,আসার সময় ফিজিক্স প্র‍্যাকটিক্যাল খাতাটা নিয়া আসিস তো।আমি মামা এইগুলা খালি তোরটা দেইখা কপি মারমু!"
"মামা,আমার বিয়া!"
ওপাশে মোবারক খানিকটা ভীমড়ি খায়।
"ঐ মিয়া,গাঞ্জা গুঞ্জা খাইছোনি? বিয়া মানে?ও,বুঝছি।ঘুমেরতে উঠছস প্রিয়ন্তিরে স্বপ্নে দেইখা,না?সমস্যা নাই,বিয়ে শাদী একদিন না একদিন তো করবিই।তয় এখন এইডি ভাইবা টেস্ট পরীক্ষা খারাপ করিস না।মাইয়া মানুষ খুব খারাপ জিনিস।এই পোলা গুলার লগে প্রেম কইরা জীবনটা নারিকেলের ছোবড়া বানায়া যায়গা।এইসব বিয়া টিয়া থুইয়া কামের কাম কর..."
"আব্বে হালা,আমার সত্যি সত্যি বিয়া!বাপে একটু আগে থাপ্পড় দিসে আমি বিয়া করমু না বলছি দেইখা! তুই কি মনে করছস আমি স্বপ্ন দেখি?ধুর!"

মোবারক দ্রুত একপাশে চেপে এসে গলা নিচু করে ফিসফিসে কন্ঠে বলে,
"মামা,এইটা তুমি কি কইলা!তোমার বিয়া?!কার লগে?!"
"আর কার লগে!প্রিয়ন্তি!"
ওক করে মোবারকের গলা দিয়ে একটা অনিচ্ছাকৃত তৈরি করা শব্দ বেরিয়ে আসে।তারপর সে হেঁচকি তুলতে থাকে।ওপাশ থেকে আসিফ বলে,
"ওই!তুই ঠিক আছিস?"
মোবারক কোনোমতে বলে,
"মামা,চায়ের দোকানে আসো।সব আমার মাথার উপর দিয়া গ্যাছে!"

আধাঘন্টার মাঝে আসিফ মোবারকের সামনে এসে হাজির।একটু পর পর সে গালে হাত দিয়ে হালকা চুলকোচ্ছে।মোবারক ওর হাত ধরে নামিয়ে চায়ের দোকানের কমলা আলোয় গাল দেখে।
"আংকেল কি বেশি জোরে মারল?"
"বাপদের গায়ে কেমন জোর থাকে জানিস না? তোর বাপ যখন মারে,তখন কি আস্তে আস্তে হাত বুলায়?"
আসিফের কথা শুনে মোবারকের পিঠ চুলকোতে শুরু করেছে।ঘুম থেকে দেরী করে উঠার জন্য ওর বাবার হাতের কষা চড় পিঠের উপর হরহামেশাই পড়ে।বন্ধুর কথা শুনে মোবারক দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

"আমার কথা বাদ দে ভাই,তোর ঘটনা বল"
"তার আগে কসম কাট যে কারো সাথে এইসব কথা বলবি না? মানে একেবারেই কারো সাথে না?"
মোবারক মুখের চেইন আটকে দেবার ভঙ্গি করে,সেই সাথে বুকের বাঁপাশে ক্রস চিহ্ন আঁকে হাত দিয়ে।আসিফ নার্ভাস ভঙ্গিতে চুল একবার হাত চালিয়ে বলে,
"আব্বু কিভাবে কিভাবে যেন প্রিয়ন্তি আর আমার ব্যাপারটা টের পেয়ে গেছে।আমাকে এসব নিয়ে কিছু না জিজ্ঞাসা করেই একেবারে প্রিয়ন্তিদের বাড়িতে গিয়ে হাজির।দুইজনে বসে শলাপরামর্শ আর হিসেব নিকেশ করে বের করল,তাদের ছেলে মেয়েরা যেহেতু প্রেম করা শুরু করেছে,তার মানে তাদের ছেলে মেয়ে বড় হয়ে গেছে।যেহেতু বড় হয়ে গেছে,সেহেতু ওদের ধরে বিয়ে দিয়ে দিতে হবে! আব্বুরও প্রিয়ন্তির আব্বু,পরিবার পছন্দ হয়েছে; উনাদেরও আমাদের সব পছন্দ হয়েছে।এখন ওরা আমাদের বিয়ে দিলেই বাঁচে!"

মোবারক মাথা চুলকে চুলকে বলল,
"আজীবন শুনলাম বাপ মা পোলামাইয়ার পিরিতি দেখলে পিডায়া ঘরে ফালায় রাখে,হাত পা ভাইঙ্গালায়।আর মাইয়া গুলারে ধইরা বিয়া দিয়া দেয়।কিন্তু যারা প্রেম করে তাদের ধইরা বিয়া দেয়,এই কথা জিন্দেগীতেও শুনি নাই!"
এরপর খুশি খুশি হয়ে বলে,
"মামা,তোমার রাজ কপাল!একটা প্রেম করতে শুরু করলা,আর বাপ মা বিয়া দিতাছে!কয়জন নিজের গার্লফ্রেন্ডরে বিয়া করে কও? তুমি মামা বিয়া কইরা লাও।হুদাই প্যাচাল পাইড়া বাপের হাতে মাইর খাইও না।আমি তোমার যায়গায় হইলে নাচতে নাচতে বিয়া করতাম!"

আসিফ দাঁতে দাঁত পিষে বলে,
"শালা,মজা নিচ্ছ,না?প্রেম আজকে করলাম।না টিকলে কালকে শেষ।বিয়ার মানে বুঝো?সারা জীবনের জন্য তাকে ঘাড়ে নেয়া লাগব! মাত্র ১৮ তে পা দিছি,আর এখন বউ নিয়া জিন্দেগী শেষ করমু,না?কালকে বউ বলব,ওগো!আমার বাচ্চা হবে! তারপর খালি ওগো পিছে দৌড়াও! আর টাকা দিব কে?তোর ঠাকুর?!"
মোবারক সর্বোচ্চ সংখ্যক দন্ত বিকশিত করে শব্দ করে হাসতে থাকে।ওদিকে আসিফের মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে।ছেলেদের এই বয়সে কেউ বিয়ে দেয়?মোবারকে পিঠে চাপড় দিয়ে বলে,
"তোমাদের কাহিনী জানি কেমনে শুরু হইছিল মামা?একটু শুরু থেইকা কও!"

ঘটনার শুরু হয় ছয় মাস আগে।আসিফের গুড লুকিং এর জন্য কলেজে ওর বেশ সুনাম আছে।ফর্সা চামড়া,মাথাভর্তি স্ট্রেইট চুল যার কিছু কপালে উপর পড়ে থাকে,আর কিছু দাঁড় করানো।হাসলে গালে একটা টোল পড়বে।সবচেয়ে নজর কাড়া হলো ওর ঠোঁটের উপর তিল।৫ ফিট ৯ ইঞ্চি উচ্চতার মাঝারি গড়নের ছেলেটা যখন এক কাঁধে কলেজের ব্যাগ ঝুলিয়ে চোখে রোদচশমা লাগিয়ে হেঁটে যায়,সিনিয়র মেয়েরাও না তাকিয়ে পারে না।কয়েকজন ওর নাম প্রিন্সও দিয়েছে।আর এই খেতাব প্রাপ্ত আসিফ খুব সহজেই কলেজে পা রাখার অল্প সময়ের মাঝে দুটো প্রেম করে ফেলেছে।প্রথমজন ক্লাসমেট ছিল।মেয়েটা অতিরিক্ত জেলাসি দেখাতো।ছেলে মেয়ে কারো সাথে বেশি সময় কাটাতে দেখলেই ক্ষেপে যেতো।আসিফের মনে হলো,এই মেয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করছে।তাই প্রথম মাসেই বাতিল।

দ্বিতীয়জন এর সাথে পরিচয় প্রথম বর্ষের শেষ দিকে।ক্যামিস্ট্রি ল্যাব থেকে বের হওয়ার সময় জুনিয়র ব্যাচের ভীড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে।মেয়েটা শুধু সুন্দর ছিল,তা না; নিজের যত্ন নিতো।চুলের আধো খোলা লম্বা বেণী কাঁধের এক পাশে ফেলে রেখেছিল আর মুখের উপর কিছু অবাধ্য খোলা চুল ঘুরোঘুরি করছিল বাতাসে।মেয়েটার আনমনে জানালা দিয়ে তাকানো দেখে আসিফের এক দেখাতেই ভালো লেগে যায়।পরদিন ডেকে এনে র‍্যাগ দেয়ার নাম করে ওর ব্যক্তিগত প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নেয়।তারপর থেকে শুরু হয় প্রেম।কিন্তু দুই সপ্তাহের মাঝেই ওর মনে হয়,মেয়েটা একটা ইডিয়ট। যেখানে অন্য মেয়ে ক বললে কলা বুঝে ফেলে,এই মেয়েকে কলা বললেও বুঝে না।কলা এঁকে দেখাতে হয়!আর একজন ভাল ছাত্র কেন একটা গাধা মেয়ের পিছে ঘুরবে?এর সাথে যায়ই না! তাই এই মেয়েও বাতিল।

এরপর চারমাস ব্রেক ছিল।চার মাস পর আসিফের সাথে শপিং মলে দেখা হয় প্রিয়ন্তির।মেয়েটা দেখতে সত্যিই সুন্দর। সাদা রঙের ফ্লোরাল প্রিন্টের থ্রি-পিস আর মাথায় সাদা রঙের ওড়না আলতো করে দেয়ার যার ফাঁক গলে।কিছু চুল বেরিয়ে মুখের আশেপাশে ছড়িয়ে আছে।চোখ জোড়া বড় বড়,ঘন পাপড়ি,তুলি দিয়ে আঁকা ভ্রু,থুতনির একপাশে ঠোঁটের নিচ দিকে তিল আর ফোলা ফোলা ঠোঁট।সেই সাথে কোমর সমান লম্বা চুল আর ফর্সা গোল মুখ।তবে আসিফের সবচাইতে ভালো লাগে ওর বুদ্ধিদীপ্ত চোখ আর কথা। ও যখন ওর বন্ধু রাকিবকে নিয়ে একটা ফোনের দোকানে ঢুকেছিল,তখন প্রিয়ন্তি ওর চাচাতো দুই বোনকে নিয়ে সেখানে আসে।ফোন নিয়ে প্রিয়ন্তির আইডিয়া শুনে আসিফের মনে হয়,এই মেয়ের আইকিউ লেভেল খুব ভালো।ব্যাপারটা ঝালিয়ে নিতে আসিফ বলে,
"এক্সকিউজ মি,ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড,একটা সাহায্য করা যাবে?"
প্রিয়ন্তি ওর দিকে ফিরে স্বাভাবিকভাবে বলে,
"কি সাহায্য?"
"আমার ফোনের ক্যামেরাটা কাজ করছে না।বেশ কয়েকবার ছবি তোলার চেষ্টা করলাম,হচ্ছে না।একটু দেখতে পারবেন?"
প্রিয়ন্তি ওর ফোনের দেখে বলে,
"ম্যামোরি কার্ড আছে?"
আসিফ মাথা নাড়ে।
"এইসব ফিচার ফোনের ইন্টারনাল ম্যামোরি থাকে না।একটা ম্যামোরি কার্ড কিনে নিন"

আসিফ সব বুঝে গেছে এমন একটা ভাব করে।প্রিয়ন্তি এবার ওকে ডাক দেয়।
"আপনি খুব ভালো করেই জানেন যে ম্যামোরি কার্ডের জন্য ছবি উঠছে না কারণ ক্যামেরাতে ক্লিক করলেই এখানে ম্যামোরি কার্ড ব্যবহার করতে বলে।হয় আপনি একজন মূর্খ,পড়ালেখা জানেন না।অথবা আপনি সব জেনেও ইচ্ছা করে আমার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এই প্রশ্ন করেছেন।তবে আমার দ্বিতীয় ধারণাটাই বোধহয় সত্যি।তাই না?"

আসিফ হেসে ফেলে।
"আমি আসিফ।এবার ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।আপনি?"
"প্রিয়ন্তি,নবম শ্রেণি"
"নামটা আপনার মতোই সুন্দর"
"তবে আপনার লাইন মারাটা আপনার মতো সুন্দর হতে পারলো না,সস্ত হয়ে গেল!"
আসিফ হেসে দেয়।ওর হাসির সাথে সাথে প্রিয়ন্তিও হাসে।আর সেই হাসিতে প্রথমবার আসিফের মনে হয় মেয়েটা ওর মনের মতোই।

ধীরে ধীরে ওদের মাঝে কথা বলা শুরু হয়।বাটন ফোন তখন দুজনের হাতেই ছিল।রাত জেগে বারান্দায় বসে বসে কথা বলার সময় ওরা ফোনের মধ্য দিয়ে নিজেদের একটু একটু করে আবিষ্কার করতে শুরু করে। সপ্তাহে একদিন ওরা দেখা করত।হাত ধরাধরি জাতীয় ব্যাপার না থাকলেও প্রিয়ন্তি সবসময় আসিফের উপর অধিকার খাটায়।ও কি পরবে,কি খাবে,কেন খাবে না,কেন করবে না,এসব নিয়ে শক্ত যুক্তি দেখাতো।প্রথম প্রেমের মতো প্রিয়ন্তি জেলাস না হলেও অনেক ডমিনেটিং।আসিফ সেটা টের পেলেও মিষ্টি অত্যাচার ভেবে মেনে নিত।তাছাড়া ওর চাইতে প্রিয়ন্তি তিন বছরের ছোট হলেও বয়সের দিকে থেকে মেয়েটা যথেষ্ট ম্যাচিউর।ও উল্টোপাল্টা কোনো পরামর্শ দেয় না।তাই আসিফ ধীরে ধীরে প্রিয়ন্তির প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে।তাছাড়া মেয়েটি প্রচন্ড বুদ্ধিমতি।হুট করে কোন সিদ্ধান্ত নেয় না।

অথচ প্রিয়ন্তির বাবা-মা আর আসিফের বাবা-মা বিয়ে ঠিক করে ফেলার মতো সিদ্ধান্ত নিল,আর প্রিয়ন্তির এক ঘন্টা ধরে কোন খবর নেই!মেয়েটা কি জানে না এসব?কিভাবে এমন একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারে?সামনে আসিফের টেস্ট আর প্রিয়ন্তির বার্ষিক পরীক্ষা। এমন জরুরী মুহূর্তে ওদের বাড়ির গার্জিয়ানদের কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?আসিফ কিছুই বুঝতে পারছে না।কয়েকবার ডায়াল করেও প্রিয়ন্তির নাম্বার বন্ধ পেয়েছে।মোবারকের পাশে বসে আরেকবার চেষ্টা করল।সেই একই অপারেটরের কথা শোনা যাচ্ছে।মোবারকের দিকে ফিরে বলল,
"সবচেয়ে মজার জিনিস কি জানিস?"
"কি?"
"এখন পর্যন্ত আমি প্রিয়ন্তিকে প্রপোজই করি নি!"
"কি?!"
মোবারক তড়াক করে দাঁড়িয়ে গেল।
"মামা,তোরা কি পাগল?!"
"পাগলের চেয়ে বেশি কিছু ভাই।ওরে ভাল্লাগে ঠিক,মেয়েটাও ভালো।কিন্তু তার মানে কি বাপ মা বিয়া দিয়া দিব?!"
মোবারক বলে,
"মামা!মাইয়া আবার কোন চাল চালে নাই তো?"
"কি চাল চালব?"
"তোরে ফাঁসায়া বিয়া করার চাল!"

আসিফ হাত নেড়ে পুরোটা উড়িয়ে দেয়।
"আমাকে ফাঁসানোর কি আছে?আমি কি জমিদারের পোলা যে আমাকে ফাঁসাইলে অনেক টাকা পয়সা পাইব? আমার আরেক ভাই আর বোনও আছে।বাপেরও আহামরি কিছুই নাই।আমি তো ব্যাডা নিজেই বাচ্চা! আরে পাগলেও নিজের ভালো বুঝে।আর এই মেয়ে তো অনেক বুঝে! নাহ রে ভাই,বিশাল গ্যাঞ্জাম লাগতেছে।আল্লাহ জানে আমার কপালে কি আছে!"

সিগারেটে কয়েকটা টান দিয়ে আসিফ বাসার দিকে রওনা দেয়।মনে হচ্ছে ভবিষ্যত অন্ধকার।যখন ওর চুটিয়ে মেয়েদের পটনোর কথা,কিংবা ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবার কথা,পড়ালেখা করতে করতে বই খাতার সেলাই ছুটিয়ে ফেলার কথা,ঠিক সে সময় ওর বাবা ছেলেকে বিয়ে দেয়ার কথা ভাবছে।বিয়ে করে বউকে খাওয়াবে কি?যে বয়সে নিজের আন্ডারগার্মেন্টস নিজেই ধোয় না,মাঝে মাঝে মা ধুয়ে দেয়,সেই বয়সে ও করবে বিয়ে!দেশে আইনত বিয়ের বয়স ছেলেদের জন্য ২১।ওর বাবা মা অবশ্য ওকে আগে আগেই স্কুলে পাঠিয়ে দিয়েছে।ওর সহপাঠী বেশিরভাগের বয়সই ১৯,আর ওর ১৮ হলো কিছুদিন আগে।আর এখনই...!

আসিফ ভাবতে পারছে না।সিঁড়ি বেয়ে তিন তলায় এসে দরজায় বেল বাজালো।ওর মা দরজা খুলে বললেন,
"সিগারেট খেয়ে এখন বাসায় আসছো ভালো কথা,বিয়ের পর বৌমার কাছ থেকে এসব অভিযোগ না শুনতে হয়!"
"আম্মু! তোমরা কি এক সেকেন্ডের জন্যও ভুলতে দিবা যে আমার বিয়ে হবে?!"
"না।তোকে প্রস্তুত থাকতে হবে।এইসব ছাইপাঁশ খাওয়া ছাড়"
"আমি সব খাবো এখন থেকে।আর বিয়েও করব না।দেখি তোমরা কিভাবে আমাকে বিয়ে দাও!"

চিৎকার করে এসব বলে আসিফ নিজের ঘরে ঢুকে দরজা আটকে দেয়।রাফিদা খাতুন ছেলের রিএকশন দেখে একটুও বিরক্ত কিংবা রাগ হলেন না।বিড়বিড়িয়ে বললেন,
"ঢং যতই করিস,বিয়ে তোকে দিবই।প্রেম করার সময় ভাবার দরকার ছিল তোর বাপ কেমন মানুষ। এখন আমিও তার বিরুদ্ধে যাবো না!"

চলবে...

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen2U.Pro