পর্ব ৩১

Màu nền
Font chữ
Font size
Chiều cao dòng

#অপরিণত_নিকাহনামা
লেখা- #AbiarMaria

#৩১

রাব্বানী সাহেব মেয়েকে এনে নিজের পাশে বসিয়ে খাওয়ালেন। খাওয়া দাওয়ার পরে মেয়ের ঘরে গিয়ে মাথায় হাত রেখে বললেন,
"এত চিন্তার কিছু নেই মা। আমি আছি। তোর এরপরের পরীক্ষা কবে?"
"আগামীকাল"
"তুমি কি অন্য কোথাও থেকে পরীক্ষা দিতে পারবে থেকে পরীক্ষা দিতে পারবে?"
"অন্য কোথাও মানে? কোত্থেকে পরীক্ষা দিব?"
"দেখা যাক। এই বাসায় কিছুদিন না থেকে সমস্যার সমাধান হয় কিনা দেখি"

রাব্বানী সাহেব ঠিক করেন মেয়েকে তার বড় ভাবীর কাছে রাখবেন। সুন্দরী মেয়ে যার ঘরে আছে, সে বোঝে তার কত চিন্তা। এই সমাজে সুন্দরী কন্যাদের মা বাবাদের ঘুম ভালো হয় না। মনে হয়, এই বুঝি কোনো ছেলে পিছে লাগলো, এই বুঝি মেয়ে কোথাও প্রেম করল, এই বুঝি মেয়ের জীবনে কোনো সমস্যা এসে হাজির হলো। এই সমাজে সুন্দরী মেয়েরা কখনোই নিরাপদ না। তোমার শারীরিক সৌন্দর্য যত বেশি, তোমার নিরাপত্তা তত কম। রাব্বানী সাহেব মেয়ের জন্য দুশ্চিন্তা মনে চেপে ঘুমুতে যান।

পরদিন সকালে প্রিয়ন্তীর বাবা নিজেই প্রিয়ন্তীকে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেন। সকালে রাব্বানী সাহেবের তৈরি হতো দেখে প্রিয়ন্তী এবং প্রিয়ন্তীর মা দুজনে অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। প্রিয়ন্তীর মা প্রশ্ন করে,
"কি ব্যাপার তুমি আবার তৈরি হয়ে এখন কোথায় যাচ্ছো? আফিসে কি এত সকালে যাবে?"
" না অফিসে এখন আমি যাব না। প্রিয়ান্তিকে আগে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে আসবো তারপরে আমি অফিসে যাব"
"আব্বু, তুমি আমাকে নিয়ে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে আসবে?"
" হ্যাঁ, এখন থেকে কিছুদিন আমি তোকে স্কুলে নিয়ে যাবো"
প্রিয়ন্তির মা স্বামীর কথা শুনে চুপ করে থাকেন
তিনি একবার মেয়ের মুখের দিকে তাকান, একবার স্বামীর মুখের দিকে তাকান। মেয়ে মাথা নিচু করে চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে আর মেয়ের বাবার মুখ দেখেও তেমন কিছু বোঝা যাচ্ছে না। প্রিয়ন্তির মা ভাবেন, এমন কি হলো যে উনি আজকে মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যাচ্ছে? নানা রকম চিন্তা মাথায় আসলে ও প্রিয়ন্তীর মা কোন কথাই বললেন না। চুপচাপ থাকলেন।

প্রিয়ন্তির বাবা মেয়েকে স্কুলে দিয়ে অফিসে চলে আসেন। অফিসে এসে তার বড় ভাবীকে কল দেন। উনার কাছে আপাতত প্রিয়ন্তিকে পাঠিয়ে নিশ্চিত থাকতে চান।

বাসায় আসার পর প্রিয়ন্তিকে ওর মা প্রশ্ন করে,
"কি হয়েছে তোর এই বাসায়? এখানে কি পড়ালেখা হয় না?"
প্রিয়ন্তি যেন আকাশ থেকে পড়ল।
"মানে? পড়ালেখা হবে না কেন?!"
"তাহলে তোর আব্বু তোকে তোর চাচীর বাসায় পাঠাচ্ছে কেন?"
প্রিয়ন্তি মাথা নেড়ে জানায় সে জানে না। মাত্র স্কুলে থেকে এসেছে বলে আয়শা আর মেয়েকে কিছু বললেন না।

সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার পর রাব্বানী সাহেব হাত মুখ ধুয়ে মেয়েকে ডাকেন। মেয়ে ঘরে আসতেই তিনি ঘোষণার সুরে বলেন,
"তোমার চাচীর সাথে কথা হয়েছে আমার। তুমি বাকি পরীক্ষাগুলো চাচীর ওখানেই থাকবে"
"কিন্তু কেন?" আয়েশা প্রশ্ন করেন। স্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে বলেন,
"আমি বলেছি তাই"
"এখানে তোমার মেয়ের কি সমস্যা?"
রাব্বানীর সাহেব একবার তার স্ত্রীর চেহারা দিকে তাকান তারপর তার মেয়ের চেহারা দিকে তাকান। একটু থেমে তারপর বলেন,
"ওর পিছে ছেলে লেগেছে, তোমার মেয়েকে ডিস্টার্ব করছে। আমি চাইনা এস সি পরীক্ষার আগে তোমার মেয়ের কোন প্রকার সমস্যা হোক। তাই আমি ওকে ওর চাচীর বাসায় পাঠিয়ে দিচ্ছি। কেন? তোমার কি এতে কোন আপত্তি আছে?"
আয়েশা তার মেয়ের দিকে তাকান। তিনি অবাক হয়ে বলেন,
" তুইতো আমাকে কোন কিছু বললি না! কবে লেগেছে? কে? আমাকে জানালি না কেন?"
রাব্বানী সাহেব হাত তুলে বলেন,
"তোমাকে জানায়নি, আমাকে জানিয়েছে। একজন জানলেই তো হলো। সমস্যাটা কে আগে জানল,কে পরে জানলো, সেটা তো কথা না। সমস্যার সমাধান হওয়াটা জরুরী"

আয়েশার মেয়েকে বা তার স্বামীকে কোন কিছু বললেন না। তবে মেয়ের উপর যে উনি প্রচন্ড অসন্তুষ্ট হয়েছেন এই ব্যাপারটা তার কাছে লুকানোর কারণে, সেটা তার চোখ মুখ দেখেই বুঝা গেল। মেয়ে যে মায়ের সাথে তো ফ্রি না কিংবা মাকে এই কথাটা বলার মতো ভরসা পায় নি, সেটা তার মায়ের বোধগম্য হয় না কখনো। তার শুধু মাথায় একটা চিন্তাই চলে, মেয়ে কেন তার কাছে লুকালো? কেন তাকে বলবে না? কেন তার বাবাকে আগে বলল? তার মানে কি মেয়ের কাছে তার কোনো গুরুত্ব নেই? নাকি গুরুত্ব কম? বিরক্ত হয়ে তিনি বিড়বিড় করতে করতে সরে আসেন। মনে মনে বলতে থাকেন, বাবা মেয়ে যা ইচ্ছা তা করুক, আমার কোন আসে যায় না!

পরের দিন সকালে নাস্তার পর পর রব্বানী সাহেব নিজে তার মেয়েকে প্রয়োজনীয় বই খাতা পত্র সহ তাকে তার ভাবীর বাসায় রেখে আসেন। প্রিয়ন্তীকে দেখে তার চাচী অনেক খুশি হলেন। অনেকদিন পর তার ভালো লাগছে। আজকাল তার কাছে নাতি-নাতনিরাই আসে, ছেলেমেয়েদের তিনি তেমন একটা কাছে পান না। বড় হয়ে যাওয়ায় সবাই যার যার জীবনে অনেক ব্যস্ত। প্রিয়ন্তিকে চাচীক বুকে জড়িয়ে বলেন,
"অনেকদিন পর তুই আসছিস! আমার দিনটা অনেক ভালো যাইবো"
দেবরের দিকে ফিরে বলেন,
" তোমার এত চিন্তা করা লাগবোনা তোমার মাইয়ারে নিয়া। তোমার মাইয়া এখন থেইকা এইখানে থাইকা পড়ালেখা করবো। কোন অসুবিধা হইবো না ওর।লাগলে মাঝেমধ্যে আমার কাছে আইসা দেইখা যাইবা"
রাব্বানী সাহেব মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,
"আপনার কাছে ও ভালো থাকব দেখেই তো আর কারো কাছে না গিয়ে আপনাকে বলছি"
"থাক, এত চিন্তার কিছু নাই। ও এইখান থেইকাই পরীক্ষা দিব"
"সাবধানে থাকিস মা", রাব্বানী সাহেব এইটুকু বলেই অফিসের দিকে রওনা দেন।

কয়েক দিন পর বিশাল প্রিয়ন্তিদের বাসায় বেল বাজায়। প্রিয়ন্তির মা আয়শা দরজা খুলেন।
" আরে বাবা! তুমি? ভালো আছো?"
"জ্বী আন্টি, ভালো আছি। আপনারা ভালো আছেন?"
"হ্যাঁ বাবা, আল্লাহ ভালো রেখেছে"
বিশাল আয়শার পেছন দিকে উঁকি দেয়ার চেষ্টা করে। প্রিয়ন্তির ছায়াও না দেখে বলল, "আন্টি, প্রিয়ন্তি আছে বাসায়?"
"না বাবা, ও তো বাইরে আছে, বেড়াতে গেছে"
"বেড়াতে? কোথায় গেছে?"
"ওর চাচার বাসায়"
"ও আচ্ছা, কোথায়?"
"তুমি কি চিনবে বাবা? ওকে কি দরকার এটা বলো"
"আন্টি, ও তো বলছিল ওর পরীক্ষা, এজন্য একটা বই লাগবে। আমি আবার বই আনিয়ে রেখেছিলাম,এজন্য।  ও কবে আসবে আন্টি?"
"জানি না বাবা। প্রিয়ন্তি আসলে আমি তোমাকে জানাবো"

বিশাল হাসিমুখে বিদায় নিল। আয়শা খাতুনের মনে কেমন একটা খটকা লাগলো। প্রিয়ন্তির সাথে বিশালের খুব একটা খাতির আছে বলে তার কাছে কখনো মনে হয় নি। তাহলে ছেলেটা কেন এই বাসায় আসলো?

রাতে স্বামীকে আয়শা বিশালের কথা বলতেই সে রেগে গেল।
"তুমি ঐ ছেলেকে কেন জানালা প্রিয়ন্তি কোথায় আছে?!"
আয়শা একেবারে আকাশ থেকে পড়লেন যেন। অবাক হয়ে বলতে থাকেন,
"ছেলেটা জিজ্ঞেস করলে বলব না?!"
"তুমি জানো এখন ঐ ছেলে ভাইয়ের বাসায় গিয়েও প্রিয়ন্তিকে বিরক্ত করা শুরু করবে?"
"মানে?"
"বিশালের জন্যই আমি প্রিয়ন্তিকে ভাবীর কাছে পাঠিয়েছি! ওর জন্য আমার মেয়েটা বাসা থেকেও বের হতে পারছে না!"
এবার আয়শা খাতুন দ্বিগুণ রেগে গেলেন।
"আমাকে তুমি বলছ? তুমি বা তোমার মেয়ে কি আমাকে কিছু বলছ? কোন ছেলে ওকে জ্বালায়, কার জন্য মেয়েকে ঐ বাসায় পাঠিয়েছ আমি জানি? এখন সব আমার দোষ? তোমরা বাপ বেটি আমাকে কোনো কিছু মনে কর? আমাকে জানাও? ওর বিয়ে ঠিক করার সময়ও তোমার মন যা চাইল তাই করলা! এখন মেয়েকে ভাবীর কাছে পাঠিয়েছ। কেন পাঠালা, কেন গেল, কার জন্য কিচ্ছু জানাও নি! আমাকে জানালে আমি কি বিশালকে সামলাতে পারতাম না? আমি কি আমার মেয়েকে রক্ষা করতে পারতাম না?"
"খুব পারতা তুমি! এত পারতা যে মেয়ের সাথে যে এগুলা হচ্ছে, ঐ ছেলে যে তোমার মেয়ের বিয়ে ভাঙার চেষ্টা করতেছে, সেটা পর্যন্ত জানো না!"
"ও! তোমার মেয়ে যদি মুখে কুলুপ এঁটে থাকে, তাহলে সেটা আমার দোষ?!"

প্রিয়ন্তির বাবা মায়ের মাঝে যখন ঝড় বয়ে যাচ্ছে, তখন প্রিয়ন্তির চাচী ওকে ওর চাচাতো ভাই আর পরিবারের সামনে নাস্তা খেতে প্রশ্ন করছেন,
"তোরে কি ঐ ছ্যাড়া ফোন দেয়?"
"কোন ছ্যাড়া চাচী?"
"ঐ যেইটার লগে বিয়া ঠিক হইছে?"
"হ্যাঁ, দিল তো। আজকেও দিয়েছিল। ওর ওখানে ফোন এলাউ না তো, এজন্য বেশি কল করতে পারে না।"
"পোলার বাপ মায় ভালো আছে?"
"হ্যাঁ, আন্টি আংকেলও ভালো আছে"
"কথা হয়?"
"হ্যাঁ, মাঝে মাঝেই আন্টি কল করে। আমি কল না দিলেই উনারা কল করে"
চাচী মুখ থেকে অদ্ভুত একটা শব্দ করলেন। মনে হচ্ছে উনারা কল না দিলে কিংবা যোগাযোগ না থাকলেই উনি বরং খুশি হতেন। সামনে রাখা পিঠা একটা ভেঙে পুরতে পুরতে বলেন,
"ছ্যাড়া বা ছ্যাড়ার বাপ মা তেড়িবেড়ি করলে আমারে করবি। ব্যাকা ঘাড় কেমনে সোজা করা লাগে, এইডা আমি জানি। আর যদি তাও না শুনে, তোর লেইগা বহুত ভালা ভালা পোলা আইবো। তোর বিয়া আটকায় থাকত না ঐ ছ্যাড়ার লেইগ্যা"

প্রিয়ন্তি মনে মনে ভাবে, আপনি কি আর ব্যাকা ঘাড় সোজা করবেন? আপনি তো সোজা মট করে ভেঙে ফেলবেন!!!

চলবে...

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen2U.Pro