পর্ব ৪

Màu nền
Font chữ
Font size
Chiều cao dòng

#অপরিণত_নিকাহনামা
লেখনীতে, #AbiarMaria

#৪

আসিফ এলোমেলো পায়ে বাসার দিকে হাঁটছে।বাসে করে ২০ মিনিটের রাস্তা পেরুতে ওর দেড় ঘন্টা সময় লাগবে নিশ্চিত।তবুও ও হাঁটছে।কড়া রোদে হেঁটে হেঁটে এতক্ষণে মুখ লাল হয়ে গেছে।আকাশে মেঘের ছিটেফোঁটাও নেই। আসিফ পকেটে হাত ঢুকিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটছে আশেপাশের মানুষ কম,দুপুরের রোদে পুড়ার শখ খুব বেশি মানুষের নেই তাই হয়ত।আসিফ বেশ খানিক পর বাসার কাছে চলে আসে।সিঁড়ি বেয়ে দরজার কাছে এসে নবে হাত রেখেই বুঝতে পারে দরজা খোলা।বাসার দরজা এরকম সময়ে কেউ খোলা রাখে নাকি?নিশ্চয়ই এটা সুবাহ বা আমীরের কাজ।বিরক্ত হয়ে ঘরে প্রবেশ করে দেখে ওর ফুফাতো ভাই রাজন সোফায় এক পা তুলে আরেক পা মাটিতে রেখে বসে বসে টিভি দেখছে।আসিফকে দেখে দাঁত কেলিয়ে হাসি দেয়।

রাজন এবার ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে।এতদিনে এক সেমিস্টার শেষও হয়ে গেছে।হিসেব মতে ওর সেমিস্টার ব্রেক চলার কথা।আর এজন্যই বোধহয় ওর বাবা মায়ের সাথে নাচতে নাচতে চলে এসেছে এখানে।ওর বাবা মা অর্থাৎ আসিফের বড় ফুপু আর ফুফার কন্ঠ আসিফ দরজার কাছ থেকেই শুনতে পাচ্ছে। এই দুপুরে ফুপুর ডায়লগ শোনার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে আসিফ নিজের ঘরের দিকে রওনা দেয়।এ সময় ওদের সবাইকে ডাইনিং এ দেখতে পায়।আসিফের মা সম্ভবত রান্নাঘরে,আর ওর বাবা,ফুফা,ফুপু সবাই ডাইনিং টেবিলে মিটিং করছে।আসিফের উপস্থিতি পেয়ে সব কটা চোখ ওর দিকে ঘুরে যায়।ওর বড় ফুপু বলেন,
"আমার এত ছোট বাপটাকে কেন এখনই তুই বিয়ের জন্য পিছে পড়ছিস আল্লায় জানে।আমার বাপটারে পড়ালেখাও করতে দিবি না তোরা!"
ওর ফুফা মাথা নেড়ে গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
"ছেলেরা এই বয়সে এক আধটু করেই।এটা যে ভুল করেছে তা বোঝাই যাচ্ছে।কিন্তু তাই বলে বিয়ের মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হয় নাই।এখনও তো ও বাচ্চা মানুষ।আমাদের রোহানই তো সংসারের কিচ্ছু বুঝে না।আসিফ কি বুঝব?"

রোহান রাজনের বড় ভাই।রোহানের চাইতে আসিফ সাত বছরের ছোট।যেখানে রোহানের বিয়ের এক বছরও পার হয় নি।সেখানে রাজনকে ডিঙিয়ে আসিফের বিয়ের কথা চলছে! আসিফের কান লাল হয়ে এসেছে।আসিফের বাবা ছেলের দিকে একবার চেয়ে বোন আর বোন জামাইয়ের দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে বললেন,
"রোহান সংসারের কিছু বোঝে না কেন ও বুঝতে চায় না।অথচ প্রেম করল রাজশাহীর এক মেয়ের সাথে।ওর ক্যালেঙ্কারির কথা তোমরা সবাই চেপে গেলেও তা কেউ ভুলে নাই।আমার ছেলের যাতে কলঙ্ক না হয়,এজন্যই বিয়ে দিচ্ছি।দেখা যাবে রোহানের মতো বুঝিয়ে,পিটিয়ে আলাদা করতে গেলে মেয়ের সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করতে যাবে,নাহয় পালিয়ে যাবে।তারপর কি থেকে কি হবে!এরচেয়ে দুজনকে বিয়ে দিয়ে দিব,সেটাই ভালো।ওরা যখন এই বয়সে নিজেদের জীবনসঙ্গী বাছাই করা শিখে গেছে,মাঝখান থেকে আমাদের খলনায়ক হওয়ার দরকার কি?"

আসিফের বড় ফুপু বাগড়া দেয়।
"তাই বলে এই পুচকে ছেলে কি সব বুঝে নাকি?মেয়েটাও তো শুনলাম মাত্র ক্লাস নাইনে পড়ে! দুই পুচকিরে বিয়ে দিয়ে কি তুই টানবি? তাছাড়া মেয়ে যদি খারাপ পড়ে?ওর জীবনটা নষ্ট হইব না?"
"দেখো আপা,ও কিচ্ছু না বুঝলেও সব বুঝবে।দরকার পড়লে টানমু পোলারে,কি করার আছে!পোলা আমার এত বুঝলে যোগ্যতা হওয়ার পরেই প্রেম পিরিতিতে যাইতো। আর মাইয়া খারাপের কথা বলতাছ?মাইয়া খারাপ হইলে দুই পরিবার বইসা সিদ্ধান্ত নিমু।যা ভালো তাই হইব।অল্প বয়সে আলাদা হইলে আবার পরে বিয়া শাদী করব!"

রান্নাঘর থেকে আসিফের মা চামচ হাতে রেগে বেরিয়ে আসেন,
"এইগুলা কি আজাইরা কথা সবাই বলতেছ তোমরা? পোলার বিয়াও দিতে পারি নাই,এখনই এইসব আজেবাজে কথা! মাইয়া খারাপ হইলে এই বয়সে জীবনেও বিয়া বসত না।শুধু শুধু এইসব কথা রাখো।তারচেয়ে আপা আপনে আপনের ভাতিজারে একটু বুঝান,কেমনে শ্বশুরবাড়ির সাথে মিললা চলব,সেইটা বইলা দেন"
"আমি এইসবের মধ্যে নাই।বিয়ার কথা বলছ,আসছি।কিন্তু আমি গুড়াগাড়া পোলাপাইনের বিয়া দেওয়ার পক্ষে নাই!"
আসিফের ফুপু এই কথা বলে উঠে দাঁড়িয়ে তাদের জন্য নির্দিষ্ট ঘরের দিকে রওনা দেন।পেছন থেকে আসিফের বাবা ফোঁড়ন কাটেন,
"তা থাকবা কেন!তোমরা হইলা পোলাপাইন বাসায় পাইলা পাকনা বানাইয়া পঁচাইয়া এরপরে বিয়া দাও।পোলাপাইন বিয়ার আসর পর্যন্ত যাওয়ার আগে পোলাপাইন যা আকাম আছে সব কইরা ফালায়!"

আসিফ নিজের ঘরের দরজা এইটুকু শুনেই আস্তে করে ভেজিয়ে দিয়ে মনে মনে প্রমাদ গুনে।ওর ফুপু অনেক মেজাজী মানুষ।তার বাবার করা এতগুলো অপমান তার পক্ষে হজম করা রীতিমতো তার সাধ্যের বাইরে। বাসাটা এখন একটা কুরুক্ষেত্রে পরিণত হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র!আসিফের মনে হচ্ছে,বয়সটা আরেকটু বেশি হলে ওর হার্ট এটাক হয়ে যেত!

দুপুরের খাবারের কিছু পরে রাজন আসিফের ঘরে আসলো।
"ভাই,বিয়ে নাকি তোমার?"
রাজনের দাঁতগুলো এক ঘুষিতে ফেলে দিতে ইচ্ছা হচ্ছিল আসিফের। ওর থেকে দুই বছরের বড় হলেও ওদের মাঝে তুই তোকারির সম্পর্ক।আসিফ দাঁতে দাঁত পিষে বলল,
"বিয়ে আমার,কিন্তু মনে হচ্ছে ফূর্তি তোর!আমাকে বল,আমিও ফুপুর কাছে বলে তোর বিয়েটা করিয়ে দেই!"
"নাহ ভাই!তোর মতো আমি এডভান্সড না।আমি আবার মেয়ে মানুষের চক্করে পড়তে রাজী না!এখন তো সিঙ্গেল লাইফ জিন্দাবাদের সময়। এখন কোন দুঃখে তোর মতো পঁচা শামুকে পা কাটব?"
"তুই পড়বি মেয়ে মানুষের চক্করে? জীবনে কোনোদিন তোকে কোনো মেয়ে পাত্তা দিয়েছে?কেউ তোর প্রপোজ নিয়েছে?সব তো মুখের উপর রিজেক্ট করে ভেগেছে।তুই মেয়ে পটাতে পারলে তো পটাবি!"
রাজন মুখ কালো করে ফেলে।
"মানলাম তুই আমার চেয়ে ফর্সা।তার মানে কিন্তু এই না যে মেয়েরা আমার পিছে ঘুরে না!তোর মতো এত মেয়ে আমার কাছে আসে না,তার মানে এতও খারাপ না আমি!"

আসিফ কমপিউটার চালু করতে করতে বলে,
"কত যে ভালো তুই আমার জানা আছে।আমার এই পর্যন্ত কয়টা কেইস হাতে আসছে জানিস তুই?তুই এই বয়সেও এতগুলা কেইস পাস নি।খালি এইবার আব্বুর কাছে ফেঁসে গেলাম।নাহলে দেখতি তুই!"
রাজন অতি উৎসাহিত হয়ে বলে,
"তোর হবু বউয়ের ছবি আছে?মামী বলতেছিল মেয়ে নাকি হেব্বি সুন্দরী?একেবারে নায়িকা?"
আসিফের এই প্রথম ওর পছন্দের উপর গর্ব হলো।প্রিয়ন্তিকে গর্ব করাই যায়।মেয়েটার চেহারা,চোখ জোড়া, চুল, হাসি সব কিছু মিলিয়ে একেবারে রানী।যেবার কালো শাড়ি পরে ওর সামনে এসেছিল,ওর মনে হচ্ছিল অজ্ঞান হয়ে পড়েই যাবে।সেদিন প্রিয়ন্তিকে বুকের সাথে মিশিয়ে জড়িয়ে ফেলার আবেগ অনেক কষ্টে নিয়ন্ত্রণ করেছে।মেয়েটাকে আগুন সুন্দরী বললেও কম হবে।আসিফ মুখে বিজয়ের হাসি ফুটিয়ে রাজনকে বলে,
"ওর ছবি আছে।এই দেখ"

রাজন প্রিয়ন্তিকে দেখে কিছুক্ষণ হাঁ করে থাকে।তারপর আসিফের কাঁধে চাপড় দিয়ে বলে,
"ভাই,এই মেয়ে তো পুরা আগুন!পাইছিস কোথায়?"
আসিফ বিজেতার ভঙ্গিতে মাথা নাড়ে।রাজন বলে,
"তুই আসলেই লাকি।শোন,কম বয়স তো তাতে কি?এই মেয়েকে এখনই বিয়ে করে ফেল!জানিস তো,সুন্দরী মেয়ে গাছে পাকা ফল কখনো থাকে না।কেউ না কেউ ঢিল মেরে নিয়েই যাবে।বাপরে,এই মেয়ে এখনই এমন?আরেকটু বড় হলে তো আশেপাশের কয়েক পাড়া পুড়িয়ে ফেলবে!"

রাজনের কথা শুনে আসিফের মনে মনে ভালো লাগছে।এরকম একটা মেয়ের সাথে বিয়ে হলে মন্দ হয় না।তবে তারপরই অন্যান্য পারিপার্শ্বিকতা ভেবে মেজাজ আবার খারাপ হয়ে গেল।এই বয়সে বিয়ে হওয়া মানে এই সমাজে হাসির পাত্র হওয়া।তার উপর বিবাহিত জীবনের প্যারা নেয়ার মতো অবস্থা তো ওর এখনও হয়নি।আশেপাশের দম্পতিদের দেখলেই ও বুঝতে পারে এই কথার সারমর্ম- 'বিয়া মানে কত্ত মজা!'

আসিফ রাজনকে নিয়ে একটা বাংলা নাটক দেখতে শুরু করে।আজকাল তিশা,আরেফিন শুভ,এরা খুব ভালো অভিনয় করে।আসিফ নাটক ছেড়ে চিন্তার মোড় অন্যদিকে নিতে চেষ্টা করে।তবুও মাথায় একটা কথাই ঘুরতে থাকে-
তিনদিন পর আমার বিয়া!!!

চলবে...

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen2U.Pro