#অপরিণত_নিকাহনামা
লেখনীতে, #AbiarMaria
#৫
ছেলের বিয়ে আগামীকাল বাদ জুমুআ।দুই পক্ষেরই প্রস্তুতি নেয়া শেষ প্রায়।যাদের না বললেই না,এমন সব আত্মীয় স্বজনদের বলা হয়েছে।তবে দুইপক্ষেরই বেশিরভাগ আত্মীয় আসিফ এবং প্রিয়ন্তির বাবা মায়ের উপর নাখোশ।কি করে এত অল্প বয়সী ছেলে মেয়েদের বিয়ের ব্যাপারে তারা ভাবতে পারে? এই বাচ্চগুলো সংসার কি করে করবে? না আছে ছেলের উপার্জন,না মেয়ে বড় হয়েছে।মেয়েপক্ষের কথা, আমাদের মেয়ে বড় হলে আরও কতো ভালো ছেলে পাবে!এই ছেলে কে?
একই প্রশ্ন ছেলেপক্ষেরও।ভবিষ্যতে যেখানে আরো ভালো মেয়ের সাথে সম্বন্ধ স্থাপন সম্ভব,সেখানে কেন এই মেয়ের সাথেই বিয়ে ঠিক করতে হবে?কি আছে এই মেয়ে আর এই পরিবারের মাঝে?
ইসমাইল হোসেনের এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই।সে হবু বেয়াইয়ের সাথে কথাবার্তা বলে সব খোঁজ খবর নিয়ে ভাত ঘুম দেয়ার জন্য বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে।পড়ন্ত দুপুরের ক্লান্ত রোদে মানুষজন পেট পূজো শেষে একটু বিশ্রামের প্রস্তুতি নিচ্ছে।এই সময়টা একটা ভয়ানক অলস সময়। সারাদিন কা কা করে চিৎকার করা কাকটাও কোনো গাছের ছায়ায় বসে ঝিমাতে থাকে।রাস্তাঘাটের মানুষজনের মাঝেও আলসেমি ভর করেছে।ইসমাইল সাহেবের ছেলের বিয়ে বলে অফিস থেকে দুইদিনের ছুটি মিলেছে।ইতোমধ্যে ঘরভর্তি হয়ে গেছে বিয়ের জন্য আগত মেহমান দ্বারা।দুই বোন ও তাদের পরিবার,তার একমাত্র শালী মিলেই বাসা গরম করে ফেলেছে।সকাল থেকে পুরো বাড়ি ভর্তি হৈচৈ।ইসমাইল সাহেব ছাদের দিকে চেয়ে চেয়ে হিসাব মেলাচ্ছেন।তার হিসেব পাক্কা।কারণ গত বিশ বছর ধরে তিনি একজন হিসাবরক্ষক হিসেবে কাজ করছেন।প্রতিষ্ঠান বদলালেও তার কাজ বদলায় নি।উনি হিসাবে কাঁচা নন।
এমন সময় তার স্ত্রী রাফিদা খাতুন ঘরে নিজের শাড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে প্রবেশ করেন।স্বামীকে সজাগ দেখে দরজা ভেজিয়ে তার পাশে এসে বসেন।
"তোমার ছেলেকে জোর করে খাইয়ে আসলাম।সে কিছুতেই খেতে রাজী হচ্ছিল না"
"কোন ছেলে?"
"আর কোন ছেলে,বড় ছেলে!"
"খাওয়া দাওয়া নিয়ে এত নাটক কিসের?ওর বিয়ে তো ওর পছন্দের মেয়ের সাথেই দিচ্ছি"
রাফিদা খাতুন উদাস কন্ঠে বলেন,
"অবস্থা দেখে তো মনে হচ্ছে ঐ মেয়েকে পছন্দই করে না"
"পছন্দ ঠিকই করে।ঐ মেয়েকে দেখলে তোমারও পছন্দ হবে বুঝলা? মেয়ে মাশাল্লাহ অনেক সুন্দরী।চোখ গুলা দেখে আমার মরহুম আম্মার কথা মনে পড়ে গেল বুঝছ!"
ইসমাইল সাহেবের নরম কন্ঠে রাফিদার মুখে হাসি ফুটে।ইসমাইল সাহেব বলতে থাকেন,
"ওর পরিবারের মানুষগুলাও মাটির মানুষ। যখন ঐ বাসায় গিয়ে বললাম,আমাদের ছেলে মেয়েরা বোধহয় প্রেম করছে,কানতে কানতে বলল,তার মেয়েকে সে বুঝাবে যেন আমার ছেলের সাথে আর এসব না করে।আমি কি কথা বলব,উল্টো আমার কাছে মাফ চাইতে শুরু করলো!আমি থামিয়ে বললাম যে আমার ছেলেরই দোষ বেশি।তাছাড়া ওরা এখন ছোটো তাই এমন কাজ করেছে।আমার ছেলেটাও ভালো,আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি আপনার মেয়েটাও মাশাল্লাহ ভালো।ওদের এখন মারধর করলে তো আমাদের কাছ থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করবে।তার চেয়ে বিয়ে করিয়ে দেই।যে যে যার যার বাড়িতে থাকবে।আমার ছেলের যোগ্যতা অর্জন হলে আমরা আমাদের বউকে নিয়ে যাব।"
"মেয়ের বাবা রাজী হলো?"
"হবে না আবার?মেয়ে যদি পেছন পেছন এত কিছু করতে পারবে,আরো বেশি কিছু করলে কি আমরা টের পাবো?"
রাফিদা খাতুন মাথা নাড়েন।
"ছেলে মেয়ে আসলেই বড় হয়ে গেছে বুঝলা! এখন বিয়ে দিয়ে দেই।কি হবে না হবে সে দেখা যাবে।সবচেয়ে বড় কথা, আমরা গার্জিয়ানরা ঠিক থাকলে ছেলে মেয়েও উল্টাপাল্টা করার সুযোগ পাবে না।"
"আমাদের ইসলামেও তো ছেলে মেয়ে উপযুক্ত হলে বিয়ে দেয়ার নিয়ম।আমাদের ছেলে এখনো কামাই না করুক,আমরা কি বউ পালতে পারব না? অসামাজিক কাজ করার আগে বিয়ে দেওয়াই ভালো!"
"মনে আছে আমাদের বিয়ের সময় বয়স কত ছিল?এত অল্প বয়সে বিয়ে হলেও না তোমাকে নিয়ে আমি ঘুরতে পারছি,না সময় পাইছি নিজেদের জন্য। লজ্জায় কেউ কারো কাছে আসতে পারতাম না। এখন বয়স হয়ে গেছে।সুযোগ পাইলেও ঘুরতে যাওয়ার মন আর শক্তি নাই।ওদেরই তো এখন বয়স।এই বয়সে বিয়ে করে ওরা একটু আধটু ঐ যে বলে না,কি জানি? হ্যাঁ, এঞ্জয়!এঞ্জয় করুক ওরা।এইটাই তো ঘুরাঘুরি আর আনন্দ করার বয়স!"
রাফিদা খাতুন স্মিত হাসেন।ইসমাইল হোসেন তৃপ্তির হাসি হেসে বলেন,
"ছেলের পছন্দ আছে বুঝছ।মেয়েটারে দেইখা আমার মন ঠান্ডা হয়ে গেছে।আমরাও এত সুন্দর বউ আনতে পারতাম না।মাশাল্লাহ!"
স্বামীর কথায় রাফিদা খাতুন হাসেন।তার বিশ্বাস,তার স্বামীর ভুল হয়নি।সে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে তার সন্তান এবং পরিবারের মঙ্গল আছে।
এদিকে আসিফের মানসিক অবস্থা যাচ্ছেতাই। আত্মীয় স্বজনদের কিছু মানুষ ওর বিয়ের পক্ষে,কিছু মানুষ বিপক্ষে।সবাই বাবা মায়ের সাথে তর্কাতর্কি তো করছেই,আবার ওকেও নানান কথা শোনাচ্ছে।এমনভাবে একেকজন এসে ওর উপর আক্রমণ করছে যেন তাদের ছেলে মেয়েরা সব দুধে ধোয়া তুলসীপাতা! অথচ ওদের ছেলে মেয়েরাও প্রেম পিরিতি করে ছোট বয়সে।আসিফের সবচেয়ে বড় সাপোর্ট হওয়ার কথা ওর বড় বোন সারাহর।সসেই সারাহই ওর বিয়ের জন্য সমস্ত প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে।আসিফ অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে সব দেখছে আর ভাবছে,কেমন পরিবারে জন্ম নিল!
সন্ধ্যার দিকে একা একা যখন ছাদে বসে ছিল,তখন মোবারকের ফোন আসলো।
"দোস্ত,আমার মরে যাইতে ইচ্ছা করতেছে!"
ওপাশ থেকে মোবারক হা হা করে ওঠে,
"ওরে,কি বলিস এসব!এইসব চিন্তা মাথা থেইকা ফালা!খবরদার!এইগুলা করিস না!"
"তাহলে আমি কি করব?!একটা উপায় বল,আমি আর পারতেছি না!"
অস্থিরতা ঝড়ে পড়ল আসিফের কন্ঠে।
"দোস্ত,তোর জন্য একটা বুদ্ধি বের করছি।এই বুদ্ধি কাজে লাগাইলে তুই নিশ্চিত পার পাবি!"
"সত্যি?!"
"হ,কিন্তু শর্ত আছে মামা!"
"কি শর্ত?"
"প্রিয়ন্তিরে ছাড়তে পারবি না।ওরেই বিয়া করবি।কিন্তু বিয়াটা খালি পিছাইব।"
"দোস্ত,যেমনে পারি সেইটাই করমু!তুই আমারে উপায় ক।আমি সব শর্ত মানতে রাজী!"
এক ঘন্টা পর আসিফ বুকে সাহস সঞ্চয় করে বাবার ঘরের দিকে আসে।আশেপাশে কেউ কেউ নিজেদের মাঝে আড্ডা দিচ্ছে,কেউ খাচ্ছে,কারো বাচ্চা কান্না করছে,কেউ আবার রান্নাঘরে কাজ করছে।আসিফ বাবাকে টয়লেট থেকে বের হতে দেখে শুকনো কন্ঠে ডাকে,
"আব্বু,একটা কথা ছিল!"
ইসমাইল সাহেব ছেলের কথায় স্থির হয়ে চোখে জিজ্ঞাস্য দৃষ্টি নিয়ে দাঁড়ান।
"আব্বু,কালকের বিয়েটা..."
"বিয়েটা কি?"
"বিয়েটা একটু পেছানো যায় না?"
আসিফের মিনমিন করে বলা কথাগুলো শুনে ওর বাবার মাথায় আগুন ধরে যায়।উনি একটা রামধমক দিয়ে বলেন,
"কি বলবি জোরে বল!"
আসিফ মাটিতে ডান পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে মাটিতে ঘোরাতে ঘোরাতে বলে,
"আব্বু,বিয়ে করলে আমার ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যাবে"
"মানে?!কিসের ক্যারিয়ার?"
"আব্বু আমি ডিফেন্সে এপ্লাই করব।বিয়ে করলে ডিফেন্সে কমিশনড অফিসার হিসেবে এপ্লাইই করা যাবে না।এলাউড না"
ইসমাইল সাহেব ভ্রু কুঁচকান।
"তুই কবে থেকে ডিফেন্সে যাওয়ার চিন্তা করতেছিস?"
"আগে থেকেই আব্বু।আমি বিয়ের ব্যাপারটা জানতাম না।জানলে আগেই তোমাকে বলতাম"
"বিয়ে করলে ওখানে এপ্লাই করা যায় না?"
"না আব্বু"
"ডিফেন্সে এপ্লাই করলেই কি অফিসার হওয়া যায়?"
"না,আইসএসবি দিতে হয়।ওখানে গ্রীন কার্ড পেলে এরপর হওয়া যায়"
"আর যদি না টিকিস তুই?"
ইসমাইল হোসেনের কথায় আসিফের মুখের মাংসপেশী শক্ত হয়ে আসে।কন্ঠে দৃঢ়তা ফুটিয়ে বলে,
"আমি সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করব।আর না টিকলে তখন বিয়ে দিও তোমরা, আমি আপত্তি করব না"
"তাহলে মেয়েটার এখন কি হবে?!আমি যে ওর বাপকে কথা দিলাম?!"
ইসমাইল সাহেবের কন্ঠে রাগ ঝরে পড়ে।আসিফ ভাবে,পরের কথাটুকু এত অল্প সময়ে ওর বাবা মানবে তো?
চলবে...
***রামাদান মাস উপলক্ষে এই গল্প দেয়া সাময়িকভাবে স্থগিত থাকবে।তবে সুযোগ পেলে আমি দিব।এ ব্যাপারে আমি কথা দিতে পারছি না।সবাইকে পবিত্র রামাদান মাসের শুভেচ্ছা।ভালো থাকুন,নিরাপদে থাকুন,সৃষ্টিকর্তাকে প্রতি মুহূর্তে স্মরণে রাখুন***
Bạn đang đọc truyện trên: Truyen2U.Pro