পর্ব ৬

Màu nền
Font chữ
Font size
Chiều cao dòng

#অপরিণত_নিকাহনামা
লেখনীতে, #AbiarMaria

#৬

আসিফের বুক কাঁপছে।ওর বাবা চোখের সামনে অগ্নি দৃষ্টিতে ছেলেকে দেখছেন।আসিফ যখন মোবারকের সাথে এই প্ল্যান করে,তখনই মোবারক সাবধান করে দিয়েছিল।বিয়ের আগের দিন বিয়ে না করার কথা বললে যে কোনো বাবা মায়ের মাথায় বিনা মেঘে বজ্রপাত হবে।আসিফ সবটুকু সাহস সঞ্চয় করে বলল,
"আব্বু,বিয়েটা পিছিয়ে দাও..."

ওর কথা শেষ হতে দেরী,ইসমাইল সাহেবের হাত তুলতে দেরী হয় না।আরেকটু হলেই ছেলের গালে চড় দিয়ে একেবারে মাটিতে ফেলে দিতেন তিনি!কোনো একটা কিছু ভেবে তার হাত থেমে যায়।রাগে কম্পিত কন্ঠে বলেন,
"বিয়েটা তোমার কাছে মামদোবাজি? ফ্যাশন শুরু করছ তোমরা আজকালকার ছেলেরা? প্রেমের বেলায় সমস্যা থাকে না,বিয়ের বেলাতেই সব সমস্যা?!ক্যারিয়ার হবে না,পড়ালেখা হবে না,অথচ প্রেম করে সব করো কিভাবে তোমরা? তোমাদের জেনারেশনটা একেবারে পঁচা আপেলের মতো!সবগুলো এক জাতের!মন দিয়ে শুনে রাখো।আমি ইসমাইল হোসেন যেখান কথা দেই,সেখান থেকে কথা আমি ফিরিয়ে নিব না!"
আসিফ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ওর বাবার ঠান্ডা হওয়ার।কয়েক মিনিট সময় নিয়ে বলে,
"আব্বু তুমি যেটা ভালো বুঝো করো"

ছেলের প্রস্থানের পর ইসমাইল সাহেব কয়েক যায়গায় কল করেন।সবাই তাকে নিশ্চিত করে,বাংলাদেশের ডিফেন্সে চাকরি করতে হলে আনম্যারিড হওয়া বাধ্যতামূলক। সে এবার পড়েছে বিপাকে।ছেলে যদি এই কথা আগে বলত,তাহলে কোনো না কোন ব্যবস্থা সে করতে পারত।এখন?অনেক ভেবে রাব্বানী সাহেব অর্থাৎ প্রিয়ন্তির বাবাকে কল করে। তার সাথে কাচুমাচু হয়ে জানায় বর্তমান পরিস্থিতি।হাসিমুখে রাব্বানী সাহেব বলে,
"আপনি এত ভাববেন না বেয়াই সাহেব।বিয়ে না হোক,কাল আমরা আংটি বদল করে রাখব।সমস্যা কি? ছেলের চাকরি না হলে বিয়ের সুযোগ তো আছেই।কাল আপনারা আসেন,আংটি পরিয়ে যাবেন।চিন্তার কিছু নেই ভাইসাহেব। ওরা তো এখনও ছোট,সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ পড়ে আছে।আমাদের তো ওদের সুযোগ দিতে হবে,নাকি?"
ইসমাইল সাহেবের ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে।বড় করে নিঃশ্বাস নেন,যেন বুকের উপর থেকে পাহাড়সম বোঝা সরে গেছে!

কিছুক্ষণ পর সবাইকে ইসমাইল সাহেব বসার ঘরে ডাকেন।গম্ভীর মুখে সবাই বসার ঘরে এসে দাঁড়িয়েছে। মুরুব্বিরা সোফাতে বসে আগেই সোফাগুলো দখল করে নেয়ায় কম বয়সীরা এখানে ওখানে দাঁড়িয়ে আছে আসিফের বাবার কথা শোনার জন্য। বিয়ের আগের রাত ১০টায় পাত্রের বাবা কি এমন বলতে চায়?সবার মুখের দিকে ইসমাইল সাহেব এক এক করে তাকিয়ে মাটির দিকে তাকান।ধীরে ধীরে বলতে শুরু করেন,
"আগামীকাল আসিফ আর প্রিয়ন্তির বিয়ে হওয়ার কথা,অন্ততঃ সবাই এমন প্রিপারেশ নিয়েই এখানে এসছে।অনেকেরই এখানে আপত্তি আছে আমার ছেলের বিয়ে নিয়ে,এমনকি আমার ছেলেরও আপত্তি ছিল।তারপরও আমি আমার সিদ্ধান্ত থেকে নড়িনি কারণ আমার ছেলে খারাপ পথে পা বাড়ানোর কোন সুযোগ পাক তা চাই না।আমাদের সমাজটা একেবারে নষ্টের শেষ সীমানায় চলে যাচ্ছে।আমাদের যুগের মতো লাজ লজ্জার ধার আজকাল কেউ ধারে না।যার কারণে ছেলে মেয়েরা বিয়ে ঠিকই দেরি করে করতেছে,কিন্তু খারাপ কাজে কেউ পিছায় নাই।প্রেম করে হোটেলে যায়,খালি বাসায় যায়,তারপর মেয়েগুলা হাসপাতালে যায়।এইজন্য আমিও সবার আপত্তির পরোয়া না করেই ছেলের বিয়ের আয়োজন করছি।কিন্তু..."

আসিফের বাবা থামেন।সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে তাকে দেখছে।আসিফের বিয়েতে কোন 'কিন্তু' এসেছে,তা জানার জন্য প্রত্যেকে উদগ্রীব।ইসমাইল সাহেব সবার দিকে তাকিয়ে আবারও শুরু করেন,
"কিন্তু আমার ছেলে আজকে বলল ও নাকি মিলিটারিতে যাবে।বিয়ে করলে নাকি মিলিটারীতে কমিশন অফিসার হওয়া যায় না"
সাবাহর স্বামী,এই বাড়ির একমাত্র জামাই রুবেল মুখ খোলে,
"জ্বী আব্বা,আসিফ ঠিক বলছে।বিবাহিত জানলেই ও বাতিল হয়ে যাবে"
ইসমাইল সাহেব জামাইয়ের মুখের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বলেন,
"কিন্তু এখন বিয়ের আগের রাতে এসে আমাকে এসব বললে তো হবে না।দুইটা পরিবার সব প্রিপারেশ নিয়ে বসে আছে।তাদের দুইজনের বাসাতেই আত্মীয়রা চলে আসছে,কেনাকাটা হয়ে গেছে বিয়ের।আগের রাতে এইসব বলা হবে কেন?ভাবছিলাম সকালের দিকে ছেলেকে হলুদ দিয়ে তারপর..."
একটা নিঃশ্বাস নিয়ে তিনি বলেন,
"কাল আসিফের বিয়ে হচ্ছে না।আপাতত বিয়ে কেন্সেল"

ইসমাইল সাহেবের এমন ঘোষণায় সবার মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিল।কেউ কেউ হাসলো,কেউ অবাক হলো,কেউ আবার কষ্ট পেলো।তারা আশা করেনি এমন কিছুর।তবে আসিফের বড় ফুপুর মুখে একটা বিশাল হাসি দেখা দিল।বোঝাই যাচ্ছে উনি রাত দিন দুয়া করছিলেন আসিফের বিয়ে বাতিলের জন্য। দাম্ভিকতার সাথে তিনি বললেন,
"তোকে আগেই বলছিলাম ওর বিয়া এখন দিস না।বয়স কত হইছে ওর?ভালো হইছে ক্যান্সেল।আমাদের পোলা আমরা দেইখা শুইনা ভালো দেইখা বিয়া দিমু"

ইসমাইল সাহেব হাত তোলেন,
"আমি কথা শেষ করি নাই আপা।কথা এখনো বাকি আছে।রাব্বানী সাহেবকে আমি কথা দিয়ে আসছি।উনাদের মেয়ে এখন আমাদের।আমি আমার কথা রাখবই"
আসিফের বড় ফুপু বিস্মিত হয়ে বলেন,
"আসিফের লগে বিয়া না দিলে কার লগে দিবি?"
"আসিফের সাথেই দিব আমি।কিন্তু কালকে শুধু আংটি বদল হবে।সবাই যাবা সেখানে,মেয়েকে আমরা আংটি পরায় আসব।আসিফ যদি মিলিটারীতে টিকে,তাইলে পরে পারমিশান পাওয়ার পর বিয়ে হবে।আর যদি না টিকে,তাহলে ইন্টার পরীক্ষার পরেই আগামী বছরে ইনশাআল্লাহ বিয়ে পড়ায় দিব।মেয়ের বাবার সাথে আমার এমনটাই কথা হইছে"
বড় ফুফা টিপ্পনী কাটেন,
"সব সিদ্ধান্ত যদি তুমিই নাও,তাইলে আমাদের আর ডাকলা কেন?"

রাফিদা খাতুনের মুখ লাল হয়ে গেছে।তার ননাসের জামাইকে আগে থেকেই অসহ্য লাগে।লোকটা কথা বলে না খুব একটা। কিন্তু যখন বলে,তখন খোঁচা দিতে ভুলে না।তার ছেলের কাজে সবার মাথা হেট হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা,অথচ শালার ছেলের ব্যাপারে নাক গলাতে ঠিক হাজির হয়ে গেছে।নেহাৎ মুরুব্বি বলে ওরা ওদেরকে এড়িয়ে যেতে পারে না।অথচ পদে পদে লোকটা এই ধরনের কথা বলে আসছে শুরু থেকেই।আসিফের বাবা তার দুলাভাইয়ের  জবাবে বলেন,
"আমার ছেলে,আমার পরিবার,সিদ্ধান্ত তো আমাকেই নিতে হবে!কই,আমি তো কারো পরিবারের সিদ্ধান্ত নেই না!তাহলে আমারটা অন্য কেউ কেন নিবে?আপনাদের জানিয়েছি কারণ আপনারা আমার আত্মীয়।দশজন ছাড়া তো কোনো কাজে আগাবো না তাই।এই,কে কে যেন আমাকে আসিফের হলুদের কথা বলতেছিলা? তারা হলুদ জমায় রাখো।সুযোগ মতো ওরে হলুদ লাগায়ো।কিন্তু আজকে না,অন্য কোনো দিন।কালকে শুধু আংটি পরাতে যাব আমরা!"

এদিকে যারা আসিফের বিয়ের বিপক্ষে ছিল,তারা খুশি।আর যারা পক্ষে ছিল,তারা মুখ অন্ধকার করে আছে।কিন্তু কিছু করার নেই।ক্যারিয়ার একেবারে বাতিল হয়ে গেলে তখন ছেলে তো সারাজীবন ওদেরকে দোষারোপ করবে।তাই ওকে একটা সুযোগ দিতেই হবে।আসিফ ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে সব শুনে আর হাসে।মোবারককে ফোনে আস্তে করে বলে,
"দোস্ত,প্ল্যান সাকসেসফুল!"

এদিকে রাব্বানী সাহেব ফোন রেখে খানিকটা চিন্তায় পড়ে যান।স্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে বলেন,
"ওদের আংটি পরাতে বললাম।আচ্ছা,ওরা আবার ঝামেলা করার চিন্তা করতেছে না তো?"
প্রিয়ন্তির মা মুখ ঝামটা দেন।
"কেন আংটির কথা বললা?যদি ওরা পরে দোষ বের করে বিয়ে না করায়?বিয়ে ভেঙে দিলে আমাদের মেয়ের কি হবে বুঝতেছ তুমি?কেন রিস্ক নিতে গেলা?"
"কি করব?! ছেলে ডিফেন্সে মানে মিলিটারীতে চাকরি করতে চায়।বিয়ে করলে তো প্রথম চান্সেই বাদ।এখন কি আমি জোর করব?জোর করলে ভাববে আমাদের মেয়ের মধ্যে ঝামেলা আছে!"
"জানি না আমি।যা ইচ্ছা কর! বিয়ে ঠিক করলা আমার অনুমতি ছাড়া,এখন ভাঙার সময় আর অনুমতির কি দরকার!"

প্রিয়ন্তির মা আয়শা খাতুন হনহন করে উঠে চলে যান।রাব্বানী সাহেব চিন্তিত দৃষ্টিতে চারপাশে দেখেন।স্ত্রীর মতো একই চিন্তায় চিন্তিত তিনি।কিন্তু বিয়েটা যেন বাতিল না হয় তাই ইন্সট্যান্টলি আংটি বদলের কথা বলেছেন।চিন্তিত মুখে মেয়ের ঘরের দিকে এগিয়ে যান।আজ রাতেই ওর হলুদের ব্যবস্থা করেছিল সবাই।তিনি সবার দিকে তাকিয়ে মেয়ের ঘরে উঁকি দেন।তার মেয়ে হলুদ শাড়ি পরে চুড়ি পরছিল।তার ছোট দুই মেয়েও সেজেগুজে ঘুরে বেড়াচ্ছে বড় বোনের চারপাশে।রাব্বানী সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেয়ের ঘরের দরজায় আওয়াজ করেন।

প্রিয়ন্তি ওর বাবাকে দরজায় দেখে থমকে দাঁড়ায়।
"বাবা,কিছু বলবা?"
রাব্বানী সাহেব অন্যান্যদের ঘর থেকে বের হওয়ার ইশারা করে দেন।প্রিয়ন্তি বেশ অবাক হয়।ও ভাবে,বিয়ের আগে বাবারা অনেক আবেগপ্রবণ হয়ে যান, মেয়েকে অন্যের দায়িত্বে দেয়াটা তাদের জন্য অনেক কষ্টের।হয়ত ওর বাবা এমন কিছুই বলতে এসেছেন।প্রিয়ন্তির ভেতর সুখ এবং লজ্জার মিশ্র অনুভূতি কাজ করছে।মাথা নিচু করে মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে।এই বয়সে মেয়েরা লজ্জা ভেঙে বাবা মাকে কিছুই বলতে পারে না।অথচ প্রিয়ন্তিকে এই বয়সেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হচ্ছে।অবশ্য ওর বয়সী অনেকেরই বিয়ে হয়।তবে কারো বর বিয়ের আগের প্রেমিক হয় না আর এত অল্প বয়স্কও হয় না।প্রিয়ন্তির কাঁধে হাত রেখে তাত বাবা বিছানায় বসান।তারপর ওর পাশে বসে বলেন,
"আসিফ কি নিয়ে পড়াশোনা করতে চায় ইন্টারের পরে,এ ব্যাপারে তুই কিছু জানিস?"

প্রিয়ন্তির বিস্ময় জাগে মনে।বাবার কাছে এরকম কোনো প্রশ্ন সে মোটেও আশা করেনি।বিস্ময় গোপন না করেই বলে,
"ওর ইচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া।কিন্তু এই প্রশ্ন কেন করছ বাবা?"
রাব্বানী সাহেবের কপাল কুঁচকে যায়।থুতনিতে হাত রেখে বলেন,
"কিন্তু ওর বাবা যে একটু আগে কল করে বলল, আসিফ নাকি মিলিটারীতে পরীক্ষা দিবে?"
"আমাকে তো কখনো এমন কিছু বলেনি!"
"মিলিটারীতে বিবাহিত হলে এপ্লাই করাই যায় না,টিকা দূরে থাক।এখন ওর বাবা বিয়ে পিছাতে চাচ্ছে"

প্রিয়ন্তির বুকের ভেতর ধক করে ওঠে।এই ভয়টাই সে শুরু থেকে পাচ্ছিল।আসিফ নিশ্চয়ই বিয়ে না করার এই রাস্তা খুঁজে বের করেছে।প্রিয়ন্তির শরীর কাঁপুনি দিয়ে ওঠে।বাবার এক হাত চেপে বলে,
"বাবা,এসব কি বলছ তুমি?!বিয়ের আগের দিন বিয়ে পিছাতে চাচ্ছে?!"
প্রিয়ন্তির চোখ বেয়ে পানি পড়তে শুরু করেছে।ফর্সা গাল জোড়া ইতোমধ্যে রক্তিম বর্ণ ধারণ করতে শুরু করেছে।কিছুক্ষণ আগে লাগানো কাজল চোখের পানির সাথে মিশে গেছে।সেকেন্ডের সাথে পাল্লা দিয়ে মেয়েটার কান্নার বেগ বেড়ে যাচ্ছে।ওর মনে হচ্ছে ধরণী দ্বিধা হয়ে গেছে আর তার অতল গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে।নিঃশ্বাস আটকে মুখে হাত চেপে কান্নায় ভেঙে পড়ে প্রিয়ন্তি।

রাব্বানী সাহেব মেয়ের ভেঙে পড়া দেখে ভড়কে যান।দ্রুত মেয়েকে জড়িয়ে পিঠে হাত ডলে দিতে দিতে বলেন,
"আরে মেয়ে,কাল আংটি বদল হবে!এত ভেঙে পড়ার করার কি আছে বোকা মেয়ে?কাঁদে না!কাঁদলে সবাই ভাববে বিয়ে ভেঙে গেছে! আরে মেয়ে,বিয়ে ভাঙেনি,শুধু পিছিয়েছে।আসিফ মিলিটারীতে না টিকলে এক বছর বিয়ে হবে।আর টিকলে আমরা পারমিশনের জন্য অপেক্ষা করব।ওরে মা রে! এত কাঁদে না আম্মা আমার!"

রাব্বানী সাহেব মেয়ের পিঠে হাত ডলতে থাকেন।মেয়ে কেঁদেই যাচ্ছে বাবার কাঁধে মাথা রেখে।বাবা ছোট্ট বেলার মতো আদর করে ওর কান্না থামানোর চেষ্টা করছেন,আর মেয়েও কেঁদে যাচ্ছে।এ যেন বাবার কাছ থেকে অধিক পরিমাণে ভালোবাসা পাওয়ার জন্য অভিনয়। তবে প্রিয়ন্তির ভেতরে যে যন্ত্রণা হচ্ছে,তা কেবল বিয়ে ভেঙে যাওয়া মেয়েরাই বোঝে।এত এত স্বপ্ন গত তিনদিনে প্রিয়ন্তি দেখেছে যা অল্প সময়ে কেউ দেখে না।আর মুহূর্তেই সেই স্বপ্নগুলো মরে গেছে,এটুকু মেনে নেয়া প্রায় অসম্ভব।আসিফের হাস্যোজ্জ্বল মুখ খানা চোখের সামনে ভেসে উঠছে।এত সুন্দর একটা মানুষ কেন ওকে বিয়ে না করার জন্য ছলেবলে কৌশলে পালাচ্ছে? অথচ ও নিশ্চিত পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তের যে কোনো পুরুষ ওকে বিয়ের একবার সুযোগ পেলেই তা লুফে নিবে।প্রিয়ন্তি কি তবে আসিফকে ছয় মাসে এটুকুও বুঝতে পারে নি?নাকি যা ছিল সবটাই ভ্রম?মিথ্যে ছলনা?আসিফ কি তবে সত্যিই ওকে ভালোই বাসেনি?যদি ভালোবাসত,তবে কি মিলিটারীতে জয়েন করার জন্য বিয়ে পেছাতো?

ওদিকে আয়েশা খাতুন সবাইকে ডেকে বলে দিয়েছেন আগামীকাল বরপক্ষ এসে শুধু আংটি পরাবে,কোনো বিয়ে হবে না।তবে আসিফের পরিবারের মতো প্রিয়ন্তির পরিবার ও আত্মীয়রা ইতিবাচকভাবে ব্যাপারটা গ্রহণ করেনি।তাদের সবার ধারণা, প্রিয়ন্তির ভাগ্যে খারাপ কিছু আছে।আয়েশা খাতুনের কাছে পুরো ব্যাপারটা গলায় বিঁধে থাকা মাছের কাঁটার মতো লাগছে যা মুখে আসে না,পাকস্থলিস্থও হয় না।কেবল গলায় বিঁধে থেকে যন্ত্রণার শেষ সীমায় নিয়ে যায়।

চলবে...

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen2U.Pro