Màu nền
Font chữ
Font size
Chiều cao dòng

“হ্যাঁ ভাই, আমার জামাই মরে গেছে, আমি অনেক খুশি হবো না? আমার খুশিতে কান্না চলে আসতেছে! চোখেমুখে শুধু স্বপ্ন ভাসতেছে! বুঝো না তোমরা? জামাই মরে যাওয়াতে খুশি না হয়ে আমার উপায় কি? এক জীবনে দুই পুরুষের স্বাদ পাবো, খারাপ কি? তাই না?! হাহ!”

তরী উঠে চলে আসলো বসা থেকে। ওর এক ফুফাতো বোন ওকে মেহেদী দিতে বসেছিল। আধাঘন্টা চেষ্টা করে বেশ সুন্দর করেই মেহেদী দিয়েছিল, তার পরিশ্রমে তরী পানি ঢেলে দিল। উঠে গিয়ে হাত ধুতে শুরু করল। ওর ছোট বোণ খেয়া এসে কাঁধে হাত রাখতেই তরী খেঁকিয়ে উঠল।
“আমাকে কি বলতে আসছিস? যা বলবি ওদের গিয়ে বল! আমি তো মানুষের বাচ্চা নাই এখন আর, জানোয়ারের পর্যায়েও নাই! নাহলে আমার কপালে এত দুর্গতি আসে?”
খেয়াকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তরী নিজের ঘরে গিয়ে দরজা আটকে দিয়েছে। ওর ছোট মেয়েটা ঘুম থেকে উঠে উপুড় হয়ে গেছে। মাকে দেখে সে দন্তবিহীন মাড়ি বের করে হাসলো। এই হাসি দেখে তরীর সব রাগ বরফ থেকে পানিতে রূপান্তরিত হয়েছে। উবু হয়ে মেয়েকে কোলে তুলে সারা মুখে চুমু খেলো। হাসিমুখে মেয়েটা ওর আদর উপভোগ করছে। যখন তরীর ছেলে ইশতি জন্ম নেয়, তখনও ও খুব শান্ত থাকতো। এত দুষ্টূমি করত ছেলেটা, তবুও তরীর ধৈর্যচ্যুতি হয়নি। তখন ওর স্বামী ইমরান আর ইশতিকে এক হাতে সামলেছে। ইমরান মুগ্ধ হয়ে ওকে ‘সুপারলেডি ডাকতো’। তা শুনে তরী মুখ ঘুরিয়ে হাসতো আর বলত, সব তো তোমার জন্যই!

প্রেমের বিয়ের পর স্বামী স্ত্রীর মাঝে ভালোবাসা কমে যায়- এই থিওরির উপর ভিত্তি করে এশিয়ান মানুষগুলো এরেঞ্জ ম্যারেজে ছেলে মেয়েদের বাধ্য করেন। সেই থিওরিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বিয়ের পাঁচ বছরের মাথায় তরী দ্বিতীয়বারের মত সন্তান সম্ভাবা হলো। ইমরানকে দেখে মনে হচ্ছিল প্রথমবারের চাইতেও এবার বেশি আনন্দিত। প্রতি রাতে সাড়ে তিন বছরের ইশতিকে ঘুম পাড়িয়ে ইমরান তরীকে জড়িয়ে ধরত। ভালোবাসা আলিঙ্গনে আবিষ্ট হয়ে বলত, “এবার আমাদের একটা মেয়ে হবে, পরীর মত মেয়ে। ছেলেটা তো হয়েছে একদম ক্যাপ্টেন ক্যাপ্টেন জ্যাক স্পেরোর মত। এত পাজী ছেলে তো চাইনি! তবে আমাদের মেয়েটা হবে অনেক লক্ষী, ঠিক রজনীগন্ধা ফুলের মত শান্ত শুভ্র! কি নাম রাখবো জানো?”
প্রতিরাতে শোনার পরও তরী মাথা নেড়ে বলত জানে না। ইমরান বলত, “তন্দ্রা, তোমার নামের সাথে মিলিয়ে। ওকে দেখলে আমাদের শান্তির তন্দ্রা আসবে, মোলায়েম আদুরে স্নিগ্ধ তন্দ্রা!”
তরী মোহাবিষ্ট হয়ে সেসব শুনত। পেটের উপর ঘুরঘুর করতে থাকা হাতখানা আর কানের কর্নপটে ঝংকার তোলা প্রেমিক পুরুষের কন্ঠ; এ নিয়ে তন্দ্রা পায্রি দিত ঘুমের দেশে।

ইমরানের আর তন্দ্রার মুখদর্শনের সুযোগ হয়নি, তার আগেই সে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছে। এক ঝড়ে তরীর সাজানো সংসার ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। হ্যাঁ, সবার কথাই সত্যি হয়েছে, প্রেমের সংসার টেকে না। তরীর প্রেমময় সংসার শেষ করে দিয়ে ইমরান অবেলায় চলে গেছে না ফেরার দেশে। ওদের পরিচয়ের তখন আট বছর, পরিণয়ের সাত বছর আর সংসার জীবনের সাড়ে পাঁচ বছর। তন্দ্রা তখন ওর গর্ভে সাড়ে চার মাসের।

মুহুর্মুহু কান্নায় তরী ভেঙে পড়ছে। পাশেই ওর বোন খেয়া ওর কাঁধে মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনার বানী শোনাচ্ছে। বোনের সাথে সাথে তারও কান্না পাচ্ছে, যদিও আজকাল কান্নাটা ঠিক আসে না। হয়ত কাঁদতে কাঁদতে ওদের সবার আবেগগুলো ভোঁতা হয়ে গেছে, মেনেই নিয়েছে, ওদের দুলাভাই ইমরান পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু ওর বোনের জন্য সেটা মেনে নেয়া তো এত সহজ নয়। তরীর পাশে বসে তাকে সান্ত্বনাও হয়ত কিছুদিন পর ওদের আর দেয়া হবে না। এক মাস হতে চলল, তরী বিধবা হয়েছে। তবে তরী নিজেকে এখনও বিধবা মানতে রাজী না। যখন ইমরানকে পাশে পায় না, তখন অবচেতন মন চেতন মনকে বোঝায়, ইমরান আছে, সে আসবে। আর যখন তরীর মনে পড়ে, ইমরান কখনোই আর ওর কাছে আর আসবে না, আর কখনোই ঘরে ফিরে ছেলের আড়ালে চুমু খাবে না, মাঝরাতে ওড় শরীরের উপর ইমরানের হাত খেলা করবে না, তৃপ্ত চোখে ছেলেকে আদর করতে দেখবে না, বাহির থেকে এসে ওড় ওড়নায় ঘাম মুছবে না, তখন তরীকে কেউ সামলাতে পারে না, এমন কি ও নিজেও নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। 

খেয়া ওকে একা সামলায়। ছেলেকে নিয়ে বোনের ঘরেই সে থাকে। আগে ইমরানের সাথে ওর অফিসের কাছেই একটা বাসায় থাকতো। যেহেতু আর কেউ সাথে থাকে না, তাই বাধ্য হয়ে বাসাটা ওকে ছেড়ে আসতে হয়। যেদিন ওকে সবাই মিলে নিয়ে আসে, সেদিন মাটিতে পড়ে কেঁদেছে সে। দেয়ালে দেয়ালে , জানালায়, দরজায় কোণায়, কত স্মৃতি ওর! এরচেয়ে যেন মৃত্যুও সহজ ছিল ওর জন্য। ভেবেছিল ইমরানের স্মৃতি আকড়ে ও বাঁচবে। কিন্তু তা আর হলো কই? ওর বাবা মা নিজেদের কাছে ওকে নিয়ে এসেছে। শ্বশুরবাড়ির সবাই সিলেটে থাকে বলে ওকে সেখানে কেউ যেতে দেয়নি। সেই থেকে খেয়াও সবসময় বোনের পাশে পাশে থাকে। বয়সে ছয় বছরের ছোট হলেও ওদের দুজনের মাঝে বেশ সখ্যতা। আর এমন সময় বোনই তো বোনকে সবচেয়ে বেশি বোঝে।

তরীর শরীর ধীরে ধীরে আরও খারাপের দিকে আগায়। যেখানে ইশতির সময় ওর স্বাস্থ্য বেড়েছে, সেখানে তরী ধীরে ধীরে ওজন হারিয়ে আরও কংকালসাড় হয়ে ওঠে। যেখানে গর্ভাবস্থায় চার মাসের পর থেকে বিএমআই অনুযায়ী শেষ অব্দি দশ কেজি পর্যন্ত বাড়ার কথা, সেখানে তরীর উলটো ওজন হ্রাস পাওয়া সবাইকে চিন্তায় ফেলে দেয়। তন্দ্রা যখন জন্ম নেয়, তখন অর ওজন দুই কেজি একশ গ্রাম ছিল  যা অনেকটাই কম। আর তরীরও মন মেজাজ সবসময় খারাপ থাকতো। হয়ত এটা বুঝতে পেরেই মেয়েটা মাকে একবারে যন্ত্রণা দেয় না, খুব শান্ত থাকে। তন্দ্রা যে কারো কাছে ঘুমায়, ক্ষুধা লাগল হালকা কান্না করে, এমনকি যখন তখন কান্নাও জুড়ে দেয় না। এদিকেও বাবা চলে যাওয়ায় ইশতিও আগের চেয়ে অনেক শান্ত হয়ে গেছে। একারণে জগৎ সংসারের উপর বিতৃষ্ণা ধরে গেলেও তরী ওদের দেখে শান্ত হয়ে পড়ে। এমন সন্তানদের জন্য ওর আরও হাজার বছর বাঁচতে ইচ্ছা করে, এরাই যে ইমরানের ওর কাছে রেখে যাওয়া আমানত!

চলবে...

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen2U.Pro