১৬

Màu nền
Font chữ
Font size
Chiều cao dòng

আমি আবার, আর একটা বার
লেখা #AbiarMaria

১৬

তরীর জন্য খুব কঠিন এই সময়টা। আজ ছুটির দিন, অথচ ও এক সেকেন্ডের জন্যও রিলাক্স হতে পারছে না। গতরাতে জিসানকে মেসেজ করেছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত তার কোনো জবাব আসেনি। খেয়াকে তারপর সে আবার ফোন করেছে। খেয়ার একটা কথা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে-

আপু, তুমি না হয় বিয়ে না করলে, আজীবন একাই কাটিয়ে দিলে। বৃদ্ধ বয়সে যখন ইশতি বউ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবে, তন্দ্রা যখন শ্বশুরবাড়ি চলে যাবে, তখনও না হয় তুমি একাই কাটিয়ে দিলে। এর মাঝের বছরগুলোও না হয় সিঙ্গেল মাদার হয়েই কাটিয়ে দিলে। অনেক মেয়েরাই, এমনকি অনেক ছেলেরাও আছে যারা দ্বিতীয় বিয়ে করেনি। তুমিও নাহয় একাই ওদের বাবা-মা দুজনেই হলে। কিন্তু ওরা কি কখনো বাবাকে পাবে? ওরা যখন বড় হবে, সবাইকে দেখবে বাবার সাথে খেলতে, বাবার কাঁধে চড়তে, বাবা দিবসে বাবাকে নিয়ে ছবি দিতে দেখবে, তখন কি কষ্ট পাবে না? জিসান ভাইয়া তো বাচ্চাদের অনেক আদর করে, বাচ্চারাও তাকে আপন করে নিচ্ছে। তাহলে কেন ওদের কাছ থেকে ওদের বাবার ভালোবাসা কেড়ে নিচ্ছো? কেন জিসান ভাইয়াকেও বা ওদের বাবা হতে দিচ্ছো না? ইমরান ভাইয়া তো নেই, স্বার্থপরের মত চলে গেছে। আগামী সময় গুলোয় তোমার জ্বর আসলে ইমরান ভাইয়া তোমার মাথায় জলপট্টি দিতে পারবে না, কাঁদলে চোখের পানি মুছে দেবে না, বিপদের দিনে বলবে না আমি আছি। যদি তোমার জন্য যদি কেউ থাকে, সেটা জিসান ভাইয়া। কেন এত বড় সুযোগ হাত ছাড়া করছ? কেন তাকে দূরে ঠেলে দিয়েছ? এখনো সময় আছে, তাকে জিজ্ঞাসা করো, সব ঠিক করো! আর কারো জন্য না হোক, অন্তত তোমার বাচ্চাদের জন্য হলেও এই সেক্রিফাইস করো!

তরী সারারাত ভেবেছে এসব নিয়ে। আজ জিসানকে কি কি বলবে, সেসব সাজিয়েও রেখেছে। কিন্তু জিসানের পক্ষ থেকে কোনো জবাব আসছে না কেন? জিসান কি মেসেজ দেখেনি? নাকি দেখেও...?

ভাবনা শেষ হওয়ার আগেই জিসানের মেসেজ আসলো, বিকালে বাচ্চাদের নিয়ে ওকে একটা পার্কে আসতে হবে। সেখান থেকে জিসান ওদের পিক করে নিয়ে যাবে। তবে বেশি সময় দিতে পারবে না, সন্ধ্যার মাঝেই ওকে ফিরতে হবে। আজকে মেয়ের জন্য বিয়ের শপিং এ যাবে। তরী বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে বলল, তরী! ইউ ক্যান ডু ইট!

বিকালের দিকে যখন বাচ্চাদের নিয়ে তৈরি হচ্ছিল, তখন ওর শ্বাশুড়ি নাজনীন ওর ঘরে আসলেন।
"কোথায় যাচ্ছো তুমি?"
"আম্মা, একটু হাঁটতে বের হচ্ছি ওদেরকে নিয়ে"
"দেখ, আমার নাতির কিন্তু পা ভালো হলো বেশিদিন হয়নি। এখন বের হয়ে আবার কোন কান্ড ঘটাবা? না গেলে হয় না?"
নাজনীন তীক্ষ্ণ চোখে ছেলের বউয়ের দিকে চেয়ে আছেন। তরী আমতা আমতা করে বলল,
"আম্মা, কিচ্ছু হবে না। এখন বাসায় রেখে গেলে তো ও আপনাদের বিরক্ত করবে"
"ঠিক আছে, আমি ইকরাকে বলতেছি তোমার সাথে যাওয়ার জন্য"
তরী চমকে উঠে দ্রুত নাজনীনকে আটকালো।
"না, না আম্মা,লাগবে না। আমি নাহয় ইশতিকে রেখে যাবো"

ইশতি শুনেই নাকি কান্না শুরু করল।
"আমি যাবো আম্মু, যাবো!"
"বাবা, আমি তোমার জন্য চকোচকো নিয়ে আসবো, রিঙ চিপ্স এনে দিব, কোলা আনব। তুমি ফুপির সাথে খেলো!"
"না না না, আমি যাবো, আমি যাবো! তুমি তন্দাকে নিচ্ছ, আমিও যাবো!!"
"তন্দ্রা তো ছোট। ও যখন বড় হবে, তখন ওকেও তোমার সাথে রেখে যাবো, কেমন?"
ইশতি কান্নাকাটি শুরু করলেও তরী ওকে বুঝিয়ে শুনিয়ে অনেক কিছুর লোভ দেখিয়ে বেরিয়ে আসলো তন্দ্রাকে কোলে করে। একটা রিকশা নিয়ে পার্কের উদ্দেশ্যে রওনা দিল। সেখানে পৌঁছানোর মিনিট পনের পরে জিসান এসে হাজির হলো। তরী গাছের নিচে পেতে রাখা বেঞ্চে পিঠ ঠেকিয়ে বসে ছিল, জিসানকে এদিকে এগিয়ে আসতে দেখে ও পিঠ সোজা করে বসলো। তন্দ্রা জিসানকে দেখে তার কোলে যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে গেছে, সে কিছুতেই মায়ের কোলে থাকবে না। জিসান এসেই তন্দ্রাকে কোলে নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ আদর করল। তারপর অন্য দিকে চেয়ে বলল,
"হুট করে এভাবে ডাকলে কেন? জরুরী কিছু নাকি?"

তরী জিসানকে ভালোভাবে দেখছে। জিসান ওর দিকে তাকাচ্ছে না কেন?
"এভাবে প্রশ্ন করছেন কেন? তাড়া আছে কোনো?"
"হানির সাথে শপিং এ যাওয়ার কথা"
"হানি কে?"
"যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে"
"তাহলে তো বোধহয় সমস্যা করে ফেললাম আপনার জন্য!"
জিসান জবাব দিল না। সামনেই ছোট একটা পুকুর, দুজনেই পুকুরের স্থির পানির দিকে চেয়ে আছে। এক সময় তরী আবার নীরবতা ভাঙলো।
"আপনাকে একটা প্রশ্ন করি?"
"কি প্রশ্ন?"
"এই বিয়েতে আপনি খুশি?"

এবার জিসান সরাসরি ওর চোখের দিকে তাকালো।
"সেটা জেনে কি হবে?"
"কারণ মনে হচ্ছে আপনি খুব একটা খুশি না, বিয়েটা বোধহয় মন থেকে মেনে নিতে পারছেন না"
"আমার খুশি-অখুশি, চাওয়া- না চাওয়া, কোনো কিছুতেই কিছু আসে যায় না কারো। আমার বয়স হয়ে গেছে, বুড়ো হয়ে যাচ্ছি, এজন্য বিয়ে করতে হবে। তার উপর আম্মা চাচ্ছে, আম্মার পছন্দ এই মেয়ে। বাবা মায়ের জন্য ছেলে মেয়েরা কত কিই তো করে। আমি নাহয় এটুকুই করলাম!"
"এখন কি আর এখান থেকে সরে আসা সম্ভব না?"
জিসান ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
"কেন?"
"আসলে আমি অনেক ভাবলাম। আপনি যদি এখন বিয়ে করে সুখে থাকতেন, তাহলে সমস্যা ছিল না। কিন্তু আপনি যদি ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করেন, তাহলে ঐ মেয়েকে ঠকানো হবে"
"তো? ঐ মেয়ে ঠকলে তোমার কি সমস্যা?"

তরীর নিজের মাথায় নিজের মারতে ইচ্ছা করছে। কি বলতে কি বলল সে? মাথা ঝাঁকি দিয়ে বলল,
"আসলে ঐ মেয়ের ঠকে যাওয়া তো ব্যাপার না। আসলে ইয়ে মানে, বলতে চাচ্ছিলাম যে, আপনি তো কষ্ট পাবেন"
"ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে একই কথা বলছ দেখি!"
"আমি আসলে সব ভুলে গেছি!"
তরী অস্থিরতায় মাথা চেপে গুঙিয়ে ওঠে। জিসান বেশ অবাক হচ্ছে ওর কাজ কর্মে।
"আমি একটা কথা ভেবে হয়রান হয়ে যাচ্ছি। ঠিক কি কারণে তুমি আমাকে এখানে ডেকেছ এই সময়ে?"

তরী এবার আর না পেরে সরাসরি হড়বড়িয়ে বলে বসে,
"আমি চাই আপনি বিয়েটা ভেঙে দিন!"
"মানে?! কেন?!"
"কারণ আমি চাই আমাদের বিয়েটা হোক, যেটা আপনি চাচ্ছিলেন"
তরী ভেবেছে, মিনমিন করে বলা কথা গুলো জিসান শুনবে না, অথচ জিসান ঠিক শুনে ফেলেছে।
"ইজ দিস আ জোক টু ইউ? এম আই আ জোক টু ইউ?!"

তরী জিসানের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখল। জিসান মোটেও স্বাভাবিক নেই, রেগে গেছে বেশ। কপালের কাছের রগ কয়টা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
"তোমার কাছে সব কিছু মনে হয় একটা ফাজলামো, না তরী? যখন বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গেলাম, তখন মানা করে দিলা, সবার সামনে আমাকে অপমান হতে হলো। তারপরও যখন দরকার লেগেছে, তখন তোমাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। যতদিন বিয়ে ঠিক হয়নি, ততদিন পর্যন্ত ঠিক ছিল। যেই বিয়ে ঠিক হলো, অমনি তুমি এসে বলছ, আমাকে বিয়ে করবে! এখন তোমার জন্য আবার আরেকটা মেয়ের মন ভাঙবো? মানে, তুমি কি যা যা করো, ভদবে চিন্তে করো? আমার তো মনে হয় না! এসব কথা শোনার মত সময় নেই আর এখন আমার তরী!"

জিসান তন্দ্রাকে বেঞ্চে বসিয়ে উঠে চলে আসতে চাইলে তরী পেছন থেকে জোরে বলে উঠে,
"প্লিজ, আমার বাচ্চাদের বাবার আদর থেকে বঞ্চিত করবেন না!"
জিসান পেছন ফেরে।
"আমি বঞ্চিত করেছি ওদের?"
"আপনি যদি বিয়ে করে ফেলেন, তাহলে তো ওরা বঞ্চিত হবে। এমনিতেই আল্লাহ ওদের কাছ থেকে ওদের বাবাকে নিয়ে গেছে। আমি আর তা চাই না"
"এসব তোমার আমাকে ফিরিয়ে দেয়ার আগে মনে করা উচিত ছিল!"
"আমি ভুল করেছি, প্লিজ!"
"ইটস টু লেইট তরী!"

তরীর চোখে পানি টলটল করছে।
"এটলিস্ট বাচ্চাদের জন্য ভেবে দেখেন, প্লিজ?"
"কি হবে ভাবলে? তুমি তো অনেক ভেবেছ। বলো, ইমরানকে ভুলে পারবে? ইমরানকে ভুলে আসলেও আমাকে তোমার স্বামী হিসেবে মানতে পারবে? বিয়ে হলে নিশ্চয়ই শুধু বাচ্চাদের কথা ভাবলে হবে না, আমাদেরও অনেক কিছু সেক্রিফাইস করতে হবে, বিশেষ করে তোমাকে। পারবে সেটা?"

তরীর নীরবতা দেখে সে স্মিত হেসে ধীরে ধীরে পিছিয়ে গেল।
"সি, তুমি পারবে না। শুধু তোমার আমার দুজনের সময় নষ্ট করে লাভ নেই। এন্ড ইউ লেফট মি নো চয়েস। আমার হাতে আর কিছু নেই এখন!"

জিসান ঘুরে চলে গেল। তরী মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল। ইমরানের স্মৃতি নিয়ে সে আর কত দিন আটকে থাকবে? ওদিকে অতীতে আটকে থাকার কারণে ওর বর্তমান আর ভবিষ্যত হারিয়ে ফেলেছে। মেয়েকে নিয়ে বিচ্ছিন্ন ভাবনায় ডুবে থাকতে থাকতে বাসায় এসে ঢুকলো। ইশতি মাকে দেখে দৌড়ে আসলো ওর চকলেট নেয়ার জন্য। তরীর এতক্ষণে মনে পড়ল সে কথা। নিজেকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে ছেলের কথা বেমালুম ভুলে গেছে। কাজের মেয়েটাকে টাকা দিয়ে দোকানে পাঠিয়ে ও নিজের ঘরে ঢুকে বসে বসে কাঁদছে।

ইশতি কি বুঝলো কে জানে, সে মায়ের কাছে এসে চোখের পানি মুছে বলল,
"তুমি কাঁদছ কেন? আব্বুর জন্য? আব্বু পঁচা। আমি আব্বুকে মেরে দিব যখন আব্বু আসবে!"

তরী ছেলেকে বুকে চেপে ধরে বলল,
"আমি কারো জন্য কাঁদছি না বাপ! আমার কপাল সবসময় খারাপই হয়, এজন্য কাঁদছি!"

রাতের বেলা খেয়া ফোন দিল। বোনকে আজকের কথা জিজ্ঞাসা করতেই শুনতে পেলো তার দীর্ঘশ্বাস।
"ভাইয়া মানা করে দিল?"
"হুম। বলল, অনেক দেরী হয়ে গেছে"
"কি আর করার...। থাক, ভাগ্যে নেই হয়ত। তুমি যেভাবে আছো, সেভাবেই থাকো। অন্তত চেষ্টা তো করেছ তুমি"
"হ্যাঁ, শেষ মুহূর্তে!"
"মন খারাপ করো না। জিসান ভাইয়ার কাছ থেকে দূরে থাকো। উনার সামনে গেলে এখন উনারও কষ্ট হবে, তোমারও হবে। তুমি অতীত নিয়ে নাহয় থাকলে, কিন্তু ভাইয়াকে এগিয়ে যেতে দাও। বাই দ্যা ওয়ে, জিজ্ঞাসা করেছ, সে তোমাকে পছন্দ করে কিনা?"
"নাহ, সেই সুযোগ আর পেলাম কোথায়? জেনেও বা কি হবে বল। এখন তো আর কিছু করার নেই"

তিনদিন পর।
আজ একটু দেরী হয়ে গেল তরীর ঘুম ভাঙতে ভাঙতে। চোখ খুলে দেখলো, অনেক আগেই ফজরের সময় পার হয়ে গেছে। বাসায় অল্প মানুষ থাকলেও সবাই ফজরের কিছুক্ষণ পর উঠে যায়। তরী দ্রুত ঘুম থেকে উঠে নামায আদায় করে নিল। বাচ্চারা এখনও ঘুমাচ্ছে। এখন শরৎকাল, কিন্তু কে বলবে সেটা? গরমে ঘেমে ঘেমে উঠছে শরীর, তার উপর ওর ঘরটা পশ্চিম দিকে হওয়ায় এই ঘর আরও বেশি গরম হয়। উঠে পানি খেতে গিয়ে দেখল, ওর ঘরের জগে পানি নেই। ঘর থেকে বের হয়ে পানি খাওয়ার সময় শাশুড়ী নাজনীনের কন্ঠ কানে আসলো।

"বিয়ে এইভাবে কেউ ভাঙে?"
"এখন তাহলে? সবাইকে যে জানানো শেষ?"
"কাকে বিয়ে করবে? তোমার ছেলের কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?"
"গত রাতে কথা হয়েছে? কই, আমাদের তো কিছু বলল না!"

তরী এক পাক্ষিক কথা শুনে ঠিক বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে। ওর বুঝে ওঠার আগে নাজনীন ঘর থেকে বেরিয়ে আসলেন আর তরীর মুখোমুখি পড়ে গেলেন। তরীকে দেখে চেহারাতে কাঠিন্য টেনে আনলেন।
"তরী, তোমার সাথে জিসানের কথা হইছে?"
"না তো"
"গত রাতে নাকি কথা হইছে?"
"কিন্তু কেন আম্মা? কি হয়েছে?"
"জিসান নাকি বিয়ে ভেঙে দিছে। সে তোমাকে বিয়ে করবে বলছে। তুমিও নাকি রাজী হইছ?"
"জ্বী আম্মা, আমি রাজী হয়েছি"

নাজনীন ঠিক বুঝতে পারছে না কি বলবে। সে অন্যদিকে হেঁটে চলে গেল। তরী মুখ নিচু করে ভাবছে, জিসানের সাথে তো সেদিনের পর আর কথা হয়নি। তাহলে জিসান কেন মিথ্যা বলল? আর বিয়েটাই বা কি বলে ভাঙলো? এখন কি হবে? তিন পরিবারের সবাই বিষয়টা কিভাবে দেখবে?

চলবে...

(রোযা আর ঈদের কারণে এতদিন গল্প অনিয়মিত ভাবে দিয়েছি। ইনশাআল্লাহ এখন থেকে আবার নিয়মিত গল্প পাবেন)

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen2U.Pro