Màu nền
Font chữ
Font size
Chiều cao dòng

আমি আবার, আর একটা বার
লেখা #AbiarMaria

পরদিন আর জিসান বাসায় আসলো না। বিস্ময়কর ভাবে ইশতিও খুব বেশি যন্ত্রণা দেয়নি। ইকরা ভার্সিটি থেকে এসে ভাতিজাকে নিয়ে ব্যস্ত ছিল। একটা খেলনা ট্রেন কিনে নিয়ে এসেছে সে ভাতিজার জন্য যা দিয়ে দুজনে কুট কুট করে খেলছে। তরীর এসব দেখে স্বস্তি লাগছে। এভাবেই সব চলুক, তাহলে আর চিন্তা করতে হবে না ওর।

পরদিন রাতের খাবারের আগে জিসান বাসায় আসলো। সবাই এক সাথে খাওয়ার পর ইশতিকে জিসান ঘুম পাড়িয়ে কোলে করে তরীর ঘরে নিয়ে আসলো। তরী তখন বিছানা গোছাচ্ছে, জিসানকে দেখে সে মাথায় কাপড় টেনে নিল।
"আপনি কষ্ট করে ওকে আনতে গেলেন কেন? আমিই ওকে নিয়ে আসতাম"
"সমস্যা নেই। কোথায় শোয়াবো?"
তরী হাত দিয়ে বালিশ দেখিয়ে দেয়। ইশতিকে সন্তর্পনে শুইয়ে তরীকে বলল,
"একটা প্রশ্ন করব?"

তরীর মনে সাথে সাথে অস্বস্তি আর ভয় ঢুকে গেল যা ওর চোখে মুখে প্রকাশ পাচ্ছে। জিসান হাত তুলে আশ্বস্ত করল।
"এত ভয়ের কিছু নেই। না চাইলে প্রশ্ন করব না!"
"নাহ, প্রশ্ন করুন"
"তোমার আমাকে নিয়ে কি সমস্যা হচ্ছে? আমাকে তুমি বোধহয় পছন্দ করছ না। ঠিক কি কারণে? বিয়ে নিয়ে তো কেউ কিছু বলার কথা না। তাহলে?"
"আমি আসলে চাচ্ছি না ও আপনাকে বাবা ডাকুক। আমাদের তো আর বিয়ে হয়নি যে আপনি ওর বাবা হবেন!"
"তুমিই তো বিয়েতে আপত্তি করলে"
"হ্যাঁ করলাম। আমার জন্য কত কষ্টের, সেটা আমি বারবার বলেছি"
"ওকে!"
"ইশতির জানা দরকার, ওর বাবার নাম ইমরান, ওর বাবা বেঁচে নেই। আপনাকে চাচ্চু ডাকা শিখাতে হবে। আমি চাই না এরকম অকওয়ার্ড সিচুয়েশনে আপনি আর আমি পড়ে যাই! যেভাবে চলছে, মানুষ আমাদের ভুল বুঝবে!"

জিসান বুকে হাত ভাঁজ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে, কপালের ভাঁজগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তরী হাত কচলাতে কচলাতে বলল,
"ব্যাপারটা আমার জন্য খুব অস্বস্তিকর। আর আপনার সাথে ওর এত এটাচমেন্টও আমার কাছে ভালো লাগছে না। আমি চাই আপনি কম কম আসুন। তাহলে আমার ছেলেও আপনাকে ছাড়া অভ্যস্ত হয়ে যাবে"
"আর আমাকে ওর থেকে দূরে সরানোর কারণ?"
"আগেই বলেছি, আপনি বিয়ে করলে তখন ও আপনার কাছে এখনের মত গুরুত্ব পাবেনা। আমি ঐ সময় ওকে কিভাবে বুঝাবো? এজন্য এটাই ওর জন্য মঙ্গল যে ও সত্য জানুক। আর সেটা আপনিই ওকে বুঝাবেন"
"তার মানে তুমি চাচ্ছো আমি অন্য কোথাও বিয়ে করে ফেলি?"
"সেটাই তো মঙ্গলজনক হবে, তাই না? আপনার বয়স তো বসে নেই। আমি যতদুর জানি, আপনার বত্রিশ বছর চলছে। এখনই তো উপযুক্ত সময়"

জিসান দীর্ঘশ্বাস গোপন করল। কৃত্রিম হাসি টেনে আনলো।
"ঠিক আছে, তুমি যা চাও তাই হবে। আর বিয়ের ব্যাপারটা দেখছি। ওসব আম্মু চাচীর ব্যাপার"
জিসান ফেরার জন্য ঘুরে দাঁড়ালে তরী তাকে আবার থামালো।
"আরেকটা কথা। আমার চাকরির ব্যপারে তো কিছু..."
"দুই মাস সময় নাও। আমি এর মাঝে কথা বলছি তোমার চাকরির ব্যাপারে। সিভি মেইল করেছ?"
"হ্যাঁ, আপনি চেক করতে পারেন"
"ঠিক আছে। আচ্ছা, আমরা তো বন্ধুর মত থাকতে পারি, পারি না?"
তরী বুকে হাত বেঁধে দেয়ালে হেলান দিয়ে ঘাড় কাত করে জিসানের দিকে তাকালো।
"ভাইয়া, আমাদের কিন্তু আগে থেকে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। আমরা কখনো একে অপরের চক্ষুশূল ছিলাম না। মাঝখানে বিয়ের কথা এসে সব প্যাচ লাগিয়ে দিয়েছে"
"ঠিক আছে, সব বাদ দাও। লেটস বি লাইক বিফোর?"

তরী ওর টোল পড়া মিষ্টি হাসি উপহার দিল। জিসান পালটা হাসি দিয়ে চলে আসলো।

জিসানদের বাসার সামনে খোলা গোছানো বাগান আছে। জিসান সেটা পার হয়ে সিঁড়িতে পা রাখতেই ওর মা প্রশ্ন করল,
"এত রাতে কোত্থেকে এসছিস?"
"চাচার বাসায় গিয়েছিলাম"
"তরীর কাছে?"
"না, বাচ্চাদের কাছে"
জিসানের মা জোছনা এগিয়ে আসেন।
"মেয়ে তো তোকে বিয়ের জন্য মানা করে দিল। এরপরও কেন যাস? কি আছে ঐ মেয়ের মাঝে? একে তো আমার দেবরের ছেলেকে শেষ করে দিয়েছে, তার উপর দুই বাচ্চার মা!"
"আম্মু, ইমরানের মারা যাওয়ার উপর ওর কোনো হাত ছিল না! ও কি নিজে ইমরানকে মেরেছে? আশ্চর্য!"
"কিন্তু কেন তরী? কেন অন্য কোনো মেয়ে না?!"

জিসান আস্তে করে মায়ের হাতে হাত রেখে ক্লান্ট কন্ঠে বলল,
"এখন থেকে আর তরী না, এখন অন্য কোনো মেয়েই। আমার জন্য মেয়ে দেখো, তুমি যে মেয়েকে পছন্দ করবা, তাকেই বিয়ে করব। ঠিক আছে?"
মাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে জিসান নিজের ঘরে চলে আসলো। জোছনা খুশি হয়েছেন। ছেলের পরে তার আরেক মেয়ে বাকি আছে। ছেলের সুমতি হলেই তিনি খুশি।

তরী যথেষ্ট সন্দিহান ছিল জিসানের ব্যাপারে। ওর মনে হয়েছে জিসান আসলে কথা রাখবে না। তরীকে ভুল প্রমাণ করে জিসান সত্যি সত্যি এই বাসায় আসা কমিয়ে দিল। ইশতি কাঁদলেও জিসান আসত না খুব একটা, ফোনে কথা বলে সান্ত্বনা দিত। তরী সন্তুষ্ট, ওর মনে হয়েছে, এরকমটাই তো জিসানের বৈশিষ্ট্য। একজন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ কখনো এত বার রিজেকশন আর নিষেধের পরও বারবার আসতে পারে না। তরীর সাথে এখন জিসানের একটা ভালো সম্পর্ক চলছে। মাঝে মাঝে খবর নেয় ও, তরীও ভালো ব্যবহার করে আগের মতই। মাঝে মাঝে তাদের গল্প হয়, তরী অনেক কথা বলে, জিসান শোনে।

কয়েক মাস পর তরীর একটা নতুন চাকরি হলো। তন্দ্রার তখন আট মাস চলছে। হাটি হাটি পা পা করে সে যেকোনো কিছু ধরে দাঁড়িয়ে যায়, কিন্তু ভারসাম্য রাখতে পেরে ধুপুসধাপুস পড়ে যায়! ওর আশেপাশে সার্বক্ষণিক কাউকে না কাউকে থাকতেই হয়। চাকরির কথা শুনে ওর শাশুড়ী ওকে বলল,
"দেখো মা, তোমার মেয়ে এখনো অনেক ছোট। এক দেড় বছর হোক, তখন চাকরিতে যেও। এত ছোট বাচ্চাকে আমি একা কি সামলাতে পারব? আবার আমার নাতিও তো কম যায় না। দুটো বাচ্চাকে একা কিভাবে সামলাবো বলো?"

তরীর মনে হলো, ওর মা হলে নিষেধ করত না ওকে, যেভাবে হোক ম্যানেজ করত। কিন্তু শাশুড়ীকেও তো বাধ্য করতে পারে না। ইমরান বেঁচে থাকলে আজকে কি ওর এই দিন দেখতে হত? অবশ্য ইমরান থাকলে ও চাকরি করার কথাও ভাবত না। মুখ গোমড়া করে জিসানের নাম্বারে সে ডায়াল করল।
"জিসান ভাইয়া, আম্মা রাজি হচ্ছে না"
"কেন? চাচীর সাথে তো আমি কথা বললাম। কি সমস্যা?"
"আম্মা বলতেছে, তন্দ্রা এখনো ছোট। এক দেড় বছর পরে চাকরি করতে। অথচ আমার হাতে টাকার শর্ট। আমি চাকরি না করলে টাকা পাবো কোথায়? চলতে তো টাকা লাগে আমার!"
"চাচা তোমাদের খেয়াল রাখছে না?"
"রাখছে। কিন্তু সব কিছু কি আব্বার কাছে চাওয়া যায়? আমারও তো একটা হাত খরচ আছে। ফোনে টাকা লাগে, এটা ওটা খেতে ইচ্ছা করে, ব্যক্তিগত কত প্রয়োজন আছে! শ্বশুর তো আমাকে পালতে বাধ্য না। ঠিক আছে আমি তাদের কাছে আছি। কিন্তু ওদের সব খরচ তো আব্বার উপর আমি দিতে পারি না!"
"বুঝতে পেরেছি। এক কাজ করো, তুমি একটা কাজের মেয়ে খুঁজে বের করো। অফিসে যতক্ষণ থাকবা, সে খেয়াল রাখবে। চাচী আর ইকরা তো আছেই, সমস্যা কি?"

তরীর মুখ উজ্জ্বল হয়। এই তো সমাধান হয়ে গেছে! এক সপ্তাহের মাঝে একটা বারো বছরের ছোট একটা মেয়েকেও পেয়ে গেল। আজকাল কাজের মানুষের খুব চড়া চাহিদা, খুঁজে পাওয়াই মুশকিল। তরী তবুও বেশি বেতনে মেয়েটাকে রেখে দেয়। মেয়েটাকে দেখে ওর শাশুড়ী নাজনীনও আর দ্বিরুক্তি করেন না। তিনি বুঝে গেছেন, এবার আর তরী দমবে না।

চাকরি প্রথম দিকে ভালোই যাচ্ছিল। একটা কোম্পানিতে জুনিয়র অফিসার হিসেবে জয়েন করেছে ও। প্রথম প্রথম ভালো লাগলেও আজকাল আর ভালো লাগে না। কোনো অভিজ্ঞতা না থাকায় তরীকে বারবার ধাক্কা খেতে হচ্ছে। ওর সিনিয়র স্যার গুলো বেশিরভাগ মধ্য বয়সী আর বদমেজাজী। ঝাড়ি খেতে খেতে তরীর কাছে চাকরি করার চাইতে মরে যাওয়া সহজ মনে হচ্ছে। সারাদিন এই টেবিল থেকে ঐ টেবিলে ফাইল নিয়ে ছুটে যায়।

দুই সপ্তাহ পর এক রাতে জিসানের কল আসলো।তরী তখন মাত্র গোসল সেরে বেরিয়ে এসেছে। তরীর কন্ঠ শুনে সে প্রশ্ন করলো,
"আপসেট মনে হচ্ছে খুব? সমস্যা কোনো?"
"টায়ার্ড অনেক ভাইয়া! তার উপর আমার জীবনটাই তো সমস্যার গোডাউন হয়ে গেল! কয়টা বলব?"
"সিরিয়ালি বলো৷ শুনি"
"যে চাকরি ম্যানেজ করে দিলেন, ওখানের স্যারগুলো একেকটা খন্নাস!"
"কেন কেন? খারাপ কিছু বলেছে নাকি?"
"আমাকে যা তা বলে! বলে, কাজ না জানলে এখানে এসছেন কেন? বাসায় যান! আরে ভাই, সবাই কি মায়ের পেট থেকে কাজ শিখে আসে? তুই  কি মায়ের পেট থেকে কাজ শিখে এখানে এসছিস?"

ফোনের ওপাশে জিসান হেসে ফেলল।
"এই জবাব কি স্যারকে দিয়ে এসছ তুমি?"
"মাথা খারাপ? পরে রিজাইন লেটার ধরিয়ে দেবে!"
"ভাবলাম, তোমার তো আবার মাথা গরম বলেও ফেলতে পারো!"
"ইশ, মোটেও না। অফিসে আমি একদম গরম দেখাই না"
"সেটাই। অফিসে এসব করা যাবে না। সিনিয়ররা এমন একটু হয়ই। তারাও তো তাদের সিনিয়রদের থেকে প্রেশারে থাকে, তাই জুনিয়রদের প্রেশারে রাখে। যাই হোক, ঠিক হয়ে যাবে সব, চিন্তার কোনো কারণ নেই। একটা নিউজ আছে"
তরী ফোন কাঁধ দিয়ে কানের সাথে চেপে ধরে দুই হাতে চুল মুছতে মুছতে প্রশ্ন করল,
"কি নিউজ?"
"আমার বিয়ে"

কথাটা শুনে তরী স্বাভাবিকভাবে হাসি দিল।
"ওয়াও! কংগ্রেজুলেশান! সব ঠিক হয়ে গেছে? আম্মা যে কিছু বলল না আমাকে?"
"না, কথাবার্তা চলছে। এখনো কিছু পাকা হয়নি। এই সপ্তাহে আমাদের বাসায় ওরা আসবে। তখন সব ফাইনাল হবে আশা করা যায়"
"ওহ, এখনো দেখাদেখি চলছে। আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছিল আগামীকালই কবুল বলবেন! খুব কনফিডেন্ট আপনি"
"এখন পর্যন্ত সমস্যা হয়নি, এজন্য বললাম। বিয়ের হওয়ার সম্ভবনা নব্বই ভাগ"
"যাক, তাহলে অগ্রিম শুভেচ্ছা আর শুভ কামনা থাকলো! আশা করি সবকিছু ঠিক ঠাক হবে!"
"হ্যাঁ, ইনশাআল্লাহ"

ফোন কেটে জিসান চুপচাপ ছাদের দিকে চেয়ে শুয়ে থাকলো। কিছুক্ষণ পর ওর চিলেকোঠার ঘরে গিয়ে ওর ডায়রি বের করে লিখলো-

তরী আমার বিয়ের কথা শুনেও খুব স্বাভাবিক আছে। ওর মনে আমার কোনো যায়গা বোধহয় আমি কখনোই করতে পারিনি। নাহয় অন্তত এখন ওর আমাকে হারানোর একটা ভয় কাজ করত। তার মানে তরী খুশিই হয়েছে। ভালোই হলো, ও আমাকে বিয়ে না করুক, অন্তত ধরে তো রাখেনি। পুরে গল্পে বোধহয় আমিই শুধু ওকে ধরে রাখার বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছি। বিধাতা বোধহয় এমনটা চাননা। তিনি নিশ্চয়ই যা করবেন, ভালোই করবেন!

এইটুকু লিখে ডায়রি বন্ধ করে চোখ বুঁজলো। চোখ বুঁজলেই আজকাল তরী তার টোল পড়া হাসি নিয়ে ওর স্বপ্নে হাজির হয়। যদি না ই আসবে জীবনে, তবে কেন হাজির হয় স্বপনে?

চলবে...

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen2U.Pro