Màu nền
Font chữ
Font size
Chiều cao dòng

#আমি_যাদুকর
লেখা #AbiarMaria

তিন্নি আজ বাইরে বের হয়নি। আজ কোনো টিউশানি নেই। সামনেই টঙ্গী সরকারী কলেজে ভর্তির সুযোগ আসবে, এখনো নোটিশ দেয়নি। তিন্নি মোটামুটি আশাবাদী, সেখানের প্রথম মেরিট লিস্টে নাম চলে আসবে। পরীক্ষাও ভালোই হয়েছে। ফল প্রকাশ হয়নি বলে এই আলস্য যাপন। বাইরে শীতের সন্ধ্যে নামছে। মফস্বল এলাকা বলে এখানের অবস্থা গ্রামের মতই, তীব্র শীতে নাস্তানাবুদ অবস্থা হয়। তবে  এই বছর শীতের প্রকোপ কম। তাই জানুয়ারি মাসেও পাতলা সোয়েটার কিংবা চাদর গায়েই মানিয়ে নেয়া যাচ্ছে। রাত ঘনালে শীত বাড়ে, তবে সে কথা আলাদা। দিনে অন্তত নির্ভেজাল ভাবে থাকতে পারে, এই বেশি। তিন্নির কাছে শীতের কাপড় পরাকে বড়সড় ভেজাল মনে হয়। নিয়মিত বাইরে বের হলেও একটা চাদর দিয়ে বের হয়। হাঁটাহাঁটি করার এক পর্যায়ে শরীর গরম হয়ে ওঠে, বাষ্পের মত ঘাম বেরোনোর চেষ্টা করে। তখন চাদরটা এক পাশে সরিয়ে রাখলেও বিশেষ অসুবিধা হয় না।

সারাদিন কিছুটা উষ্ণতা পাওয়া গেলেও সন্ধ্যে নামতেই ঝপ করে শীতের আনাগোনা বেড়ে যায়। শীতের প্রকোপে সমস্ত জীবসমাবেশের কাজে স্থবিরতা দেখা দেয়। কুয়াশায় এক হাত দূরের বস্তুও অনেকটা অস্পষ্ট হয়ে ওঠে। তিন্নি লেপের তলে শুয়ে শুয়ে এই শীতে বই পড়ছিল। আজমেরী হোসেন সেলাইয়ের মেশিনে একটা জামা সেলাই করছেন। নতুন অর্ডার পেয়েছেন তিনি তিনটা থ্রিপিস বানানোর। আশেপাশের কিছু মানুষ তাকে কাপড় দিয়ে যায়। ঘরোয়া টুকটাক কাপড় সে সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে বানায়। কিছুক্ষণ আগে মাগরিবের নামাজ পড়েছে। সেলাইয়ের মেশিনে বসে কাপড় সেলাই করছে আর দুয়া পড়ছে। জায়নামাজে বসে বসে দুয়া পড়বে, সেই সময় নেই।

তাহের ঘরের সামনে করিডরে বল খেলছে। সুযোগ পেলেই এই ছেলে বল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়। তারপর ওর মাকে কান ধরে ঘরে নিয়ে আসতে হয়। পড়ালেখায় ছেলেটা বেশ উদাসী, তিন্নির মতো অত ভালো ছাত্র সে নয়। একারণে মায়ের কাছে বকাও খেতে হয়। তবুও ছেলে মানুষ তো, কিছু না কিছু একটা সে করবেই। আরেকটু বড় হলেই হয়ত তার মাঝেও বুঝ আসবে, মা বোনের দায়িত্ব কি বুঝতে পারবে।

এমন সময় ওর ছোট মামাতো ভাই রাজু এসে বলল,
"আব্বা ফুফুরে ডাকছে। তিন্নি আপুরেও যাইতে বলছে"
তাহের বল খেলা বন্ধ করে মামাতো ভাইয়ের দিকে তাকালো।
"ক্যান?"
"জানি না। আব্বা বলছে, জরুরী কথা আছে"

রাজু এবার পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। বয়সে ছোট হলেও রাজুরও ভাবসাব আলাদা। তাহেরের সাথে ওরা কোনো ভাইই চলতে চায় না। আজমল হোসেনের বড় ছেলে আকাশ, মেঝ ছেলে জহির আর ছোট ছেলে রাজু। তিন ভাইই ওদের ফুফাতো ভাই বোনদের তাচ্ছিল্য করে চলে, দূরে দূরে থাকে। সন্তানদের এহেন ব্যবহার শিক্ষাদান আজমল হোসেনের স্ত্রী রিনি বেগমের কাজ। তিনি সামনাসামনি বিশেষ ঝামেলা না করলেও ভেতরে ভেতরে স্বামী আর ছেলেদের কানে কান পড়া ঠিকই দেন। তার ইশারায় যে আজমেরী হোসেনের আপন ভাই তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে রাখে, সেটা বোন হয়ে বেশ বুঝতে পারেন। অথচ বিয়ের সময় আজমেরী হোসেন একমাত্র ভাবীর জন্য কি না করেছিলেন! সবসময় ভাবীর পাশে থাকা, তার খেয়াল রাখার প্রতিদান তাকে এভাবে পেতে হবে, জানলে হয়ত সব কিছু অন্য রকম হতো।  তবুও তার মনে হয়, একদিন জীবনে সুদিন আসবে।

আজমলের ডাকে তিন্নি আর আজমেরী বেরিয়ে আসেন ঘর থেকে। যতবার এমন ডাক পড়ে, ততবার তাদের কোনো না কোনো কটু কথা শুনতে হয়, কিংবা আজমল তার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন বোন-ভাগ্নীকে। তাই ঘরে ফেরার সময় দুজনের মুখ অন্ধকারে ছেয়ে থাকে। এবারো তার ব্যতিক্রম হবে না, এই ভেবে মা মেয়ে ঘরের কর্তার দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়। আজমেরী হাল্কা কাশি দেন।

"আসবো?"

আজমল হোসেনের মুখ বেশ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। আগ্রহের সাথে সে দাঁড়িয়ে ওঠে বলল,
"আয়! ভেতরে আয়!"

ওরা দুজনে ঘরের ভেতর ঢুকলো। এই ঘরটা আজমেরীকে দেয়া ঘরের দ্বিগুণ। অথচ আসবাবপত্র তার অর্ধেক। এক কোণায় একটা কুইন সাইজ সেগুন কাঠের খাট, একটা ড্রেসিং টেবিল, একটা বিশাল লোহার আলমারি, আর এক সেট সোফা। আজমল বিছানায় বসে আছেন। তিনি বোন আর ভাগ্নীকে সোফায় বসতে ইশারা করেন। মা-মেয়ে বেশ অবাক হলো। ওদের সাধারণত সোফায় বসতে দেয়া হয় না। যতক্ষণ এখানে কথা বলে, ততক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে; হোক তা পাঁচ কিংবা দশ মিনিট। আজ হঠাৎ সোফায় বসতে বলায় দুজনেই বিস্মিত। আজ সূর্য কোন দিকে উঠলো?

আজমল হোসেন প্রথমে তিন্নির বিষয়ে কিছু খোঁজখবর নিলেন হালকা গলায়। তিন্নি কেবল মাথা নেড়ে, 'জ্বি, ভালো' এইটুকুতে সীমাবদ্ধ রইলো। ওরা অবাকের চূড়ান্তে গিয়ে পৌঁছলো যখন রিনি বেগম কিছু ভাজা নাস্তা এনে ওদের সামনে রাখলো। সেখানে দুটো মিষ্টিও আছে। কি আশ্চর্য! এত খাতিরদারি কেন হচ্ছে? আজমেরী আর তিন্নি দুজন দুজনের মুখ চাওয়া চাওয়ি করলো। এই বাড়িতে ভালো মন্দ যাইই রান্না হোক, বেশিরভাগ রান্না আজমেরীকেই করতে হয়। রিনি বেগম ননদকে আদেশ দিয়েই খালাস। হ্যাঁ, মাঝে মধ্যে দেখতে আসেন, ননদ আবার চুরি করে তার ছেলেমেয়েদের কিছু খাইয়ে দিল কিনা! মাছের টুকরো, মাংসের টুকরো তিনি গুনে গুনে দেন। রান্নারও পরও সেসব গুনে দেখেন। তবুও আজমেরী সহজে খাবার সরায় না। কিছু সময় যখন খাবার সরান, খুব সাবধানে সরান। তাই সবার খাবার শেষে মাছের লেজ আর মুরগীর গলা, ঠ্যাং ওদের ভাগ্যে জোটে।

সেই ভাগ্যে কিনা এই বাড়ির নাস্তা জুটছে? এও সম্ভব? আজমেরী কিংবা তিন্নি- কেউই নাস্তায় হাত দেয়ার সাহস করে না। কে জানে, খাবার হয়ত আজমলের জন্য এনেছে। ওদের কি খাবার দেবে নাকি? নিশ্চয়ই না!

অথচ ওদের ভুল প্রমাণ করে আজমল হোসেন আকর্ণ হেসে বললেন,
"তিন্নি মা, নাস্তা নাও। তোমার মামী তোমাদের জন্য নিয়ে আসলো। খাও খাও। আজমেরী, তুইও খা। নে নে"

দুজনের কেউই তবুও সাহস করলো না নাস্তা নেয়ার। কেবল বিস্মিত হয়ে ভাবতে থাকলো, এই নাস্তা কি বলি চড়াবার আগে যে ফুলের মালা গলায় দেয়া হয় বলির পাঠার, ভালো ভালো খাবার দেয়া হয়- তেমন কিছু? আজমেরী শুকনো কন্ঠে ঢোক গিলে বললেন,
"ভাই, কেন ডাকছেন যদি বলতেন?"

আজমল আবারও সহাস্যে বললেন,
"আরে, তোদের জন্য তো সুখবর আছে! আমাদের তিন্নি মা তো বাজিমাত করে ফেলছে!"
তিন্নি বেশ অবাক হলো। ও তো কখনো বিশেষ কিছু করেনি এমন বিশেষণে বিশেষায়িত হওয়ার জন্য! ঢাকা কিংবা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও পরীক্ষা দিতে পারেনি টাকার অভাবে। অথচ ওর বড় দুই মামাতো ভাই ঢাকায় মেসে থেকে প্রাইভেটে পড়ছে। তিন্নি ঝড়ের গতিতে ভাবনার চাকা চালাচ্ছে, ও এমন কি করেছে বাজিমাৎ করার মতো। আজমল হোসেন আরও এক গাল হেসে বললেন,
"আমাদের খান সাহেব আছে না? শামসুদ্দীন খান? উনার বড় ছেলে, রায়হান খান। তার জন্য আমাদের তিন্নিরে উনার পছন্দ হইছে! এত বড় ঘর থেকে সম্বন্ধ আসবো, কখনও ভাবি নাই! আমাদের তো মাইয়া নাই। তিন্নিও আমাদের মাইয়া। ওরে পছন্দ করছে, কি সৌভাগ্য আমাদের!"

এরপরের কিছু সময় সে বর্ণনা করতে থাকলো ওরা কত সৌভাগ্যের অধিকারী। ওদের ঘরে সৌভাগ্য নিজের এসে ধরা দিয়েছে। এদিকে আজমেরী ঘামছে। মেয়েকে সে অবশ্যই ভালো ঘরে বিয়ে দিতে চেয়েছে। কিন্তু তাই বলে এত আকাশ পাতাল পার্থক্যের মাঝে বিয়ে দেয়াটা মোটেও সে সমর্থন করে না। আমাদের সমাজে মেয়েদের কেবল বিয়ে দিলেই হয় না, তাদের শ্বশুর বাড়িকে ম্যান্টেইনও করতে হয়। ফিরা ফিরতি, প্রতি ঈদে কাপড় দেয়া, দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানো, মিষ্টি পিঠা দেয়া, জামাই আদর করা, কত কি! নিজেদের সমান হলে কিছুটাও হয়ত আপ্যায়ন করার সুযোগ থাকতো। এত বড় বাড়িতে মেয়ের বিয়ে হলে কুটুমদের আপ্যায়ন করবেন কি দিয়ে?! বাজারের সবচেয়ে দামী খাবার, দামী কাপড় দিলেও তো এদের কাছে কম পড়ার কথা। আজমেরী মিন মিন করে বলার চেষ্টা করেন,
"ভাই, এত বড় ঘরে সম্বন্ধ... মানে... কিভাবে কি করবো? আমি তো কিছুই বুঝতে পারেতেছি না"

আজমল বোনকে আস্বস্ত করেন,
"আমি থাকতে এত চিন্তা কিসের? তাছাড়া খান সাহেব নিজে আমার কাছে এসে বলছে। আমি তো যাই নাই। উনাদের আগ্রহ হলে সমস্যা কি?"
"কিন্তু ভাই, বিয়েতে দেয়া নেয়া..."
"উনাদের শুধু মেয়েটা লাগবো, আর কিচ্ছু চায় না। মেয়ে হইলেই হইব"

তিন্নি মাথা নিচু করে মায়ের পাশে বসে আছে। এবার শুরু হলো রিনি বেগমের বক্তৃতা। এই বিয়েতে সবাই কতটা লাভবান হবে, তিন্নির যে কখনো এত সম্বন্ধ আসার কথা ছিল না, এই সম্বন্ধ আসার ক্রেডিট তার বরের এবং এই সম্বন্ধ ফিরিয়ে দিলে তিন্নিকে যে আর কেউ বিয়ে করবে না- এই ছিল তার কথার সারমর্ম।

এদিকে তিন্নির চোখের কোলে শিশির বিন্দুর মত অশ্রু কণারা ভীড় করতে শুরু করেছে, যেমন করে ঘরের বাইরে কুয়াশায় মোড়ানো সবকিছুতে শিশির জমছে। সবাই যেন এক হয়ে দুঃখ কুড়িয়ে দুঃখ জমাচ্ছে। তিন্নির বুক ভেঙে যাচ্ছে। মামা মামীর কথার তোড়ে ওর মাই তো কিছু বলতে পারছে না, সেখানে ও কি বলবে? কত স্বপ্ন ছিল নিজেকে নিয়ে, এই কারাগার থেকে মা ভাইকে বের করার কত পরিকল্পনা ছিল। কিছু কি হবে না? এখন কি নতুন এক কারাগারে বসতি গড়তে হবে? তিন্নি তো কখনো ধনী কোনো ঘরের অংশ হওয়ার স্বপ্ন দেখেনি! ধনী মানুষগুলো ধন দৌলতের বদৌলতে মনুষত্ব হারিয়ে বসে থাকে। সেখানে ভালো মানুষ গুলো হয় সেসব বড় বড় বাড়ির খুঁটির মতো; নির্জীব নিষ্প্রাণ। তিন্নি কোনো দিন বড় লোক বাড়ির খুঁটি হতে চায়নি। তবে কেন আজ এই দিন দেখতে হলো? আল্লাহ কি ওর কোনো ইচ্ছাই কবুল করবেন না?

তিন্নি আর ওর মাকে বিভিন্ন ভাবে বুঝ দিয়ে প্রস্তুত থাকতে বলে আজমল হোসেন ওদের ঘরে যেতে বললেন। তিন্নি রুদ্ধ কন্ঠে কোনো মতে মামাকে বলল,
"মামা, ক'দিন আগে যে আপনাকে বললাম, ভুলে গেছেন কথা গুলো?"

আজমল হোসেনের কয়েক সেকেন্ড লাগে ওর কথা বুঝতে। মুহূর্তেই তার মুখ অন্ধকার হয়ে গেল। ঠান্ডা গলায় বলেন,
"এসব মাথা থেকে ফালাও। এত বড় বাড়ির বউ হলে ঠিকই পড়াবে। আর না পড়াইলেও অসুবিধা নাই। পড়ালেখা কইরাও ওদের সমানে কোনো দিন যাইতে পারবা না"
রিনি বেগম মাথা নাড়েন।
"হ! মাইয়া মানুষের কাজই তো বিয়া শাদী আর সংসার করা। এত বড়লোকের বাড়ির বউ হইলে পড়ালেখা দিয়া কি হইব?"

আজমেরী তার মেয়েকে নিয়ে ঘরে আসেন। তিন্নি বিছানায় শুয়ে এক কাত হয়ে কাঁদতে শুরু করলো। কাঁদতে কাঁদতে ওর নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আজমেরী মেয়েকে টেনে বুকে জড়িয়ে নিজেও কেঁদে ফেলেন।

"আমার জানি কেন কিছু ভালো লাগতেছে না। এত বড় বাড়ির মানুষ কেন তোরে পছন্দ করব? কি তাদের স্বার্থ? আমি কেমনে কি করব? ওদের ফিরাবো কেমনে? তোর মামা মামী তো এই বিয়ে ভাঙতে দিব না। আমি জানি না, আমার ভালো লাগতেছে না"

তিন্নি কাঁদতে কাঁদতে বলল,
"আম্মু, মামা মামী নিজেদের স্বার্থে আমাকে শূলে চড়াচ্ছে। আম্মু, আমি কি করবো? আমার কি কিছুই করার নাই?"

কিছুদিনের মাঝে ওরা বুঝে গেল, ওদের কিছুই করার নেই। আজমল আর রিনি সব প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। খান সাহেব কয়েক নিয়ে এসে বিয়ের তারিখ পাকা করে যাবে। তার ছেলে আসবে না, দেখবেও না। আজমেরী রায়হান খানের ব্যাপারে তথ্য যোগাড়ের চেষ্টা করেছেন। এতে তিনি শিউরে উঠেছেন। রায়হান খান নেশাগ্রস্ত মানুষ। নিয়মিত সে মদ খায়। আগেও তার বউ ছিল, মারা গেছে। যদিও কেউ দেখেনি বউয়ের লাশটুকুও, তবে সবার মুখে মুখে চাউর হয়েছে, বউকে পিটিয়ে অত্যাচার করে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ঘটিয়ে মেরেছে। আজমেরী একা একা কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন। এখানে বিয়ে দেয়া আর জ্বলন্ত চিতায় ফেলে দেয়ার মাঝে কি কোনো পার্থক্য আছে?

তিন্নি ভেতরে ভেতরে একেবারে মরে যাচ্ছে। সেও রায়হান খান সম্পর্কে শুনেছে। সব শুনে ওর বাঁচার ইচ্ছাটা শেষ হয়ে গেছে।

তিন্নির ঘর থেকে বেরোনো নিষেধ। বিয়ের কনে, বাইরে গেলে নজর লাগবে যে। তিন্নি তবুও একদিন সন্ধ্যার পর চাদর পেঁচিয়ে বেরিয়ে এলো। এলোমেলো ভাবে হাঁটতে হাঁটতে চলে এলো মহাসড়কে। অন্ধকারে রাত জাগা নিশাচর প্রাণীর মতো গাড়িগুলো বড় বড় চোখ মেলে ছুটে যাচ্ছে। যে কোনো একটা গাড়ির পথে পড়লেই অভিশপ্ত জীবনটা শেষ করে ফেলা যাবে। তিন্নি এক দৃষ্টিতে চেয়ে ভাবতে থাকে, কোনটার সামনে লাফিয়ে পড়বে? বাস? না ট্রাক? বোধহয় ট্রাক হলেই ভালো হবে। ভারী যান, থামার আগেই ওকে পিষে নেবে। তবে লাফিয়ে পড়ার আগে মনে হলো, আশেপাশে বেশ কিছু মানুষ আছে। কেউ যদি ওকে আটকে ফেলে?

তিন্নি হেঁটে আরও সামনে গেল। সেখানে তেমন কোনো বাড়ি নেই। দু একটা মানুষ আছে, তবে তারা কেউ কারো দিকে খেয়াল করছে না। চারদিকে ভূতের মতো বিশাল বিশাল গাছ দাঁড়িয়ে আছে। তিন্নি জীবনের সব সাহস এক করলো। একটা ট্রাক দেখা যাচ্ছে। এর সামনে লাফিয়ে পড়তে হবে। এখানেই জীবন শেষ হবে ওর! তিন্নি মনে মনে লা ইলাহা ইল্লাহ পড়ছে।

লাফিয়ে পড়ার ঠিক আগ মুহূর্তে এক জোড়া হাত ওকে চেপে ধরলো। তারপর এক টানে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল,
"অভিমানে কেউ এত বড় সিদ্ধান্ত নেয়?"

চলবে...

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen2U.Pro