আমাদের পরিবারের সদস্যরা আমাদের নাম জানত।কিন্তু আমার বাসায় ছেলে বন্ধু আনা নিষেধ ছিল তাই আমি নিজেই ওকে কোনোদিন আনিনি,ও ও আমাকে ওর বাসায় নেয়নি।আমার বাবার সাথে ওর বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছিল।বাবা ওকে বেশ আদর করত।আন্টির সাথেও আমার ফোনে দুএকবার কথা হয়েছিল।ওর বড় আপু,আন্টি মাঝে মাঝে আমার কথা জিজ্ঞাসা করত। আমার বাসায় যদি বলতাম, সিয়ামের সাথে দোকানে গিয়েছিলাম,তবে তেমন কোন প্রশ্নবাণে বিদ্ধ হওয়া ছাড়াই পার পেতাম।
এই কারণে আমাকে কোন ছেলে প্রেম নিবেদন করত না।কিন্তু কেমন করে যেন কলেজ জীবনের শেষ দিকে লতার সাথে ওর ভালোবাসাবাসি হয়ে গেল আমরা টেরই পেলামই না!
আর তারপর থেকে শুরু হলো টুইস্ট!
আমাদের সার্কেলে,কলেজে সব যায়গায় যত গুজব ছিল,সব মিটে গেল,তার যায়গায় নতুন গুজব হাজির হল, আমি ছ্যাঁকা খেয়েছি!
কিছুদিন যাবার পর যখন দেখল যে আমরা তিনজন প্রায়ই একত্রে ঘুরি,তখন আস্তে আস্তে সমালোচনা কমে আসে।আমরা দুজনই এসবে কান দেয়ার পক্ষপাতি ছিলাম না,কিন্তু লতা মাঝে মাঝেই ওকে আমার ব্যাপারে প্রশ্নবিদ্ধ করত।অবশ্য আমার সামনে "ভাজা মাছ উলটে খেতে পারি না" জাতীয় ভাব দেখাত,কিন্তু সিয়াম মাঝে মাঝেই আমার কাছে না পারতে বলে ফেলত,"রাই,আমাদের মাঝে মনে একটু দূরত্ব বাড়ানো উচিৎ... ইয়ে মানে,খুব সামান্য, বেশি না!" মাঝে মাঝে না বললেও আমি খুব বুঝতাম।আগে যতটা নৈকট্য ছিল,দিন দিন আরো কমে গেল।
আমার আর সিয়ামের একটা অভ্যাস ছিল। আমরা দুজন একসাথে গান করতাম।আমাদের দুজনের গানের গলাই বলা যায় বেশ ছিল।একা একা লেকের পাড়ে,বা কলেজ মাঠে,অথবা ফোনে দুজন মিলে দ্বৈত গান গুলো গাইতাম।তখন ছিল ল্যান্ড ফোনের যুগ,আর আমাদের দুজনের বাড়ির ফোনের বেশিরভাগ বিল আমার আর ওর কথারই ছিল।আমরা যে কত কথা বলতাম! ওর গান আমার বেশ লাগত।তবে আমরা স্বনামধন্য গান কমই গাইতাম।উলটা পালটা গান,উলটা পালটা সুরে গেয়েই যা বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা করতাম,হয়ত এর গায়ক শুনলে তৎক্ষণাৎ আত্মহত্যা করত!
একদিনের কথা।সেদিন ও আর আমি খুব উদ্ভট সুর দিয়ে গাইছিলাম -
"বাবুরাম সাপুড়ে
কোথা যাস বাপুরে?
আয় বাবা দেখে যা
দুটি সাপ রেখে যা।
যে সাপের চোখ নেই
শিং নেই নখ নেই
হাঁটে নাক ছোটে না
কাউকে যে কাটে না
করে নাকো ফুসফাস
মারে নাকো ঢুসঢাস
নেই কোন উৎপাৎ
খায় শুধু দুধভাত।
যেই সাপ জ্যান্ত
গোটা দু আন্ত
তেড়ে মেড়ে ডান্ডা
করে দেব ঠান্ডা!"
গান শেষেই দুজন দুজনের পিঠে দুম দুম করে মেরে বসলাম!সিয়াম আমাকে আস্তেই মারত,কিন্তু আমি দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেদিন বেশ জোরেই মেরে বসলাম,আর পাজীটার সে কি চিৎকার! বাজে ব্যাপারটা হল তখন যখন খেয়াল করলাম কয়েক সেকেন্ডের মাঝে যে লতা আমাদের পেছনেই ছিল,ওর চিৎকার শুনে দৌড়ে এসছে! এসেই সে কি অবস্থা!যেন সিয়াম হারামিকে না,ওকে মেরেছি আমি!চিৎকারে একদম পুরো মাঠ যেন মাথায় নিয়ে বসল! আমি তো পুরোই বজ্রাহত! সিয়াম ওকে যতই থামাবার চেষ্টা করে,ও ততই যেন ক্ষেপে উঠে!
আমার দিকে ফিরে কোমরে হাত দিয়ে বলে ওঠে,
-ছেলেদের গায়ে মেয়েরা এভাবে মারে?ওর মাও তো মনে হয় এভাবে কোনোদিন মারেনি!আর সেখানে তুমি!আচ্ছা,তুমি কি মেয়ে? নাকি ষাঁড়!
-আমি গরিলা (হাসি দিয়ে)
-আবার কথা বলো!আমি তো দেখতেছি,তুমি যা করতেছ,দেশে পুরুষ নির্যাতন আইন পাশ করাতে হবে!আমারও তো কত ছেলে বন্ধু আছে,তাই বলে আমি ওদের কাউকে তো কোনোদিন এভাবে মারিনি!তোমাকে ইভটিজিং এর দায়ে পুলিশে দেয়া উচিৎ! আমার বাবুটা দম আটকে আজ মারাই যাচ্ছিল!!
আমি হাঁ করে লতার দিকে চেয়ে থাকি,বলে কি এই মেয়ে?! তাও শালা সিয়াম ইতরের জন্য?!আর লতাও এসব এক নিশ্বাসে বলে যেতে থাকে।একটা মেয়ে এত দ্রুত এত কথা বলে কিভাবে?!আমি আড়চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,
-তুমি সিয়ামের জন্য পুরুষ নির্যাতন আইন পাশ করাবা?
-হ্যাঁ!
-সিয়ামের জন্য?!
-হ্যাঁ!!
-এই হাঁদার বাচ্চার জন্য?!
-খবরদার,ওকে বাজে কথা বলবা না!ওহ!আমার বাবুটা!(সিয়ামের দিকে চেয়ে)
আমি তখন হা হা হা করে পেটে হাত চেপে হাসতে হাসতে মাঠেই শুয়ে পড়ি,আমার সাথে সিয়ামও যোগ দেয়।দুজনের হাসিগুলো প্রতিধ্বনি হতে থাকে সারা মাঠে!আর লতাজি আমাদের দুজনের দিকে অগ্নিশর্মা হয়ে চেয়ে থাকে।আমি বুঝতে পারি আজ হাঁদাটার খবর আছে,তবু আমাদের হাসি থামে না,একটু তো হেসেছিই,এতে পাপ কি? আজও ঐ মাঠে আমাদের হাসির প্রতিধ্বনি শোনা যায় হয়ত,সে প্রতিধ্বনি কেঁপে কেঁপে বাতাসের তালে হারিয়ে যায়,কারণ আমরা আজ ১২ বছর একত্রে হাসি নাহ।
**** “এরচেয়েও বেশিকিছু, অতঃপর..." বইটি পাবেন ছাপাখানা ফেসবুক পেইজে, রকমারীতে, গ্রন্থমহল পেইজে। কলকাতার পাঠকরা বই পেতে আমার সাথে যোগাযোগ করুন****
Bạn đang đọc truyện trên: Truyen2U.Pro