#১

Màu nền
Font chữ
Font size
Chiều cao dòng

প্রাপ্তি

#১

রশ্নী বাচ্চাটার সামনে ভ্রু কুঁচকে বসে আছে,শুধু ভ্রু না,ওর কপালও কুঁচকে আছে।এই মুহূর্তে বাচ্চাটাকে কি আপদ ভাববে,নাকি আশীর্বাদ ভাববে,তা ঠাহর করতে পারছে না।সামনে টাওয়েলে মোড়ানো দুতিন দিনের ছোট্ট দেহটা হাল্কা মোচড়াচ্ছে,যে কোন মুহূর্তে যে তার স্বরে কান্না করে দেবে,তাতে কোন সন্দেহ নেই।বাচ্চাটা এক ঘন্টা ধরে ওর সামনে, আর ছোট বাচ্চাদের এক দু'ঘন্টার মাঝেই খাওয়াতে হয়।নিজে মা না হলেও এটুকু জ্ঞান ওর হয়েছে আশেপাশের নিকটাত্মীয় মায়েদের দেখে।অবশ্য বাচ্চার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি জ্ঞান পেয়েছে ছোট বোন অগ্নির কাছ থেকে,তার পুরো প্রি-মাদারহুড এবং পোস্ট-মাদারহুড পিরিয়ডের অনেকটুকু অংশ ওর নিজের চোখে দেখা।বাচ্চাকে কোলে নেয়া,গোসল দেয়া,খাওয়ানো,বমি করলে সাফ করা, বাচ্চা পায়খানা-পেশাব করার আগে কি করবে,সব কিছুই নিজে দেখেছে।সেসব অভিজ্ঞতা হয়ত এখন কিছুটা কাজে লাগবে,রশ্নী ভাবে।কিন্তু এসব কাজে লাগুক সেটা ও কখনো চায়নি।চাবে কি করে?ওর মতে একজন নারীর পুর্ণতার জন্য স্বামী, সন্তান, মাতৃত্ব,এসবের একেবারে প্রয়োজন নেই।তার প্রয়োজন নিজের পায়ে দাঁড়ানো,অন্যের প্রতি মুখাপেক্ষীহীনতা আর যুদ্ধ করার সকল শক্তি। "একজন সন্তান পারে একজন নারীকে পরিপূর্ণ করতে" এসব কথা ওর কাছে ভুয়া,ভিত্তিহীন।

বাচ্চাটা কিছুক্ষণ মোচড়ে আবার থেমে যায়,তার কয়েক সেকেন্ডের মাঝে রশ্নীর ধারণাকে সত্য প্রমাণ করে চোখ বুঁজে কান্না শুরু করে।রশ্নী হাত বাড়িয়ে বাচ্চাটাকে বুকে চেপে নেয়,বুকের সাথে জড়িয়ে হাল্কা ঝাঁকিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করে। ওর ধারণা বাচ্চা থামবে না,ওর এখন ক্ষুধা লাগার কথা।তবে রশ্নীকে অবাক করে দিয়ে বাচ্চাটা থেমে যায় এবং ঘুমিয়ে পড়ে।আস্তে করে মুখের সামনে এনে দেখে বাচ্চাটা চোখ বুঁজে পরম শান্তিতে ঘুমিয়ে গেছে।এই প্রথম বাচ্চাটাকে কোলে নিল ও।তবে ওর ক্ষুধা লাগলে কি করবে সে নিয়ে তীব্র দুশ্চিন্তার রেখা ওর কপালে হাল্কাভাবে ফুটে ওঠে। বাচ্চাটাকে কোল থেকে কয়েক সেকেন্ডের জন্য রেখে দেখে বাচ্চাটা আবার মোচড়াচ্ছে,রশ্নী আবার কোলে তুলে নেয়।কোলে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ভাবছে বাচ্চাটাকে নিয়ে কি করবে সে।

আজ সকালে রশ্নী বাসা থেকে বের হয়ে যখন অফিস যাচ্ছিল,তার তিন বিল্ডিং পরেই বাচ্চাটাকে ময়লার স্তুপের মাঝে দুটো দালানের মাঝে পেয়েছে।প্রচন্ড উটকো গন্ধের মাঝে একটা ছোট্ট মানব শরীর পড়ে আছে,অথচ আশেপাশের এতগুলো মানুষের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই!রশ্নী অবাক হয়েছে ভীষণ। আজকাল প্রায়ই বিভিন্ন পত্রিকা,খবরে শোনে যায় নবজাতক জানালা দিয়ে,বা আস্তে করে ময়লা বা নর্দমায় ফেলে দেয়ার ঘটনা।মানুষের মাঝে অবাধে অবৈধ সম্পর্কে জড়ানোর ঘটনা বেড়ে গেছে,অবৈধ কাজ করলেও বৈধতার লেবাস গায়ে জড়িয়ে রাখার জন্য মানুষ অমানুষিক আচরণ করছে।আর এসব দেখেও বেশিরভাগ মানুষ তা না দেখার ভাণ করে মনুষত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছে।ঐ স্থানে দাঁড়িয়ে কয়েক সেকেন্ডের মাঝে বর্তমান সমাজের ভয়াবহ চিত্র রশ্নীর মাথায় চলে আসে। সবাই চুপ থাকলেও ঐ মুহূর্তে ও পারে নি বাচ্চাটির তারস্বরে কান্নারত অবস্থা।দ্রুত ছুটে গিয়ে বাচ্চাটাকে বের করে।ছোট্ট শরীরটাকে কোলে নিয়ে অজানা কারণে বুক ভেঙে আসতে চায়।কি নিষ্পাপ চেহারা!অথচ ওর ভাগ্যে কি নির্মম আচরণ!রশ্নী মাথা ঠান্ডা করে ওর কাপড়চোপড় খুঁজে।পাতলা একটা পুরাতন ময়লা গামছা দিয়ে বাচ্চাটা মোড়ানো,এছাড়া ওর গায়ে আর কিছুই নেই।রশ্নী আশেপাশে তাকায়,কেউ ওকউে লক্ষ্য করছে কিনা।নাহ যে যলে যার যার মত চলছে।ওদের দেখে মনে হচ্ছে বাচ্চাকে ময়লার মাঝে ফেলে রাখা,এরপর একে কেউ উদ্ধার করা,ব্যাপারটা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। রশ্নী অবাক চোখে অফিসের দিকে না গিয়ে আবার নিজের ফ্ল্যাটে ফিরে আসে।

বাসায় ঢুকেই প্রথমে বাচ্চাটাকে হাল্কা কুসুম গরম পানিতে পরিষ্কার করে একটা পরিষ্কার টাওয়েলে পেচায়।রশ্নী খুব গোছানো একটা মানুষ।ওর ঘরে সব কিছু সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখে।সৌভাগ্য বশত দুদিন আগে একটা নতুন টাওয়েল কিনে এনেছে,আর সেটাই ছোট বাচ্চাটার কপালে জুটেছে।

বাচ্চাটাকে বিছানায় বসে কোলে চেপে রাখে রশ্নী।গোসল করাতে গিয়ে দেখেছে,বাচ্চাটা একটি মেয়ে।রশ্নীর মনে প্রশ্ন উদয় হয়, মেয়ে বলেই কি ওর এই হাল?নাকি এখানে অন্য কোন রহস্য আছে?রশ্নী এই বাচ্চাটাকে নিয়ে এখন কি করবে?পুলিশের কাছে যাবে?নাকি কোন হাসপাতালে?খোঁজ নিলেও বা কিভাবে জানা যাবে?বাচ্চাকে যে ফেলে গিয়েছে,নিশ্চয়ই পরবর্তীতে স্বীকার করার জন্যে নয়! বাচ্চাটা কি আশেপাশের কোন বাসার?রশ্নী ভাবনায় পড়ে যায়।

এমন এক অবস্থার কথা যদি কেউ জানে,সবার আগে ওকে জিজ্ঞেস করবে, "অন্যের ফেলে দেওয়া বাচ্চাকে তুমি কোলে নিয়ে ঝামেলা করতে গেলে কেন?" কিন্তু কেউ বলবে না যে একটা বাচ্চাকে ও বাঁচিয়েছে,বর্তমান পরিস্থিতিটাই এমন। আর পুলিশ শুনলে কি করবে সে তো রশ্নী জানে,ওরা হয়রানী ছাড়া জানেও বা কি! রশ্নী ভাবে,যা করার দ্রুত করতে হবে।

সবার আগে যে মানুষটার নাম ওর মাথায় আসে,তা হল নওশাবা আপু।উনি পিজিতে সিনিওর গাইনকোলজিস্ট হিসেবে বসেন।বান্ধবীর মেডিকেল কম্পলেক্সিটির কারণে ছয় বছর আগে পরিচয় হয়।তবে এ পর্যন্ত ওদের মাঝে সম্পর্কটা বোনের মত,আবার গার্জিয়ানও বলা যায়।নওশাবা ওর সবকিছুতেই থাকে।ওর সুখ দুখ সবসময় পাশে থেকেছে,ভুল হলে বকেছে,ভালো করলে বাহবা দিয়েছে।নওশাবা আপু ছাড়া ওর কোন সাপোর্টিভ গার্জিয়ান নেই।তাই ফোন নিয়ে নওশাবার নাম্বারে কল দেয়।

-আপু,একটা ঝামেলা করে ফেলেছি!

চলবে...

লেখনীতে, #Abiar_Maria

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen2U.Pro