#৭

Màu nền
Font chữ
Font size
Chiều cao dòng

#প্রাপ্তি

#৭

রশ্নীর ঢাকা মেডিকেলের মর্গে পৌঁছাতে মাত্র তের মিনিট লাগে,রাতের ঢাকার রাস্তা একেবারে ফাঁকা, দিনের মত প্যাঁ পো রাজপথের আঁকেবাঁকে নেই,নেই কোন কোলাহল।নিস্তব্ধ রাস্তা দিয়ে রশ্নী এসে পৌঁছায় আরেক নিস্তব্ধ স্থান,মর্গে,যেখানে চিরকালের নিস্তব্ধতার চাদরে ঢাকা মানুষদের রাখা হয়েছে।সাবধানে সেখানে হাঁটে,যেন জোরে আওয়াজ করলেই সবার ঘুম ভেঙে যাবে,সবাই উঠে বসবে।অবশ্য হরর মুভি গুলোয় ঠিকই সবাই উঠে যায়,লাশ গুলো উদ্ভট কান্ড করে। তবে জীবন কোন হরর গল্প না,জীবন হরর গল্পের চেয়েও খারাপ কিছু।রশ্নী দুজন লোককে একটা পোড়া লাশ নিয়ে যেতে দেখে,পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মাংস পোড়া বোটকা জোরছে রশ্নীর নাকে ধাক্কা দেয়।ও দ্রুত মাশরুককে কল দিয়ে দুজন মিলে সেখানে যায়।ডা.সামাদ ওদের জন্য অপেক্ষা করছিল,ওদের আসার পর লাশের কাছে নিয়ে যায়।রশ্নী মুখে ওড়না চাপা দেয়,চারপাশে ফর্মালিন দেয়া আধা পচা লাশের দুর্গন্ধ। মাশরুককে প্রায়ই মর্গে আসতে হয়,তাইএসবে অভ্যস্ত। ওরা দুজন লাশের কাছে যায়।একটা বেডে মেয়েটা শুয়ে ছিল,ডা. সামাদ লাশের মুখ থেকে কাপড় তুলে ধরেন।
"এই যে দেখুন স্যার"

অবাক চোখে ওরা দেখে মেয়েটাকে।
"মেয়েটা দেখতে কিন্তু অনেক সুন্দর, তাই না রশ্নী?"
রশ্নী এক দৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে।দেখে একটুও মনে হচ্ছে না যে মৃত,বরং মনে হচ্ছে,সে ঘুমুচ্ছে,ডাকলেই উঠে বসবে।রশ্নী আনমনে বলে,
"হুম,বাচ্চাটার সাথে অনেক মিল!"
"কি করে বুঝলে?ও একটা নবজাতক,এখন কি চেহারা বোঝা যায়?"
"কিছুটা যায়।সে যাই হোক,আন্দাজে কিছু বলা যাবে না।স্যার,ও মারা গেল কিভাবে?"

ডাক্তার শ্রাগ করলেন,
"হাতের রগ কেটে রক্তক্ষরণের ফলে মৃত্যু হয়েছে।তবে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে,কয়েক যায়গায় কালশিটে পড়ে গেছে।"
ডাক্তারের কথায় মাশরুক যোগ করে,
"পুলিশ যখন ওখানে পৌঁছেছে রাত দশটার দিকে,তখন ওর ঘরের দরজা ওরা ভেঙে ফেলে উদ্ধার করেছে,তবে রক্তক্ষরণ এর কারণে বাঁচেনি।মেয়েটার শরীরে নানান চিহ্ন থাকায় ডিউটি অফিসার কিছু প্রশ্ন করেছেন।তখন তারা বলেছে,মেয়েটা অবাধ্য ছিল,তাই বাসায় মারামারি করত।স্বাভাবিকভাবেই আত্মরক্ষার্থে অন্যরাও ওকে আটকাত,তবে আমার মতে মেয়েটার মৃত্যুর কারণ মানসিক বিপর্যস্ততা।পরিবারের সাথে দিনের পর দিন ঝামেলা হওয়ায় মেয়েটা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।তবে আত্মহত্যা ও করেছে কিনা সে ব্যাপারে আমাদের সন্দেহ আছে।যে ব্লেড দিয়ে হাত কেটেছে,সেটা পেয়েছি আমরা। সবকিছু ল্যাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে।আপাতত এর চেয়ে বেশি কিছু জানা যায়নি।মনে হচ্ছে না ঘটনাটা এখানেই শেষ!"

রশ্নী কপাল কুঁচকে মেয়েটাকে দেখছে।ওর ডানহাত চাদরের একপাশ থেকে বেরিয়ে আছে,হাতে দগদগে ঘা,সেখান থেকে রক্ত ঝড়ছিল হয়ত ঘন্টা দুয়েক আগেও,এখন সেখানটা কালচে হয়ে আছে।
"ও কি বাঁহাতি?"
মাশরুক ভ্রু কুঁচকায়,
"এ কথা কেন বলছ?"
"মেয়েটার ডান হাত কাটা,নিশ্চয়ই বাঁ হাত দিয়ে ডান হাত কেটেছে।তার মানে মেয়েটা বাঁ হাতি।আর যদি বাঁ হাতি না হয়,তার মানেই হল..."
"কি?"

রশ্নী মুচকি হাসে।
"মাশরুক ভাই,আপনি তো বুঝেছেন!যদি তা নাহয়,তবে এটা স্পষ্ট খুন!আশা করি ল্যাবেও প্রমাণ পাবেন।বাই দা ওয়ে, ওর নামটা যেন কি বললেন?"
"বলিনি এখনো... পূজা মন্ডল"
"হিন্দু পরিবার?"
"হ্যাঁ,ওর বাবার নাম শিমুল মন্ডল।তোমাদের এলাকায় অনেক পরিচিত।নাম শুনোনি?"
"না।খুব রক্ষণশীল নাকি?"
"মোটামুটি বলা যায়।তবে ওরা এখানকার না,ওরা ভারতে থাকে,ওরা ওখানকার নাগরিক।মূলত ব্যবসায়ের কারণে থাকে,এখানে ওদের দুটো ফ্যাক্টরি আছে"
"কিসের ফ্যাক্টরি?"
"প্লাস্টিক"
"হুম।প্রেগ্ন্যাসির ব্যাপারটা কিভাবে জানলেন আর নিশ্চিত হলেন?"

মাশরুক বলে,
"তোমাদের এলাকার ঐ ওসিই জানতেন,সেই আমাকে জানিয়েছে।বাচ্চাটা যে অবৈধ, এটাও ঐ অফিসারই বলল।ঐ পরিবারের সাথে আবার ওর ভাল সম্পর্ক আছে।আমি সব থানায়,বিশেষত তোমাদের এলাকার থানায় জোর দিয়ে খেয়াল রাখতে বলেছিলাম।"
"বয়স কেমন হবে ওর?"
"এবার নাকি ঊনিশ শেষ হল!"

মাশরুকের কথা শুনে রশ্নী কেঁপে উঠল।এই বয়সে ওর নিজেরও একই অবস্থা হয়েছিল।পার্থক্য ছিল ওর সন্তান ধর্ম-সমাজ স্বীকৃত উপায়ে এসেছিল।ওর বাচ্চাটা বৈধভাবে বাঁচারা সম্ভাবনা থাকার পরও আসতে পারল না,আর এই মেয়ের বাচ্চাটা অবৈধ হয়েও পৃথিবীর আলো দেখেছে,হয়ত!রশ্নী এখনো নিশ্চিত না মেয়েটা ঐ বাচ্চাটারই মা কিনা।ওর নিশ্চিত হতে হবে এই মেয়ের বাচ্চা সত্যিই কি ঐ বাচ্চাটা কিনা।ওর মনের কথার ছাপ মুখশ্রীতে দেখে মাশরুক জিজ্ঞাসা করে,
"এখন কি করবা?"
"ওরা কি লাশ নিয়ে যাবে?"
"হুম,কালই শেষকৃত্য সম্পাদন করতে চাচ্ছে।জানি না আমরা এই লাশ কতদিন রাখতে পারব।দেখা যাক!কিন্তু তোমার প্ল্যান কি?"

রশ্নী পকেট থেকে একটা টিসু বের করে তাতে মোড়ানো দু তিনটে পাতলা চুল বের করল।মাশরুক অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
"এগুলো কি?"
"আমার পরবর্তী ক্লু!"
"মানে?"
"বাচ্চাটার চুল নিয়ে এসেছি।এই মেয়েরটাও নিব,ডিএনএ টেস্ট করাব।স্যার,কত দিন লাগবে ডিএনএ ফলাফল পেতে?"

ডা.সামাদ চশমা খুলতে খুলতে বলেন,
"২৪ঘন্টার মাঝেই পেয়ে যাবেন আশা করি।কিন্তু লাভ হবে কি?বাচ্চার মাকে যদি কেউ মেরে ফেলতে পারে,সেখানে বাচ্চাটা তো নিরাপদ নয়,তাই না!"
"ওদেরকে এই বাচ্চা কে দিতে যাচ্ছে!আমি তো চাই অপরাধীরা শাস্তি পাক,ওদের শাস্তি হোক।এত এত অপরাধ প্রতিদিন বাড়ছে কারণ আমাদের জুডিশিয়াল সিস্টেম প্রায় ধ্বসে পড়েছে! এখানে টাকার খেলা হয়,এখানে অপরাধীরা আনন্দের সাথে জেলের বাইরে ঘোরে। আর নিরপরাধ মানুষ দোষী সাব্যস্ত হয়ে বছরের পর বছর জেলে পঁচে মরে!"

মাশরুক একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
"আমাদেরও বেশিরভাগ সময় হাত পা বাঁধা থাকে রে।চাইলেও পারি না ওদের পিটিয়ে মেরে ফেলতে,বা ক্রসফায়ারে ফেলে দিতে!"
"বাদ দাও,আমি জানি না কি করতে পারব,কিন্তু আমার সব প্রশ্নের উত্তর জানা দরকার!"

মর্গ থেকে ওরা দুজন বেরিয়ে আসে।মাশরুক নিজের গাড়িতে উঠে যাওয়ার পর রশ্নী নিজের গাড়ির দিকে আগায়।বাতাসে মধ্যরাতের নেশা ধরানো ঘ্রাণ।রাতটা রশ্নীর কাছে ভীষণ লাগে,একেবারে রহস্যে ভরা!অন্ধকার হাতড়ে হাতড়ে রাতের প্রতিটা বাঁকের রহস্য খুঁজে বের করতে ইচ্ছা করে ওর।পকেট থেকে গাড়ির চাবি বের করে ড্রাইভিং সিটে বসে।বেল্ট লাগাতে লাগাতে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে,ফ্রন্ট গ্লাসে ওয়াইপারের মাঝে একটা কাগজ আটকে আছে।জানালা দিয়ে হাত বের করে কাগজটা এনে খোলে।তাতে বড় বড় করে লিখা-

"আপনার লম্বা নাক খাড়া নাক ছোট করুন,নাহয় সমূহ বিপদ!যা জেনেছেন,এর বেশি জানতে চাইবেন না!"

রশ্নী ঝট করে আশেপাশে তাকায়,কেউ নেই তো!গাড়ির পেছনে দেখে,কেউ ঘাপটি মেরে নেই তো?!দ্রুত হাতে জানালা বন্ধ করে মাশরুকের নাম্বারে ডায়াল করতে করতে গাড়ির স্টেয়ারিং ধরে টান দেয়।মাশরুককে জানাতে হবে ওকে যে হুমকি দেয়া হয়েছে!

চলবে...

লেখনীতে, #AbiarMaria

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen2U.Pro