#৮

Màu nền
Font chữ
Font size
Chiều cao dòng

#প্রাপ্তি

#৮

বাসায় এসে রশ্নীর নাইট ডিউটি শুরু।বাচ্চাটা সারারাত কান্না করতে থাকল।রশ্নী ওকে কোলে নিয়ে আস্তে আস্তে দুলিয়ে দুলিয়ে সারাঘর হেঁটেছে,তবুও ও থামেনি।ওর কান্না থামাতে থামাতে ভোর সাড়ে চারটা।ততক্ষণে রশ্নীর অবস্থা এমন যে,ঘুমে ওর মাথা ঘুরে পড়ে যাবে।বাচ্চাটাকে শুইয়ে বালিশে মাথা লাগাতেই চোখ বুঁজে আসে,যেন চোখের পাপড়িতে দুটো ইট ঝুলিয়ে রেখেছে!

ওর যখন ঘুম ভাঙে,ঘড়ির কাঁটায় তখন দশটা বেজে বারো মিনিট।ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে ঘড়ির দিকে এক পলক তাকিয়েই।এ কেমন কথা হল!এভাবে এত সকাল পর্যন্ত ঘুমালে হবে? অফিসে যেতে হবে,থানায়ও যেতে হতে পারে।রশ্নী বিছানা ছাড়ার জন্য নড়ে উঠতেই ছোট্ট মানুষটাও কেমন করে যেন টের পেয়ে গেল।ড্যাবড্যাব করে রশ্নীর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।বাচ্চাটাকে দেখে এক/দুই মাসের বাচ্চা বলে এখন ভুল হওয়া অস্বাভাবিক না।ওর টলটলে দুচোখের দিকে নজর দিয়ে রশ্নী ভুল যায় যে ওর অফিসে দেরী হয়েছে।কিছুটা ঝুঁকে ওর বুকে পেটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়,হাতে পায়ে চুমু খায়।ওর নরম নরম হাত পা আর পেটে হাত বুলায়,নতুন বাচ্চাদের গায়ে একটা অন্য রকম ঘ্রাণ আছে।এই ঘ্রাণ রশ্নীকে এই মুহূর্তে একেবারে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে।কি আদুরে একটা ছোট্ট মানুষ! এত মিষ্টি একটা বাচ্চা পূজারই হওয়ার কথা,মরে গিয়েও মেয়েটার সৌন্দর্যে একটুও ভাটা পড়েনি।রশ্নী সাবধানে বাচ্চাটাকে বুকে জড়িয়ে নেয়,ও পটি করেছে,তাই হালকা মোচড়াচ্ছে।কিছুটা সময় নিয়ে ওকে পরিষ্কার করে দুধ বানিয়ে খাওয়ায়।এর মাঝে একবারও মনে পড়েনি অফিস কিংবা থানায় যাওয়ার কথা।যখন মনে পড়ল,ততক্ষণে ১১টা বেজে গেছে।নওশাবার মেইড রেহানা আপাকে ও বাচ্চাটাকে দেখতে বলে দ্রুত বেরিয়ে পড়ে অফিসের উদ্দেশ্যে।গাড়িতে বসে প্রথমে মাশরুককে কল দেয়,কিন্তু ওপাশে ফোন রিসিভ করছে না।মাশরুক কি কোন ঝামেলায় পড়ে গেছে?নাকি ব্যস্ত? অমন করে পাঁচ বারের সময় ওর কল রিসিভ হয়।

"মাশরুক ভাই!কি খবর!"
"একটা ঝামেলায় আছি বুঝছ,তোমার জন্যে খবর আছে,কিন্তু আমার কাছে সময় নেই।তুমি তোমাদের এলাকায় চলে যায়,ওসি সাহেব আছেন,সেই তোমাকে সব জানাবে"

খট করে ওপাশে কল কেটে গেল।রশ্নী গাড়ি ঘুরিয়ে নিজের এলাকার থানার দিকে রওনা হল।থানার ওসির সাথে খুব বেশি পরিচয় নেই,তাই নাম্বারটাও নেই।আগে পূজার ব্যাপারটা জানা দরকার,তারপর অফিস করা যাবে।থানায় যেতে আরো বিশ মিনিট লাগবে।ড্রাইভ করতে করতে রশ্নীর এক চিলতে মনে পড়ে গতরাতের হুমকির কথা।সিগন্যালে বসে থেকে কাগজটা বের করে। একটু অন্যভাবে বোঝার চেষ্টা করে চিরকুটটা।এর কি অন্য কোন অর্থ আছে?

"আপনার লম্বা নাক খাড়া নাক ছোট করুন,নাহয় সমূহ বিপদ!যা জেনেছেন,এর বেশি জানতে চাইবেন না!"

এই কথা গুলো ওকে কেন বলবে?নিশ্চয়ই ও সত্যের কাছাকাছি আছে,এজন্য!আবার এটা কি কোন সতর্ক বাণী হতে পারে না?আচ্ছা,সতর্কবাণীতে কি 'আপনার লম্বা নাক' বলবে? রশ্নীর হাসি পায়।এই চিরকুটের মাঝে বাচ্চামী একটা ব্যাপার আছে ওর মতে।আবার অতিরিক্ত সিরিয়াস জীবন যাপনের পর সবকিছুই ওর কাছে হাস্যকর লাগছে কিনা কে জানে!রশ্নী আনমনে এসব ভাবতে ভাবতে থানার সামনে পৌঁছে যায়। থানাতে পৌঁছে দেখে,ওসি মিজানুর রহমান ভীষণ ব্যস্ত! রশ্নী পাক্কা পয়ত্রিশ মিনিট বসিয়ে রেখে পান চাবাতে চাবাতে সে রশ্নীকে সামনে সদ্য খালি হওয়া চেয়ারে বসতে ইশারা করে।রশ্নী সামনে বসার পর পাশের একটা বিনে পানের পিক ফেলে বেশ গা ছাড়া ভাবে হেলান দিয়ে বসে।

"কি খবর রিপোর্টার আপা!"
"খবর কি আমার কাছে আছে?খবর তো আপনার কাছে"
মিজানুর রহমান তেলতেলে হাসি দেন।খোঁচা খোঁচা দাড়ি চুল্কাতে চুল্কাতে বলে,
"তা যা বললেন!তো...কিছু খাবেন নাকি?...ঠান্ডা বা গরম?"
"নো থ্যাংকস, আমি ঠিক আছি।আমি আসলে ভূমিকা করা পছন্দ করি না,তাই সরাসরি বলছি।পূজা মন্ডলের প্রসঙ্গে কথা বলতে এসেছি"
"সে তো জানিই!তা কি বলবেন বলেন?...এটা কি রেকর্ডিং নাকি?রেকর্ড করতেছেন?"
"এই ফোনটা?না না,তেমন কিছু না।আমি শুধু শুনব"
"শুনবেন?রিপোর্ট করবেন না?মনে থাকবে সব?"
"হুম,আমার স্মৃতি শক্তি ভালো"
মিজানুর রহমান আবার তেলতেলে হাসি দেন।
"বাহ!খুব ভালো,খুব ভালো।তা কি জানবেন?"
"মাশরুক ভাই বলেছে আপনার ঐ পরিবারের সাথে খুব ভালো সম্পর্ক।ওর একটা অবৈধ বাচ্চাও আছে।আমি ওর বাচ্চা হওয়া বা এই ব্যাপারে জানতে চাচ্ছি"
"এই ব্যাপারে কি জানতে চাইতেছেন?আরে বাবা,প্রশ্ন তো স্পষ্ট হইল না!"
মিজানুর রহমানের গলায় অধৈর্য আর বিরক্তি।রশ্নী এগিয়ে এসে তার চোখে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।
"পূজা কিভাবে প্রেগন্যান্ট হল?এই বাচ্চা কার?বাচ্চা এখন কোথায়?এই বাচ্চার কারণেই কি ওকে মরতে হল?নাকি এখানে অন্য কিছু আছে?আমি এসব জানতে চাই!"

রশ্নীর কঠিন কন্ঠ শুনে ওসি মিজান কিছুটা ভয় পায়,তবুও যথাসম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বলে,
"এত প্রশ্নের উত্তর আমি কি করে জানব!"
"আপনি মাশরুক ভাইকে সব বলেছেন,আর সেগুলোই এক এক করে বলবেন।ঠিক আছে,সহজ করে দিচ্ছি আপনার জন্য।ওর বাচ্চা কিভাবে হল?প্রেমিকের?নাকি ধর্ষণ করা হয়েছে?"
"মনে হয় প্রেমিকের,ধর্ষণ...নাহ,ঐরকম কিছু না।ধর্ষণ না,শিওর"
"ওর বাচ্চা হয়েছে কবে?"
"সপ্তাহখানেক হবে"
"কোন হাসপাতালে?"
"হাসপাতাল না,বাসাতেই"
"কে ডেলিভারির সময় ছিল?"
"এইসব মাইয়া মানুষের জিনিস আমি জানি না!যেইদিন হয়,ঐদিন ওর বাপ আমাকে জানাইছিল।আমি জানতাম ওর মাইয়া বিয়ার আগেই শেষ।কিন্তু কোন ব্যাটা,কে ছিল,এইসব আমি জানি না"
"বাচ্চাটা এখন কোথায়?"
"বাচ্চা?বাচ্চা তো নাই!বাচ্চা মরে গেছে না?"

রশ্নী জোরে জোরে মাথা নাড়ায়।
"উহু,বাচ্চা মরে নাই,বাচ্চা বেঁচে আছে!"
"কি বলেন!কই!"
"আছে,বাচ্চা মরে নাই আমি নিশ্চিত।আর এই বাচ্চার জন্যেই হয়ত এই মেয়ে মারা গেছে"
"হেহ,আন্দাজে বললেই হবে??বাচ্চা পাইছেন যে বলতেছেন?আমি বলি শোনেন।এই মাইয়া হইল বাপ মায়ের অবাধ্য সন্তান,কথা শুনে নাই তো!প্রেম কইরা বাচ্চা পয়দা কইরা ফেলছে,কিন্তু বাপ মার কথা ভাবে নাই!সমাজে থাকে না বাপ মায়?মানুষে মন্দ কয় না? কয়!বাচ্চা তো মরছে,এখন লজ্জায় আর না পাইরা মাও মরছে!এইখানে জানার আর কিচ্ছু নাই বুঝলেন?"
"বাচ্চার বাবা কে তা জানেন?"
"এইসব জাইনা কি হইব! পুরুষ মানুষ ওরে ফুসলাইলে ও ফুসব কেন?প্রেমিক বিছনায় ডাকলেই যাইতে হইব?আকাম করতে হইব?এইসব মাইয়া মানুষের সব দোষ!"
"আর ঐ পুরুষের কোন দোষ নাই?সে একেবারে নিষ্পাপ?!"
"নিষ্পাপ না পাপী সেইটা কথা না।কথা হইল,মাইয়া মানুষ সাবধানে থাকে না কেন!"

রশ্নীর ইচ্ছে করছে সামনে থাকা কাঁচের গ্লাসটা ওসির মাথায় ছুড়ে মারতে,একটা মানুষের মত দেখতে অমানুষ ওর সামনে এই মুহূর্তে বসে আছে।রশ্নী জানে না বাচ্চাটা পূজারই কিনা,কিন্তু পূজার মত মৃত মেয়ের দোষ যে ধরছে অথচ তার প্রেমিকের দোষ নেই যে বলছে,তাকে খুন করে ফেললে নিজের বিবেকের কাছে সে দায়ী হবে না নিশ্চিত।তবুও সে এই কাজ করতে পারবে না,সমাজ,আইন,নীতি,পারিপার্শ্বিকতা, সবকিছু ওকে।আটকে রেখেছে।রাগটা কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে গিলে ফেলে বলল,
"তারমানে আপনি জানেন না বাচ্চাটা কার?"

মিজানুর রহমান পেট সামনের দিকে ঠেলে দিয়ে চেয়ারে পিঠ লাগিয়ে মাথা নাড়ায়,
"নাহ"
"শেষ প্রশ্ন... আপনি কি নিশ্চিত এটা আত্মহত্যা?"
লোকটা ওর দিকে গভীর দৃষ্টি দেয়।তার চোখেই উত্তর আছে,কিন্তু সেটা রশ্নীর তার মুখেই শুনতে চায়।ওসি মিজান কি স্বীকার করবে?নাকি তার মুখ চোখ যা বলে,তা বলবে না?রশ্নীর চিন্তার সমাপ্তি ঘটাতে মিজান বলে,
"সেগুলো ডাক্তারি পরীক্ষার পর বলব।আমি এইসবের কি জানি!আমি কি ঐখানে ছিলাম?তবে আপা,আপনি খামাখা পেরেশানি হইতেছেন।মাইয়াটা আত্মহত্যাই করছে।আমি যতদিন দেখছি,ওর বহুত জিদ! জিদ্দে হাত কাইটা মরছে।হুদাই পিছে ঘুইরা লাভ নাই।মইরা গেছে যখন,তখন সব তো শেষ!কার বাচ্চা,কেমনে হইল,হইয়া মরল কেন,এইসব জাইনা কি হইব! শুনেন।মেয়ে অবৈধ বাচ্চা পয়দা করছে,তারপর লজ্জায় মইরা গেছে,আর কিছু না"
"আপনাকে এগুলো কি ওরাই বলেছে?"
"তাইলে কি আমি বানাইয়া বানাইয়া বলতেছি??"

মুখে বললেও রশ্নীর ঠিকই বুঝতে পারে যে ওসি সত্য লুকাচ্ছে।কি আর করার,ওকে এখন উঠতে হবে,এর কাছে আর কিছু জানা যাবে না।তবে ওসি ওকে অনেক কিছু না জানালেও রশ্নী ঠিকই জেনে গেছে।উঠে চলে আসার সময় জরুরী তথ্য ওর মনে পড়ে যায়।ঘাড় ঘুরিয়ে ওসিকে জিজ্ঞাসা করে,
"পূজার লাশ এখন কোথায়?"
"ওর লাশ?বাপ মা তো আজকেই নিয়া গেছে।আজকেই লাশ কবর দিব...ওরে,না না, শ্মশানে নিয়া যাইব।মাইয়া মইরা এখন বাঁচুক,হুদাই ফ্রিজে রাইখা লাভ কি!তাড়াতাড়ি পুরোনের জন্যেই তো মরছে,নাকি?"

রশ্নী এতক্ষণে বুঝতে পারে কোথায় ওর ভুল হয়েছে।থানায় না এসে সোজা পূজাদের বাড়ি যাওয়া দরকার ছিল!

অফিসে তিন ঘন্টা কোনোমতে কাটিয়ে বিকেলের মাঝে বাসায় চলে আসে।দুদিন পর বাসায় এসেছে,সব কিছু আগের মতই আছে।তবুও রশ্নী ভালোভাবে লক্ষ্য করে।নাহ,কোন অস্বাভাবিকতা নেই।দ্রুত সাদা রঙের এক সেট সেলোয়ার কামিজ পড়ে নেয়।খুব সাধারণভাবে নিজেকে সাজায়।তৈরি হতে হতে একবার নওশাবার ল্যান্ড লাইনে কল দেয়।
"রেহানা আপা,বাবু কি খেয়েছে?"
"হ্যাঁ আপা,খাইছে"
"এখন ও কি করে?"
"শুইয়া চাইয়া রইছে,ঘুমায় না"
"কান্না করে না তো?"
"না আপা,খুব লক্ষী বাচ্চা!"
"আমার পক্ষ থেকে আম্মুটাকে আদর দিও।আর আমার দেরী হতে পারে, খেয়াল রেখো আপা"
"আইচ্ছা"

রশ্নী তৈরি হওয়া শেষে আয়নায় একবার নিজেকে দেখে নেয়।সব ঠিক আছে।পূজার শেষকৃত্য যোগদানের জন্য উপযুক্ত দেখাচ্ছে।

চলবে...

লেখনীতে, #AbiarMaria

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen2U.Pro