২৩

Màu nền
Font chữ
Font size
Chiều cao dòng

তরী সারাদিন আর জিসানের সামনে খুব একটা গেল না। বিকালের নাস্তাও খেয়াকে দিয়ে পাঠিয়েছে। রাতে খাবারের টেবিলে বসে সবার মত ওর সাথে খুব স্বাভাবিক আচরণ করছে। জিসানের হাসি পাচ্ছে। তরী সম্ভবত এমন একটা কাজ করে খুব লজ্জা পাচ্ছে, কারণ যতই স্বাভাবিক থাকুক সে জিসানের চোখে চোখ মেলাতে পারছে না। জিসান খাওয়া শেষ করে ইশতিকে নিয়ে উঠল। ইদানীং ইশতিকে নিয়ে খেতে বসা ওর রেগুলার রুটিন হয়ে গেছে। ইশতিও ওর পাশে বসে যতটুকুই হোক গুছিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করে। যেহেতু তন্দ্রা এখনো ছোট, তাই ওর খাবারের রুটিন তরীকেই আপাতত ম্যানেজ করে নিতে হয়।

তন্দ্রা আজকে কোনো এক অজানা কারণ বশত শুধু কাঁদছে। তরী ওকে নিয়ে অনেক কষ্টে ঘুম পাড়াতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। এদিকে ইশতি খেয়ার সাথে ঘুমাবে বলে ওকে খেয়ার ঘরে পাঠিয়ে জিসান তরীর ঘরে ঢুকলো। তরী মেয়েকে দেয়ালের পাশে শুইয়ে মাঝখানে শুয়ে আছে। জিসান আর ওর মাঝে দেয়ার মত কোনো বালিশ নেই। জিসান ঠিক বুঝতে পারছে না, এভাবে শুলে আবার তরী রাগ করবে কিনা, কিংবা অস্বস্তিতে পড়বে কিনা। বেশ কিছুক্ষণ ভাবনার পুকুরে ডুব দিয়ে আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়ল, যা হয় হবে, এত ভাবার সময় নেই!

প্রথম দু মিনিট ও একেবারে সোজা হয়ে শুয়ে ছাদের দিকে চেয়ে থাকলো। খুব চেষ্টা করছে সে তরীর দিকে না ফেরার। এরপরের দুই মিনিট কাটলো তরীর দিকে পিঠ দিয়ে। না, সে কোনো ভাবেই বুঝাতে চায় না নিজেকে যে ওর পাশে ওর স্ত্রী। তারপরের দুই মিনিট কাটলো মুখের উপর বালিশ চাপা দিয়ে। এরপরের দুই মিনিট কাটলো ওর তরীর কোমরে হাত রাখার জন্য হাতকে এগিয়ে নিতে নিতে। ওর বুকের ভেতর ড্রাম বাজছে। ওর জোরালো ধারণা, তরী যে কোনো সময় এই ড্রামের আওয়াজ শুনে ঘুম থেকে উঠে যাবে। যতক্ষণে ওর হাত তরীর কোমর ছুঁলো, ততক্ষণে তরী নড়তে শুরু করে দিয়েছে। জিসানের হাত যখন তরীকে স্পর্শ করলো, তখনই তরী জিসানের দিকে ফিরে চোখ মেলল।

শোবার ঘরের বিছানায় জানালা দিয়ে আসা আবছা আলোয় দুজন মানব মানবী একে অপরকে দেখছে। জিসান নিশ্চিত হতে পারছে না তরীর ব্যাপারে, ও কি ঘুমিয়ে আছে, নাকি জেগে আছে? ওর এক কাজিনের কথা মনে পড়ে গেল যে কিনা ঘুমের মাঝে জেগে থাকা মানুষের মত চোখ মেলে চেয়ে থাকে। যে কেউ ভাববে ও জেগে আছে, অথচ সে ঘুমাচ্ছে। তরীর কি এমন কিছু হয়েছে?

জবাব পেলো সাথে সাথেই।

তরী জিসানের গালে আঙুল দিয়ে আলতো করে গুতো দিল। তারপর চোখ মুখ কুঁচকে প্রশ্ন করল,
"এত রাত্র না ঘুমিয়ে এরকম ছটফট করছেন কেন শুনি?"
"আমি কি তোমার ঘুম ভাঙিয়ে দিলাম?!"
"আবার জিগায়! কি সুন্দর ঘুম হচ্ছিল, আপনার ছটফটানির জ্বালায় ভেঙ গেল"
"আহ, এখন কি ঘুম জোড়া লাগিয়ে দিব?"
"ঘুম জোড়া দেয়ার সুপার গ্লু আছে কি?"
"না। তবে সিগারেট আছে। চলবে?"

এত অল্প আলোতেও জিসান টের পেলো, তরীর চোখে মুখে লজ্জা ভর করেছে। সে সংকোচে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়েছে। জিসানের চোখের দিকে না চেয়ে বলল,
"আমি খুব সরি। একটু মাথা গরম ছিল তো, কি থেকে কি করে ফেললাম!"
"সমস্যা নেই। আমি রেগুলার স্মোকার না যদিও সবসময় সাথে সিগারেট থাকে। আমারও মাথা গরম হলে সিগারেট লাগে। কিন্তু তোমার তো মাথা গরম করে এই কাজ করলে হবে না! তন্দ্রা এখনো তোমার কাছ থেকে খাচ্ছে। ওর স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব পড়বে"
"জানি আমি। ওভাবে কথায় কথায় খাই না আমি"
"তোমাকে দেখে কিন্তু সেটা মনে হয়নি। বরং মনে হয়েছে, আগেও বহুবার টানার অভিজ্ঞতা আছে। ঘটনা কি বলো তো?"

তরী মিটিমিটি হাসছে, যেমনটা চুরি করে ধরা পড়লে কেউ হাসে।
"শেষ খেয়েছিলাম ইমরানের সাথে ইশতি জন্মের বছর খানেক পর"
"কেন?!"
"কারণ ইমরান সেদিন স্মোক করে এসেছিল। বিয়ের পর ওর স্মোকিং ছেড়ে দেয়ার কথা ছিল। ইশতি পেটে আসার পর ছেড়েও দিয়েছিল। সেদিন বন্ধুদের সাথে খেয়ে এসেছিল বলে রাগের মাথায় খেয়েছি"
"এর আগেও তো খেয়েছ বোধহয়, তাই না?"

তরী এবার মুখ চেপে হাসলো।
"আপনি অভিজ্ঞ মানুষ, ভালোই বোঝেন। এই বাজে অভ্যাস ভার্সিটি লাইফে ছিল। মাঝে মাঝে বান্ধবীরা দুষ্টুমি করে স্মোক করতাম। আমার এক বান্ধবী তো স্মোক দিয়ে রিঙ বানাতে পারত!"
"সর্বনাশ! এই কথা তো জানতাম না!"
"আমার ব্যাপারে অনেক কিছুই জানেন না আপনি"
"ভুল। তোমার ব্যাপারে এমন অনেক কিছুই জানি যেগুলো আমি যে জানি, তা তুমি জানো না!"
"কিভাবে?"
জিসান রহস্যময় হাসি দিল।
"আপনি বোধহয় আমার পিছে কোনো স্পাই লাগিয়ে রেখেছেন আমার সব ইনফরমেশন দেয়ার জন্য, তাই না?"

জিসান তার জবাব দিল না।
"আচ্ছা, আমাকে বলো তো, কি এমন হলো যে তুমি আমার কাছে এসে সিগারেট চাইলে?  কি এমন হলো যে কারণে তুমি এত হাইপার হয়ে গেছ?"
"তরী হাত দিয়ে মাছি তাড়ানোর মত করল।
" ওসব কিছু না। বাদ দিন"
"কেন বাদ দিব? আমার কি জানার অধিকার নেই?"
"অধিকারের কিছু নেই। আপনার সাথে এই সমস্যা শেয়ার করলেও আপনি সেটা সমাধান করে দিতে পারবেন না।"
"তা না পারি, কিন্তু সেই সমস্যা থেকে তোমাকে তুলতে সাহায্য তো করতে পারব! তুমি নিশ্চিন্ত মনে বলো"

তরী কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
"আমার দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে বন্ধু মহলে আজেবাজে মন্তব্য করছিল। কি করে বুঝাই কেন আমি বিয়ে করলাম?"
"যারা তোমাকে বোঝে না, তোমার সমস্যা অনুভব করে না, তাদের তুমি বন্ধু বলো?"
"ঠিক তা না। আসলে এদের সাথেই তো পড়ালেখা করে এসেছি। এখন তো এসব শুনলে খারাপ লাগবেই"
"ঠিক আছে, খারাপ লেগেছে। তাই বলে মা হওয়া সত্ত্বেও নিকোটিন নেয়ার মত আত্মবিধ্বংসী কাজ করা তো উচিত না! তুমি তোমার জীবনে সমালোচনা করা দু পয়সার মানুষ যাদের মন এত সংকীর্ণ যে সেই মনে কোনো পজিটিভিটিও স্থান পায় না, তাদের জন্য নিজের আর বাচ্চার ক্ষতির কি মানে আছে?"

তরী চুপ করে সব শুনে বলল,
"ঠিকই বলেছেন। ওদের মত লো লাইফ কাওয়ার্ডদের জন্য নিজের ক্ষতি কেন করলাম!?"
"ঠিক তাই। জীবনে সবাই তো গুরুত্বপূর্ণ হয় না। এরা হচ্ছে তোমার ক্লাস ফেলো, বন্ধু না। বন্ধু হওয়া এত সোজা নয়, যে সে চাইলেই বন্ধু হতে পারে না"
"হুম...। আচ্ছা, আপনি কেন সিগারেট খান? আপনার কি সমস্যা হয়?"

তরী ওর দিকে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছে। এই অল্প আলোতেও ওর চোখের মণিতে আলোর প্রতিচ্ছবি পড়ছে। জিসান ওর কোমরে ভালোভাবে হাত চাপিয়ে বলল,
"একজন খুব কষ্ট দেয়। যেদিন সে কষ্ট দিবে না, সেদিন আর খাবো না"
"কে কষ্ট দেয়?"
জিসান ফিসফিস করে বলল,
"তুমি!"

তরী কিছুটা চমকে গেল। তারপর ভাবছে, জিসান মজা করছে ওর সাথে৷ সুযোগ পেলেই এই লোক ওকে খোঁচা দিবে। তরী এবার উল্টো ঘুরে জিসানের দিকে পিঠ দিয়ে শুলো। জিসান আবার ফিসফিস করে বলল,
"আজকে মাঝখানে চিনের প্রাচীর নির্মাণ করবে না?!"
তরী হেসে ফেলল।
"নাহ, করব না"
"তাহলে কি ধরে নিব?"
"ধরে নেবেন, আজ আপনার পরীক্ষা চলছে"
জিসানের মুখে দুষ্টু হাসি।
"চলো আমরা একটা খেলা খেলি"
"এখন? কি খেলা?"
"তোমার পিঠে আমি কিছু একটা লিখব, তুমি সেটা বলবা। দেখি পারো কিনা?"
"পারলে কি হবে?"
"পারলে মজা হবে। বুঝে নেব তুমি অনেক বুদ্ধিমতি"
"ঠিক আছে"

জিসান ওর পিঠে একটা একটা করে শব্দ লিখছে আর তরী সেটা বলছে। কয়েকটা শব্দ লেখার পর জিসান লেখলো 'I love u'। তরী সেটা বুঝেও না বোঝার ভাণ করে বলল,
"আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না!"
"এতক্ষণ তো বুঝেছ, এখন কি সমস্যা!"
"কি জানি, আপনি এভাবে লিখেন কেন? আমি তো অক্ষর গুলো বুঝতেই পারছি না!"

জিসান বুঝতে পেরে হেসে বলল,
"তুমি ইচ্ছা করে এমন করছ। তাই না?"
তরীও হাসছে। জিসান আলতোভাবে তরীকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল। তরীর খোপা বাঁধা চুল থেকে শ্যাম্পুর মিষ্টি ঘ্রাণ আসছে, সাথে ওর গায়ের ঘ্রাণ মিশে আছে। জিসান ওর চুল খুলে ঘাড়ের উপর থেকে সরিয়ে দিল। অন্ধকারেও দেখা যাচ্ছে ওর ঘাড়ের গাঢ় তিলটা। বাসর রাতেই তার এদিকে চোখ পড়েছে। আজ খুব কাছ থেকে নিজের স্ত্রীকে অনুভব করতে গিয়ে ছোট ছোট আকর্ষণগুলো চুম্বকের বিপরীত মেরুর মতো টেনে যাচ্ছে। জিসান ফিসফিস করে বলল,
"আজকে আমি তোমাকে একদম চিনতে পারছি না। দুদিন আগের তরী আর আজকের তরীর মাঝে অনেক পার্থক্য"
"কি মনে হচ্ছে তাতে? আমি খোলস থেকে বেরিয়ে এসেছি?"
"অনেকটা এমনই"
"খোলসের ভেতরের তরীকে দেখে কি খারাপ লাগছে?"
"সত্যি বলব?"
"মিথ্যা শুনে কি লাভ হবে?"
"আমার তরীকে বেশি ভালো লাগছে!"

তরীর শরীরে নরম প্রশান্তি এসে ছুঁয়ে দিল, যেন এর অপেক্ষাতেই ছিল। জিসান এখনো ফিসফিস করে বলছে,
"তবে সিগারেট এভাবে খাওয়া যাবে না। তোমার একটা ছোট বেবী আছে"
"বেবী না থাকলে খাওয়া যেত?"
"নাহ। শুধু শুধু নিজের ক্ষতি করবে কেন?"
"আপনি কেন করেন?"
"ঠিক আছে, করব না"
"না, আপনি সিগারেট খেতে চাইলে খেতে পারেন, আমার সমস্যা নেই। আমি এমনিই বললাম আর কি"
"নাহ খাবো না আর। যেটা তোমার উচিত না, সেটা তো আমার জন্যও অনুচিত"

জিসান তরীর আঙুল চেপে ধরল। তরীর কেমন ঘোর ঘোর লাগছে। এই যে জিসান পা টিপে টিপে ওকে একটু একটু করে নিজের কাছে নিয়ে আসছে, তরীর এতে বাঁধা দিতে ইচ্ছে হচ্ছে না। জিসানের ওকে ভালো লেগেছে- এই একটা বাক্যই বোধহয় অনেক কিছু বদলে দিয়েছে। ওর ধারণা ছিল, জিসান ওকে আজেবাজে কথা বলবে। তা না করে খুব নরমভাবে ওকে বোঝাচ্ছে। আগে ইমরান এই কাজটা করত। ওর খারাপ দিক গুলো নিয়ে রাতে বিছানায় শুয়ে আস্তে আস্তে বুঝাতো, যেন ওর কাজটা কোনো পাপ না, একটা সাধারণ ভুল যা চাইলেই এড়ানো যায়। হয়ত এজন্যই তরী নিজের অনেক খারাপ দিক সহজেই ঝেড়ে ফেলতে পেরেছে। তরীর শরীর কেঁপে উঠে যখন ওর পায়ের পাতায় জিসানের পা স্পর্শ করল। ভালোবাসার শুরু কি এভাবেই হয়?

ঠিক ঐ মুহূর্তে তন্দ্রা কেঁদে উঠল। এতক্ষণে মনে হলো তরীর ঘোর কেটে গেছে। ও উঠে বসে তন্দ্রাকে কোলে নিল। তন্দ্রা কেঁদেই যাচ্ছে। তরী অসহায়ের মত বলল,
"আলো জ্বেলে দিবেন? এত কাঁদছে কেন বুঝতেছি না!"
জিসান উঠে আলো জ্বেলে দিল। তন্দ্রার পায়ের পাতা লাল হয়ে আছে, মশা কামড়েছে বোধহয়। আবার হাতেও কামড়েছে। তন্দ্রা বারবার কাঁদছে৷ তরী ওকে শান্ত করার জন্য বুকে চেপে হাঁটতে শুরু করল। জিসান কিছুক্ষণ বিছানায় শুয়ে তরীকে দেখছে। ছিপছিপে দেহের গড়নের প্রতি ভাঁজে ভাঁজে ওর আকর্ষণ হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। জিসান শুয়ে শুয়ে তরীর জন্য অপেক্ষা করতে করতে কখন ঘুমিয়ে গেল, নিজেও জানে না। তন্দ্রা ঘুমিয়ে পড়ার পর তরী আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়ল। জিসান ঘুমাচ্ছে। তরী আলতোভাবে জিসানের গায়ে হাত রাখলো। নাহ, ও উঠছে না। তরী একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলল। আজকের মত বেঁচে গেছে। জিসান ওকে ভালোবাসে, সেটা নিশ্চিত। কিন্তু কতটা? দেখা যাক, ধৈর্যের পরীক্ষায় জিসান কত দিন অপেক্ষা করে!

পরের দিন সকালে জিসান ঘুম ভেঙে তরীকে পেলো না, অনেক আগেই তরী উঠে গেছে ঘুম থেকে। সকাল সকাল ঘুম ভেঙে জিসান তরীকে ওর আশেপাশে আশা করেছিল। ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসে দেখল, তরী বসার ঘরের মাটিতে বসে মেয়েকে নিয়ে বাটিতে করে কিছু একটা  খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। জিসানকে দেখে মিষ্টি করে হাসলো।
"ঘুম ভেঙে গেল? একটু অপেক্ষা করতে হবে যে, নাস্তা হওয়া আরেকটু বাকি। আপনি অপেক্ষা করেন"
"একটু ঘরে আসবা? দরকার ছিল"
"আসছি"

তরী মেয়েকে রেখে জিসানের সাথে ঘরে আসলো। জিসান কোনো কথা না বলে ওকে জড়িয়ে ধরল। তরীকে চমকে দিয়ে বলল,
"সকাল সকাল আমাকে ফেলে চলে যাওয়ার কারণ কি?"
"তন্দ্রা উঠে গিয়েছিল"
জিসান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
"তোমার কি বিরক্ত লাগছে?"
সাথে সাথে তরীর মুখের দিকে তাকিয়ে আবার ওকে ছেড়ে দিয়ে বলল,
"আজ তো সিলেট যাচ্ছি, নাকি?"
"হুম"
"কাল থেকে তোমারও অফিস?"
"হ্যাঁ"
"হুম, আমারও। আর কয়েকটা দিন থাকবে বাবার বাড়ি?"
"না, ছুটি নিয়ে পরে আসবো। চাকরির এত অল্প সময়ে এত ছুটি নিলে ঝামেলা হবে"
"ঠিক আছে। তুমি নাস্তা তৈরি হলে ডাক দিও"

তরী উলটো ঘুরে মেয়ের কাছে এটা ভাবতে ভাবতে আসলো যে, কি হলো একটু আগে? জিসান এমন হুট করে ডেকে নিয়ে জড়িয়ে ধরল, আবার ছেড়ে দিল। ঘটনা কি? জিসান কি জড়িয়ে ধরার জন্য ডাকলো? ভীষণ দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থায় সে মেয়ের কাছে গেল।

ওরা দুপুরের আগেই খাওয়া দাওয়া শেষ করে বেরিয়ে পড়ল। সিলেটে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সূর্য পশ্চিম আকাশের নিচে লুকিয়ে পড়ল। বাসায় পৌঁছে ইশতি আর তন্দ্রা দুজনই অস্থির হয়ে পড়েছে। এদের ঠিকঠাক করে ঘুম পাড়াতে গিয়ে জিসান তরীও ঘুমিয়ে পড়েছে। পরদিন সকালে যথারীতি অফিসে যেতে হবে। তরী তাড়াহুড়ো করে তৈরি হয়ে নিল। জিসান বলল,
"এখন থেকে আমি তোমাকে অফিসে ড্রপ করে দিব, আবার পিক করে আনব"
"আপনার অফিসে দেরী হয়ে যাবে"
"বড় অফিসারদের একটু দেরী হলে কিছু হবে না"
"আসলেই? আমার জন্য শুধু শুধু আপনি কেন কষ্ট করবেন?"
"তোমার জন্য যেন কষ্ট করতে পারি, এজন্যই তো বিয়েটা করলাম"

তরী জিসানের দিকে তাকালো। জিসান হাত ঘড়ি পরছে, ওর মুখের ভঙ্গি স্বাভাবিক। তরী নিজের তৈরি হওয়ার দিক থেকে মনোযোগ সরে যাচ্ছে। ওর জন্য কষ্ট করার জন্য বিয়ে করল কেন? জিসান কি ওর উপর করুণা করে বিয়ে করল? নাকি ওকে ভালোবেসে? জিসান ওকে কেন এত ভালোবাসে? যে মেয়ে তার ভাইয়ের স্ত্রী ছিল, যার এক জোড়া সন্তান আছে, যে বারবার ওকে দূরে সরানোর চেষ্টা করেছে, কেন তাকে এত ভালোবাসবে?

ভাবতে ভাবতে গাড়িতে ওঠে সারা রাস্তা পার হয়ে গেল। অফিসের সামনে এসে জিসান গাড়ি থামিয়ে ওর হাত চেপে ধরল।
"সারাদিন মিস করব তোমায়"

তরী জবাবে কেবল একটু হাসি দিল। গাড়ি থেকে নামতে নামতে ভাবলো, জিসানের এই ভালোবাসা কি কেবল ও নতুন বউ বলেই? এই মিস করা কি সবসময় থাকবে? কখন এই ছেলেটা ওকে এত ভালোবাসলো? সবসময় কি এই ভালোবাসা থাকবে?

চলবে...

(গ্রামে থাকায় গল্প দিতে পারিনি)

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen2U.Pro