Màu nền
Font chữ
Font size
Chiều cao dòng

আমি আবার, আর একটা বার
লেখা #AbiarMaria

তরী ব্লাউজ আর পেটিকোট পরে চুল হাত খোপা করে মেকাপ করছে। ও সাধারণত হালকা একটু কাজল আর লিপস্টিক দিয়েই সাজ শেষ করে দেয়। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির দাওয়াত বলে কথা, কম সাজলে হবে কি করে? ও চেষ্টা করছে কাজল কালো চোখ জোড়াকে আরও নিখুঁতভাবে সাজানোর।

ইমরান টয়লেট থেকে স্ত্রীকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এভাবে বসে থাকতে দেখে মনে দুষ্টুমি খেলে গেল। পেছন থেকে কোমরে হাত রাখতেই তরী নড়ে উঠল, আর কাজল চোখের নিচে লেগে গেল। রেগে গিয়ে পেছনে ফেরল ও।
"সমস্যা কি তোমার?! সুন্দর ভাবে সাজতে দিবা না? কি করেছ দেখো এটা!"

ইমরান দুষ্টুমি করে কোমর ধরে নিজের কাছে এনে বলল,
"এভাবে আমার সামনে ঘুরছ কেন শুনি? বেড়াতে যাওয়ার ইচ্ছা আছে নাকি নেই?"
তরী উলটো ঘুরে ইমরানের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করল।
"খবরদার, একদম উল্টোপাল্টা চিন্তা করবা না! যাও বিছান্য গিয়ে বসো। আর চোখ বন্ধ করে রাখো!"
"আহ! এত সুন্দরী বউ থাকতে চোখ বন্ধ করে রাখব কেন? আমাকে একটু দেখতে দিবে না সে?"
"শুধু দেখছ তুমি? আমার সাজ ধ্বংস করে দিচ্ছ!"
"আর তুমি তো আমার সংযমের বাঁধ ধ্বংস করছ!"
তরী ছুটে পালিয়ে একটা সুতি ওড়নায় ভালোভাবে নিজেকে পেচিয়ে বলল,
"ওদিকে যাও! যাও!"
স্বামীকে ঠেলে ঠেলে বিছানায় বসিয়ে আবার আয়নার সামনে এসে বলল,
"আরেকবার সাজ নষ্ট করলে আগামী এক সপ্তাহ উপোস রাখব তোমায়! রাতে বউকে ভুলেও পাবা না!"

ইমরান দাঁত বের করে খাটে আধশোয়া হয়ে মাথার নিচে দুই হাত ভাঁজ করে দিল।
"সে রাত আসলেই দেখা যাবে। আমার বউ আবার খুব ভালো মানুষ, স্বামীকে মানা করতেই পারবে না!"
"আমাকে জ্বালালে আমি ছাড়ব না বলে দিচ্ছি! বিয়ের কয়েক দিন হলো মাত্র, এখন এত মানুষের সাথে পরিচয় হবে। সেখানে ভালোভাবে নিজেকে তোমার উপস্থাপন করব, তাড়াতাড়ি যাবো, তা না! শুধু দেরী করানোর ধান্ধা!"

গোলাপি কাতান পরে তরী সেদিন ওর চাচী শ্বাশুড়ির বাসায় গিয়েছিল। সেখানে ঢুকার কিছু পরে ইমরান জিসানকে নিয়ে আসে।
"তরী, এটা হচ্ছে আমার জিসান ভাইয়া। আমার বড় ভাই"
তরী বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।
"আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। কেমন আছেন?"
"এই তো ভালো আছি। তুমি কেমন আছ?"
"ভালো আছি ভাইয়া"
"তোমার বাসার সবাই কেমন আছে?"
"সবাই ভালো আছে"

রাতে খোলা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে তরী আনমনে গলার চেইন নাড়াতে নাড়াতে অতীতের সেই দিন গুলোর স্মৃতিচারণ করছিল। তখনও কি ভাবতে পেরেছিল ওর স্বামী পৃথিবী থেকে এভাবে বিদায় নিবে? তারপর এই মানুষটার সাথে তার বিয়ের কথা হবে? কত সময় ওরা সবাই মিলে কাটিয়েছে, আড্ডা দিয়েছে, হাসাহাসি করেছে। এই মানুষকে কি বিয়ে করা কখনো সম্ভব? পরিচয় না থাকলে বা সেভাবে না মিশলে একটা কথা ছিল। সবসময় ভাইয়া ডাকা মানুষটাকে হুট করে স্বামীর যায়গা দেয়া যায় নাকি? নাহ, ওর পক্ষে এসব সম্ভব না।

কাঁধে কারো হাতের স্পর্শে তরী ঘুরে তাকালো। খেয়া ওর পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে।
"কি ভাবছ এভাবে? আসার পর থেকে কেমন গম্ভীর হয়ে আছো। কিছু বলছ না যে? ভাইয়া কি বলল?"
"আমাদের সিলেট নিতে চায়?"
"বিয়ে করে? রাজী হয়ে গেছ নাকি?!"
"ধুর নাহ! সে চাচ্ছে আমি ওদের দুজনকে নিয়ে সিলেট থাকি শ্বশুরবাড়ি। সে মাঝে মাঝে আসবে, আমার চাকরির ব্যবস্থা করবে। আর..."
"আর?"
"আর আমাদের খরচ দিবে"
"উনি কেন তোমাদের খরচ দিবে যদি বিয়ে না হয়?!"

তরী হাতে কিল দিল।
"এক্সাক্টলি এই প্রশ্ন আমি তাকে করেছিলাম! কি বলল জানিস? সে নাকি বাচ্চাদের এসব করতে চায়, ওদের দায়িত্ব নিতে চায়। আসলে সে ওদের বাবার মত আদর করতে চায়। আমাকে সেভিংস ভাঙতেও মানা করল। আমি আসলে বুঝতে পারছি না, চক্কর কি?"

খেয়া সাবধানে বিছানার এক কোণায় বসল। ইশতি আর তন্দ্রা দুজনেই ঘুমিয়ে গেছে। বোনের দিকে ফিরে বলল,
"হতেই পারে ভাইয়ের বাচ্চাদের প্রতি তার অনেক মায়া লাগছে। তাছাড়া ইশতি যেভাবে ভাইয়ার সাথে আঠার মত লেগে থাকে, সে তো মায়ায় পড়বেই! ইমরান ভাইয়াকেও তো ছোট ভাইয়ের মত আদর করত। অস্বাভাবিক কিছু না"
"তুই বুঝতেছিস না। আমার মনে হলো সে আমার উপর পরোক্ষভাবে অধিকার খাটাতে চাচ্ছে!"
"পরোক্ষভাবে?"
"হ্যাঁ। মানে সোজাসুজি পারছে না বলে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে এই কাজটা করছে। যেহেতু আমি বিয়েতে রাজী হচ্ছি না, তাই আমাকে সিলেটে রেখে ওদেরকে নিজের কাছে রাখতে চাচ্ছে"
"হতে পারে"
"আচ্ছা, উনি যদি কখনো ইশতিকে আমার কাছ থেকে নিতে চায়?"
"সে কি! ওর তো ছয় বছরও হয় নি। এত ছোট বাচ্চাকে উনি নিবে কিভাবে? আইন অনুযায়ী নেয়ার কথা বলছ?"
"না বোকা! আমি বলছি এমনিতেই পারিবারিকভাবে জোর করে নেয়ার কথা! দেখ, আমাকে সিলেট নিলে আমি তোদের থেকে আলাদা হয়ে যাবো। ইশতি তো এমনিতেই তার জন্য পাগল, ওকে নেয়া কোনো ব্যাপারই না! বাপ বাপ ডেকে তো একেবারে জান দিয়ে ফেলে এই ছেলে, অসহ্য! নিজের বাপকে কেউ এত তাড়াতাড়ি ভুলে?! তারপর আছে তন্দ্রা। বড় হলে ভাইয়ের পিছে পিছে এই মেয়েও যদি আমাকে না চিনে? যদি চলে যায় উনার কাছে?"
"কেন? উনি ওদের এভাবে নিতে চাবে কেন?"
"কারণ ওদের সবার টার্গেট হচ্ছে আমার দুই বাচ্চা! বউ দিয়ে কি হবে? বউয়ের থেকে তো তারা বাচ্চা পেয়েই গেছে। মানে গাছ থেকে তো ফল হলো, এবার ফল গুলো নেয়ার জন্য যত যুদ্ধ! ওরা ছোট তো, এজন্য আমার একটা গতি করতে চায় আর কি। বড় হলে আমাকে গুনবেও না, ধাক্কা মেরে ফেলে দিবে!"

খেয়া চিন্তিত হয়ে পড়েছে। থুতনিতে হাত ঠেকিয়ে বলল,
"কিন্তু তোমার শ্বশুর বাড়ির মানুষকে আমার এত খারাপ মনে হয়নি!"
"তাতে কি? মানুষের মনে কি আছে, তা কি তুই জানিস? নাকি আমি জানি? আমরা কেউ জানি না!"

তরী ঘরের এমাথা ও মাথা পায়চারি করছে। আচমকা থেমে গিয়ে চোখ বড় বড় করে উজ্জ্বল মুখে হাসি ফুটিয়ে হাত দিয়ে চুটকি বাজিয়ে বলল,
"পেয়েছি! আরেকটা কারণ হতে পারে!"
"কি কারণ?"
"মনে হয় জিসান ভাইয়া ইম্পটেন্ট!"
"এ্যাঁ! ইউ মিন নপুংশক? অক্ষম?"
"ইয়েস, নপুংশক! বাচ্চা হবে না বোধহয় এই ব্যাটার। এজন্য আমার বাচ্চা আর আমাকে নিয়ে টানাটানি করছে! নাহলে একটা বাচ্চা ওয়ালা বিধবা মেয়েকে বিয়ে করে নেয়ার আর কোনো কারণ আছে?!"

খেয়া হাসতে হাসতে শুয়ে পড়ল বিছানায়। তরী বেশ বিরক্তি প্রকাশ করল।
"আমি সিরিয়াস!"
খেয়া হাসতে হাসতে বলল,
"জিসান ভাইয়াকে গিয়ে বলো, আপনি কি ইম্পটেন্ট? একেবারে প্রমাণ দিয়ে দিবে!"
তরী খেয়ার দুষ্টুমি গায়ে মাখলো না।
"উনাকে আসলেও বলা দরকার। নাহলে আমার পিছে এমন হাত ধুয়ে পড়ার কারণ কি?!"

খেয়া হাসি থামিয়ে বলল,
"এটা একটু লেইম হয়ে গেল। আমার মনে হয় না এরকম কিছু"
"তাহলে তোর কি মনে হয়? কিরকম কিছু মনে হয় তোর?"
"আমার মনে হয় জিসান ভাইয়া তোমাকে ভালোবাসে"

তরী বোনের কথা শুনে হাঁটা থামিয়ে দিল। খেয়া তখনও বলছে,
"ভাইয়াকে আজকে আমি খেয়াল করেছি। উনার দৃষ্টি অন্য রকম। উনি সত্যিই তোমাকে খুব পছন্দ করে। আমার মনে হয় কি জানো, বাচ্চারা শুধু অযুহাত, আসলে সে তোমাকে ভালোবাসে। তোমার জন্যই সে এসব করছে। ভাইয়া সম্ভবত তোমাকে মিথ্যা বলেছে। বাচ্চারা উনার ফোকাস না, তুমি উনার ফোকাস"

তরী বোনের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে গ্রিলের ফাঁক দিয়ে চাঁদের উপস্থিতিতে উজ্জ্বল হয়ে থাকা এক ফালি আকাশে দিকে তাকালো। স্বীকার করতে না চাইলেও ইদানীং জিসানের দৃষ্টি এই কথাটাই ওকে বলে। ওর চোখে অন্য কিছু আছে। জিসানের মুখ যা বলে, চোখ তা বলে না, চোখ বলে অন্য ভাষা। তরী সেই ভাষা পড়তে পেরেও পড়ে না। ওর বারবার সরে আসতে ইচ্ছা করে। বারবার নিজেকে বলতে ইচ্ছা করে, জিসান ওকে ভালোবাসে না, এটা হয় না। তরীর দম বন্ধ লাগে এসব ভাবলে।

"মাউইমা তোমাকে কল করেছিল?"
"হ্যাঁ"
"সরি বলেছ?"
"না। ওসব বলতে হয়নি। বলছিল আব্বাকে পাঠাবে আমাকে নেয়ার জন্য। আব্বা আগামী সপ্তাহে আসবে। আমি যেন সব গুছিয়ে রাখি ওখানে যাওয়ার জন্য"
"তুমি কি বললা?"
"আমার অধিকার ঐ বাসায়। অধিকার ছাড়ব কেন? বিয়ে হবে না, অন্তত আমি কিছুতেই বিয়ে করব না। জিসান ভাইয়ার যেহেতু খরচ করতে মন চায়, করুক। একটা চাকরি পেয়ে নেই, তখন আর তার খরচ নিব না ভুলেও। সবাইকে দেখিয়ে দিব, আমি বাবা মা দুটোই হতে পারি আমার সন্তানদের জন্য!"

"আচ্ছা আপু, তোমার কি মনে হয়? ভাইয়া তোমাকে ভালোবাসে? নাকি আমরা বেশি বেশি ভাবছি?"

তরী এখনও গলার চেইন ধরে নাড়াচাড়া করছে।
"সেটা সময়ই বলে দিবে!"

চলবে...

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen2U.Pro